ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পড়ার বিষয় যখন কৃষি

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৮ অক্টোবর ২০১৭

পড়ার বিষয় যখন কৃষি

মেডিক্যাল কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি প্রায়ই একই রকম। যারা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাঁদের জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি তুলনামূলক সহজ। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন- আবুল বাশার মিরাজ দেশে পাঁচটি সরকারী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর আসন সংখ্যা ২৭০০ এর অধিক। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিন্ন। তাই প্রস্তুতিও আলাদা। এরই মধ্যে বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। আবেদন করতে হবে অনলাইনে কিংবা এসএমএস এর মাধ্যমে। ভর্তি পরীক্ষার সময় এক ঘণ্টা। আবেদনের যোগ্যতা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মোট চতুর্থ বিষয় ছাড়া মোট জিপিএ ৯.০০ এবং আলাদাভাবে ৩.০০ থাকতে হবে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি-এইচএসসি মিলিয়ে জিপিএ ৭.৫০ লাগবে। বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি-এইচএসসি মিলিয়ে জিপিএ ৭.৫০ এবং আলাদাভাবে ৩.৫০ থাকতে হবে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের যোগ্যতা মোট জিপিএ ৭.০০ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বিষয় ব্যতীত মোট জিপিএ ৬.৫০ এবং আলাদাভাবে ৩.০০ থাকতে হবে। পরীক্ষার ধরন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ২৫, রসায়নে ২৫, গণিতে ২৫ ও জীববিজ্ঞানে ২৫ নম্বর মিলে এমসিকিউ পদ্ধতিতে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ ২০, রসায়ন ২০, জীববিজ্ঞান ২০, ইংরেজী ১০ এবং সাধারণ জ্ঞান ১০ এ বিষয়ে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নে ২০, জীববিজ্ঞানে ২০, গণিতে ১৫, ইংরেজীতে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বর মিলে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নে ২০, গণিতে ২০, জীববিজ্ঞানে ৩০ ও ইংরেজীতে ১০ নম্বর মিলে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। আর এসএসসির মোট জিপিএ কে ৮ দ্বারা গুণ করে এবং এইচএসসির মোট জিপিএকে ১২ দ্বারা গুণ করে ১০০ নম্বর ধরা হয়। অর্থাৎ এমসিকিউ ১০০+ জিপিএ ১০০= মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। যেভাবে নেবেন ভর্তি প্রস্তুতি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স এ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের আবদুর রহমান রাফি জানান, সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতি মোটামুটি একই রকম। সব ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং জীববিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন থাকে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এর পাশাপাশি থাকে ইংরেজী ও সাধারণ জ্ঞান। প্রশ্নের ধরনও একই রকম। তাই এক প্রস্তুতিতেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দেয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আউয়াল মিয়া শেখ বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করতে চাইলে জীববিজ্ঞান ও রসায়নে বেশি জোর দিতে হবে। কয়েক বছর ধরে পদার্থ ও গণিত প্রশ্নের ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। তাই এ দুটি বিষয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখলে এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।’ জীববিজ্ঞান : যাঁরা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুত নিয়েছেন, নতুন করে জীববিজ্ঞানে প্রস্তুতি নেয়ার কিছু নেই। তবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উদ্ভিদের বিভিন্ন পর্বের নাম, সামুদ্রিক শৈবালের গঠন, উদ্ভিদের কোষ, সালোক সংশ্লেষণ, শ্বসন, প্রাণীর শ্রেণিবিভাগ, হাইড্রা, পরিপাকতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে বেশি। আবুল হাসনাতের উদ্ভিদবিজ্ঞান বইয়ের খুঁটিনাটি জানতে হবে। প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য গাজী আজমলের বইটিই যথেষ্ট। রসায়ন : রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে বিভিন্ন বিক্রিয়ার উৎপাদক বিষয়ে বেশি প্রশ্ন আসে। বিক্রিয়া সহজে মনে থাকে না। তাই বিক্রিয়াগুলো বারবার লিখতে হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া একটি কাগজে লিখে পড়ার টেবিলে রাখতে পার, যাতে সব সময় চোখে পড়ে। রসায়ন প্রথম পত্রের মোলার ও মোলারিটি, জারণ-বিজারণ, রাসায়নিক সাম্যবস্থা অধ্যায় থেকে অঙ্ক আসে। সূত্র ভাল করে রপ্ত করতে পারলে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। কবীরের রসায়ন প্রথম পত্র এবং হাজারী নাগের দ্বিতীয় পত্র ভাল করে পড়তে হবে। গাণিতিক সমস্যা অল্প সময়ে সমাধানের নানা পদ্ধতি বাতলে দেওয়া হয়েছে ‘কেমিস্ট্রি’ বইয়ে। পদার্থবিদ্যা : পদার্থবিদ্যায় ২৫ এমসিকিউর মধ্যে কমপক্ষে ১৮টি গাণিতিক সমস্যা থাকে। প্রতিটি অধ্যায়ের গাণিতিক সমস্যার উদাহরণ ও বিগত বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় আসা গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। কাজ, শক্তি ও ক্ষমতা, তড়িৎ, চুম্বক, আপেক্ষিক তত্ত্ব, ইলেকট্রনিকস সম্পর্কিত অধ্যায় থেকে গাণিতিক সমস্যা বেশি আসে। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাই সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সমাধানের নিয়ম শিখতে হবে। বাজারে পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শর্ট টেকনিকের বই পাওয়া যায়। এ বইগুলো পড়লে চান্স পাওয়াটা সহজ হবে। গণিত : গণিতে ভাল করতে হলে প্রতিটি অধ্যায়ের সূত্র মুখস্থ রাখতে হবে। সূত্র থেকেও অনেক প্রশ্ন হয়। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে। বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সেট, ফাংশন, অমূলদ-মূলদ সংখ্যা, বিন্যাস, সমাবেশ, ত্রিকোণমিতি ও ক্যালকুলাসে। সাধারণ জ্ঞান : সাধারণ জ্ঞানের নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নেই। তবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। রাজধানী, মুদ্রা, বৃহত্তর, ক্ষুদ্রওর, নদ-নদী, হ্রদ, সদর দফতর, পুরস্কার, স্থাপনা, সম্মেলন ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকে। নিয়মিত পড়তে হবে পত্রপত্রিকা। মাসিক কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড প্রস্ততিতে সহায়ক হবে। ইংরেজী : সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতকিয়া রহমান বলেন, ইংরেজীরও নির্দিষ্ট কোন সিলেবাস নেই। বিগত বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান করলে কাজে দেবে। প্রিপজিশন, সিনোনিম, এনটোনিম, গ্রুপ ভার্ব, বাক্য রূপান্তর, বাক্য শুদ্ধকরণ, টেন্স, ভয়েস ইত্যাদি বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন হয়। টিপস্ এ্যন্ড ট্রিকস্ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বারের ভর্তি পরীক্ষায় ৭ম স্থান অধিকারী রাজু আহমেদ জয় বলেন, সবচেয়ে ভালো টেকনিক হলো প্রস্তুতি শুরুর আগে বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে নেয়া। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে বেশ কাজে দেবে। এখান থেকে প্রতিবছর ৩০-৪০ শতাংশ প্রশ্ন কমন থাকে। সেই সাথে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলেও কাজে দেবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। মাথায় রাখতে হবে এ বিষয়টিও। আছে আরও সুযোগ দেশের পাঁচটি সরকারী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি পড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারী এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজিতে কৃষি পড়ার সুযোগ রয়েছে।
×