ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানকে ট্রাম্পের কড়া বার্তা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৮ অক্টোবর ২০১৭

পাকিস্তানকে ট্রাম্পের কড়া বার্তা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার শীর্ষ কূটনীতিবিদ ও সামরিক উপদেষ্টাদের বিশেষ মিশন পাকিস্তানে পাঠাবেন বলে জানা গেছে। পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত এই মিত্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আশ্রয়-প্রশ্রয়দানের অভিযোগ করে আসছে। খবর এএফপির। এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন চলতি মাসের শেষদিকে পাকিস্তান সফরে যাবেন এবং তার সফরের পর পরই প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সে দেশে যাবেন বলে মার্কিন ও পাক তথ্য সূত্রে জানানো হয়েছে। পাকিস্তানে মার্কিন প্রশাসনের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সফর সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা এর মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে ট্রাম্পের এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে যে, জিহাদী গ্রুপগুলোকে সাহায্য সমর্থন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত অঞ্চলে বিভিন্ন তালেবান গ্রুপ ও সশস্ত্র জিহাদী গ্রুপগুলোকে আশ্রয় দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন যাবত পাকিস্তানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। কেননা, এই গ্রুপগুলোই আফগানিস্তানে যুদ্ধরত মার্কিন বাহিনী ও তাদের আফগান মিত্রদের ওপর হামলা পরিচালনা করে এবং সুযোগমতো পাকিস্তানী ভূখ-ে আশ্রয় নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভাঙ্গনের সূত্রপাত হয়েছিল ২০১১ সালে লাদেন হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে। গ্যারিসন শহর রাওয়ালপিন্ডিতে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কমান্ডো দল পাঠিয়ে হত্যা করেন। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিবর্তন ঘটলেও পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন নীতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। গত আগস্টে ট্র্রাম্প তার আফগান নীতি ঘোষণাকালে বলেন, আমরা পাকিস্তানকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ সাহায্য করছিÑ আর তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধরত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। নতুন আফগান নীতিতে ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আভাস দেন। কিন্তু এর ছয় সপ্তাহের মধ্যে কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন হিসাব নিকাশে কিছুটা পরিবর্তন সূচিত হয়। যার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস এ সপ্তাহে কংগ্রেসে দেয়া তার বক্তব্যে বলেন, সন্ত্রাস দমনের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা ‘আরও একবার চেষ্টা করব।’ তবে একজন দায়িত্বশীল পেন্টাগণ কর্মকর্তার মতে ম্যাটিসের পাকিস্তান সফরের পরও অবস্থার কোন হেরফের হবে নাÑ দেশটির প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব আগের মতোই কঠোর থাকবে। এদিকে ওয়াশিংটন সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ তার দেশের ওপর আরোপিত বিভিন্ন অভিযোগকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, বিগত ৭০ বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্রের একজন পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি এ ধরনের আচরণ ঠিক নয়। বরং অভিযোগ ও হুমকির পরিবর্তে এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের পরস্পরের সহযোগিতায় একযোগে কাজ করা উচিত। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হাক্কানি নেটওয়ার্ক অথবা অন্য জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মার্কিন অভিযোগ ছিল। কিন্তু পাক-কর্তৃপক্ষ হাক্কানি নেটওয়ার্কের পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছিল। তা সত্ত্বেও এ মাসের প্রথম দিকে মার্কিন ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় তিনজন সন্দেহভাজন জঙ্গী নিহত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনা প্রধান কাবুল সফরে গেলে কেউ কেউ আশাবাদী হয় যে, পাকিস্তান এই এলাকায় তালেবানদের সমর্থন করার পরিবর্তে সংযত ও নমনীয় নীতি গ্রহণের কৌশল অবলম্বন করতে যাচ্ছে। তবে অনেকের কাছেই তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। কারণ, তালেবান ও লস্কর-ই তৈয়বার মতো গ্রুপগুলো পাকিস্তানী গোয়েন্দা বাহিনীর কার্যকর হাতিয়ার। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইÑ তা পরিত্যাগ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন ফেয়ার বলেন, মার্কিন প্রশাসন নতুন কোন পথে না চললে, পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ এতদিন ধরে যে পথে চলে আসছে, সে পথেই চলবে।
×