ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাহরাইনে পুলিশী আতঙ্কে ভুগছে ২০ হাজার বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৯ অক্টোবর ২০১৭

বাহরাইনে পুলিশী আতঙ্কে ভুগছে ২০ হাজার বাংলাদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ বাহরাইন এবার অবৈধ কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ ক্ষমায় যারা বৈধ হতে পারেনি তাদের স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠাতে এ অভিযান চালানো হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অবৈধদের বৈধ করার জন্য দু’দফা সময় বাড়িয়েছিল দেশটির কর্তৃপক্ষ। এখন আর কোন সময় দেয়া হবে না বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে। যারা অবৈধ হয়ে পড়েছেন তাদের দেশে ফিরে যেতেই হবে। এছাড়া আর কোন পথ নেই। চার বছর আগে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছিল। এবার ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশী কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, যদিও ২০ হাজারের মতো কর্মী দেশে ফেরার জন্য ‘আউট পাস’ নিয়ে রেখেছেন। এরপরও পুলিশী অভিযানের ঘোষণায় তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিষিয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন এমন কোন খবর জানেন না। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে খোঁজ নিতে বলেন। অবৈধদের বৈধ হওয়ার জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এখন তাদের আটক করার জন্য পুলিশী অভিযান শুরু করবে। অন্যদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাহরাইনে নতুন করে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে,দেশটিতে বহু কর্মী দালালের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আবেদন করে বৈধ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অনেকে আবার নিজেরাই বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সব আবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় তারা অবৈধ হয়ে পড়েছেন। অবৈধ কোন কর্মীকে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ দেশে রাখবেন না। এ অবস্থায় তাদের দেশে ফিরে আসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বর্তমানে দেশটিতে ৬৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে দেশটির ‘লেবার মার্কেট রেগুলেটরি অথরিটি’ (এলএমআরএ) অবৈধদের বৈধ করার দু’দফা সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধ শ্রমবাজার বাহরাইনে নতুন করে কর্মী নিয়োগের জন্যও অনুরোধ জানায়। দীর্ঘ চার বছর ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই বাজারটি দেশের জনশক্তির জন্য একটি বড় বাজার। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাহরাইনের এলএমআরএ’র সঙ্গে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বাহরাইনের প্রতিনিধিদল দেশে এসেছেন। বাংলাদেশ থেকেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল কয়েক দফা দেশটি সফর করেছেন। এরপরই এলএমআরএ বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবৈধ বাংলাদেশীদের বৈধ করার কাজ শুরু করে এলএমআরএ। একই সঙ্গে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়েও আগ্রহ দেখায়। তবে তারা কর্মী নিয়োগে বেশ কিছু শর্ত দেয়। এই শর্ত পূরণ করার পরই তারা কর্মী নেবে বলে জানায়। প্রথমত সাশ্রয়ীভাবে বাহরাইনে কর্মী পাঠাতে হবে। চাকরির মেয়াদের বেশি সময় থাকতে পারবে না। এমন কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জনশক্তি রফতানিকারকরা তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে বাহরাইনে কর্মী নিয়োগ করেছে। এতে কর্মীরা সেখানে কাজ করে তাদের খরচের টাকাই তুলতে পারেনি। এ কারণে অনেক কর্মী লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করছেন। যার কারণে বাংলাদেশী কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়ছে। এর আগে এলএমআরএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণাটি গত বছরের অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ ছিল। এই সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীরা বৈধ হতে না পারলে তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। কাজে অনুপস্থিত বা কাজ থেকে পলাতক, কাজ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান, কাজ শেষের পর পলাতক ও ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর নবায়ন না করে অতিরিক্ত সময় অবস্থানকারী প্রবাসী কর্মীরা সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেন। পরে এ বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত আরও এক দফা সময় বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়ের মধ্যে বহু কর্মী বৈধ হওয়ার আবেদন করতে পারেননি। নির্ধারিত সময়ে যারা বৈধ হতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। অবৈধ কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত পুলিশী অভিযান চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, কর্মীরা বৈধ হওয়ার পর ছয় মাসের জন্য তারা যে কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে যদি কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে দেশেও ফিরতে পারবেন। বাহরাইন ইমিগ্রেশন তাদের কোন বাধা দেবে না। যদি সাধারণ ক্ষমার সময় পার করে কেউ দেশে ফিরতে চান তাহলে তারা কালো তালিকাভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। যে সব কর্মী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারা আবার সাধারণ ক্ষমা বলবত থাকা অবস্থায় আবার বাহরাইনে যেতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন বাংলাদেশের এই শ্রমবাজারটি বন্ধ ছিল। এ কারণে সেখানে থাকা হাজার হাজার বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা অবৈধ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ৭ থেকে ৮ বছর ধরে দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন। যদি পুলিশী অভিযান শুরু করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ একজন কর্মী তিন বছরের মেয়াদে গিয়ে যদি তার চেয়ে বেশি সময় দেশটিতে কাজ করেন তাহলে সে তো অবৈধ হবেই। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোন কিছু করার থাকে না।
×