ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-১৭সহ তিন আসনে লড়বেন এরশাদ

রাজধানীর ২০ আসনে যোগ্যপ্রার্থী সঙ্কটে জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৯ অক্টোবর ২০১৭

রাজধানীর ২০ আসনে যোগ্যপ্রার্থী সঙ্কটে জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ যোগ্য প্রার্থী সঙ্কটের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার ২০ আসনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা কর্মসূচীতে যোগ দিচ্ছেন তারা। যদিও ঢাকার বেশিরভাগ আসন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। তাই ক্ষমতাসীন দলের দুর্গে হানা দিতে চায় আওয়ামী লীগের গৃহপালিত দল এরশাদের জাতীয় পার্টি। আগামী নির্বাচনে ঢাকার অন্তত পাঁচ থেকে আটটি আসন চায় জাপা। যে প্রক্রিয়াতেই নির্বাচন হোক ঢাকার আসন বাড়াতে এরশাদ নিজেই দেন দরবার করবেন। নিজেও প্রার্থী হবেন ঢাকা-১৭ আসনে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১ আসনে এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। বাকি ১৭ আসনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে গুলশান এলাকা থেকে পাস করেছিলেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। ২০১৪ সালে এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে রংপুরের আসন রেখে ঢাকা-১৭ সহ অন্যান্য আসনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়। এতে গুলশানের আসনটি শেষ পর্যন্ত পার্টির হাতছাড়া হয়ে যায়। দলটির একাধিক নেতা বলছেন, বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ঢাকার আসন পেয়েছে জাপা। এককভাবে নির্বাচন করলে যা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। তাছাড়া বিগত দুই নির্বাচনে ঢাকায় জাতীয় পার্টি আসন পেলেও দলকে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়নি। ফলে আগামীতে একক নির্বাচনে এরশাদের দল অংশ নিলে ঢাকার একটি আসনও পাওয়া সম্ভব হবে না। সারাদেশে থেকে কয়টি আসন আসবে এ নিয়েও সন্দেহ অনেকের। জাপা সমালোচকরা মনে করেন, আগামীতে পৃথক নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টির একটি আসনেও বিজয়ী না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দলটির দুর্গ হিসেবে পরিচিত গোটা রংপুর এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে বলা চলে। জাপার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে দলের অবস্থান আরও জোরদারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া। তাই ঢাকার আসনগুলোর জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাজ শুরু করতে দলের পক্ষ থেকে গ্রীন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা কাজও শুরু করেছেন। জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আগামী নির্বাচনে ভাল কিছু করার। সবাই এখন জাতীয় পার্টিকে চায়। তাই প্রতিটি আসনে যোগ্য প্রার্থী ঠিক করছি। যেন কোন আসন আমাদের হাতছাড়া না হয়। ঢাকার আসনগুলোর বিষয়ে আমরা আরও সতর্ক। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাজ শুরু করতে ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ঢাকার আসনগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় দলের প্রার্থীরা বেশি আসন পেলে সারাদেশে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টায় মাঠে নেমেছেন। আশা করি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ইতিবাচক ফল পাবে। ঢাকায় জাপা যোগ্যপ্রার্থী সঙ্কটের কথা জাতীয় পার্টির কোন নেতা স্বীকার না করলেও দলীয় প্রধান এরশাদের টার্গেট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্মানজনক সংসদীয় আসনে নিজ দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করা। আসনগুলো হলোÑ ঢাকা-১৭, ঢাকা-১, ঢাকা-৪, ঢাকা-৫, ঢাকা-৬ ও ঢাকা-১৩। এর মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনের এরশাদ নিজে ও ঢাকা-১৩ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আবারও মহাজোট গঠন করা হবে। ১৪ দল তথা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি কোন কারণে নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে প্রার্থী দেয়া হবে। সে অনুযায়ী হবে আসন ভাগাভাগি। এরমধ্য দিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলের আসনে বসতে চায় জাপা। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টিও পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে শতাধিক আসন চেয়ে তালিকা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দলীয় প্রার্থী রয়েছেন ৭০। বাকি ৩০ জন হলো এরশাদের রাজনৈতিক জোটের নেতারা। রোজার ঈদের আগে এ তালিকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দেন এরশাদ। যদিও এখন ৪০ এমপি নিয়ে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে জাতীয় পার্টি। প্রচারে ঢাকার প্রার্থীরা ॥ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজ নিজ এলাকায় ব্যানার পোস্টার ফেস্টুন লাগিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা-২ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি হাজী মোঃ শাহজাহান, ঢাকা- ৫ আসনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ। ইতোমধ্যে তিনি নিজ এলকায় সামাজিক কর্মকা-ে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। নিজ আসনের পক্ষ থেকে ব্যানার ফেস্টুন টাঙ্গিয়ে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। মীর আব্দুস সবুর আসুদ জনকণ্ঠকে জানান, নির্বাচন সামনে রেখে তিনি কাজ শুরু করেছেন। মানুষ জাতীয় পার্টির প্রতি দুর্বল। তারা চান আগামী নির্বাচনে এরশাদ ক্ষমতায় আসুক। এদিকে ঢাকা-৭ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। যদিও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ছিলেন। ঢাকা-৮ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-৯ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা-১১ আসনে কেন্দ্রীয় নেতা জাকির হোসেন মৃধা, ঢাকা-১৪ আসনে যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, ঢাকা-১৫ আসনে সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল হক, ঢাকা-১৬ আসনে ভাইস চেয়ারম্যান আমানত হোসেন আমানত, ঢাকা-১৮ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য সোহেল রানা ও ভাইস চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, ঢাকা-১৯ আসনে কেন্দ্রীয় নেতা বাহাউদ্দিন আহমেদ ইমতিয়াজ ও আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা-২০ আসনে ঢাকা জেলা জাপার সভাপতি ইসরাফিল খোকনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীই আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার মতো নয়। তাছাড়া এই সব নেতার নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টির শক্তিশালী কর্মীবাহিনী ও জনসমর্থন না থাকায় এককভাবে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করলেও এরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসার সম্ভাবনা কম। বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনে জয়ের টার্র্গেট নিয়ে কাজ করছেন জাপার প্রার্থীরা। জানা গেছে, ঢাকা-১ আসনে জাপার বর্তমান এমপি এ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের জনপ্রিয়তা রয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তাছাড়া এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে দুদকে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সালমা ইসলাম। রাজধানীতে জাতীয় পার্টির কিছুটা অবস্থান রয়েছে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৪ এ। এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন এ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, তোফাজল হোসেন ও ড. আওলাদ হোসেন। বাবলা ইতোমধ্যে নির্বাচনী কর্মকা- শুরু করেছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তিনি। বর্তমান এমপি হওয়ার কারণে সামাজিক কর্মকা-ে এগিয়ে আছেন জাপার এই প্রার্থী। ঢাকা-৬ আসনের জাপার বর্তমান এমপি কাজী ফিরোজ রশীদও মাঠে আছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় গতবারের মতো আগামীতে ঢাকা-৬ জাতীয় পার্টিকে ছাড়তে হতে পারে আওয়ামী লীগকে। ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি দলের জাহাঙ্গীর কবির নানক। আগামীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে এই আসনও চাইবেন এরশাদ। দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু এই আসনে জাপার প্রার্থী বলে জানা গেছে। তবে এমপি পদে নির্বাচন করতে হলে সেন্টুকে কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। আর ঢাকা- ১৭ আসনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের একটা বিশাল ভোট ব্যাংক থাকায় একক নির্বাচন করলেও এই আসনে এরশাদের বিজয় অনকেটা সুনিশ্চিত বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া এরশাদ এই আসনে নির্বাচন করতে চাইলে আওয়ামী লীগ একবাক্যে এই আসন জাপাকে ছেড়ে দেবে। এরশাদের ঘনিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিনি এই আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। মোট তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাপা চেয়ারম্যান।
×