ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৬৪ জেলার ২৯৪ উপজেলায় একটি করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হবে

সংরক্ষণ করা হবে মুক্তিযুদ্ধের ৩৬০ ঐতিহাসিক স্থান

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৯ অক্টোবর ২০১৭

সংরক্ষণ করা হবে মুক্তিযুদ্ধের ৩৬০ ঐতিহাসিক স্থান

আনোয়ার রোজেন ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গৌরব ও বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে জানাতে যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের ৩৬০টি ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব স্থান মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রতিটিতে নির্মাণ করা হবে একটি করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর। এজন্য প্রায় ১৭৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশের ৬৪ জেলার ২৯৪টি উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের চিহ্নিত ৩৬০টি ঐতিহাসিক স্থানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। একনেকের অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটির অধীন বিভিন্ন নির্মাণ কাজ শেষ করবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ সারা দেশব্যাপী সংঘটিত হলেও সঠিক পরিসংখ্যানসহ সকল ঐতিহাসিক স্থান এখনও চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে মন্ত্রণালয় একটি তালিকা সংগ্রহ করে। এই তালিকার মধ্য হতে গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এসব স্থানের বিস্তারিত পরিচিতি জানা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয়া জরুরী। তিনি বলেন, সশস্ত্র যুদ্ধ তো সারাদেশেই হয়েছে। তাই স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে যুদ্ধের গুরুত্ব, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধা, বধ্যভূমি, গণহত্যা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সংশ্লিষ্ট এলাকায় ছিলেন এমন মুক্তিযোদ্ধা, প্রত্যক্ষদর্শী ও গবেষকদের সহযোগিতা নেয়া উচিত ছিল। তালিকা তৈরিতে জেলা প্রশাসক ও সংসদ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এরা কীভাবে সহযোগিতা করলেন? বর্তমান জেলা প্রশাসকদের কয়জন মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন? এদিকে প্রকল্প বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ও স্মৃতিবিজড়িত অরক্ষিত ৩৬০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সংরক্ষণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মহিমা সমুন্নত হবে। একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ৩৬০টি স্থানের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব বিবেচনায় ৪৭টি স্থানে ‘টাইপ-এ’ এবং স্থানীয়/আঞ্চলিক পর্যায়ে গুরুত্ব বিবেচনায় ৩১৩টি স্থানকে ‘টাইপ-বি’ ক্যাটাগরির স্থাপনা নির্মাণ করে সংরক্ষণ করা হবে। টাইপ এ ক্যাটাগরির স্থাপনায় ৮টিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভাস্কর্য/স্মৃতিস্তম্ভ/ম্যুরাল/ টেরাকোটা নির্মাণসহ অন্যান্য পাবলিক সুবিধা থাকবে। বাকি ৩৯টিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হবে এবং এগুলোতে লাইব্রেরি, ছোট আকারের সম্মেলন কক্ষ এবং তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ থাকবে। অন্যদিকে টাইপ বি-এর অন্তর্ভুক্ত ৩১৩ স্থানে আয়তকার দুইটি স্তম্ভ এবং বেদি স্থাপনসহ দর্শনার্থীদের বসার জায়গা, শিশুদের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, ওয়াশ ব্লক ও খাবারের দোকান থাকবে। প্রস্তাবিত প্রতিটি টাইপ এ- স্থাপনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা এবং প্রতিটি টাইপ বি স্থাপনার জন্য ৩৫ লাখ টাকা। কম ব্যয় বিবেচনায় প্রকল্পটির আলাদাভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ (১৫ কোটি টাকা), ৪৭টি টাইপ-এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (৩৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা), ৩১৩টি টাইপ-বি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (১০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা)। সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়ে প্রকল্প প্রস্তাব চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। এর ধারাবাহিকতায় প্রকল্পের ডিপিপির ওপর গত ৫ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন সভা (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সুপারিশের আলোকে পুনর্গঠিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির প্রস্তাবিত প্রাক্কলিত মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৭৮ কোটি ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ অর্থের পুরোটাই দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। আর প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয় জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত।
×