ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এলগার-মার্করামের পর আমলা-প্লেসিস

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৮ অক্টোবর ২০১৭

এলগার-মার্করামের পর আমলা-প্লেসিস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমদিনেই বোঝা গিয়েছিল ব্লুমফন্টেইনের এই উইকেটে পুরোপুরি অসহায় বাংলাদেশের বোলাররা। তাদের নিয়ে একেবারে ছেলেখেলায় মেতে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। দুই ওপেনার ডিন এলগার ও এইডেন মার্করাম সেঞ্চুরি হাঁকান এবং একদিনেই ৩ উইকেটে ৪২৮ রান তোলে ওয়ানডের গতিতে। হাশিম আমলা ও ফাফ ডু প্লেসিস সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তারা দ্বিতীয়দিনে সেটা করে ফেলেন। আর তাদের সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকা গড়ে রানের পাহাড়। ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে তারা। দুই ওপেনারের পর আমলা-প্লেসিস সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের সর্বনাশটা করেন। আমলা ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের ২৭ সেঞ্চুরির রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যান। এখন শুধু তার ওপরে আছেন সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বাধিক ৪৫ সেঞ্চুরির মালিক। সফরকারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান ব্লুমফন্টেইন টেস্টে প্রথমদিন শতক হাঁকান এলগার ও মার্করাম। আর ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন আমলা এবং অধিনায়ক প্লেসিস ৬২ রানে। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায় প্রমাণ করেছেন তারা। দ্বিতীয়দিন ব্যাট করতে নেমে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক আমলা সেঞ্চুরি তুলে নেন। ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি ছিল তার এটি। সাবেক অধিনায়ক স্মিথ ১১৬ টেস্টে করেছিলেন ২৭ সেঞ্চুরি। ১০৯তম টেস্টে তাকে ছাড়িয়ে এখন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক আমলা। সবার ওপরে থাকা ক্যালিস ১৬৫ টেস্টে করেছেন ৪৫ সেঞ্চুরি। আমলাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন প্লেসিসও। তিনি ক্যারিয়ারের সপ্তম শতক হাঁকান। আমলাকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত শুভাশীষ রায় শিকার করেন। দারুণ বোলিং করা এ পেসার সরাসরি বোল্ড করে দেন তাকে। আমলা ১৬৩ বলে ১৭ চারে ১৩২ রানে সাজঘরে ফেরেন। চতুর্থ উইকেটে এ দু’জন ২৪৭ রান তোলেন। আমলা ফিরে যাওয়ার পরও উইকেটে ছিলেন প্লেসিস। তিনি ১৮১ বলে ১৫ চারে ১৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায়ত্ব এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। শুভাশীষ ছাড়া আর কোন বোলারই পাত্তা পাননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে। হয়েছেন তুলোধুনা। যার কারণে ওভারপ্রতি প্রায় ৫ করে রান তুলেছে স্বাগতিক দল। ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটি তাদের নিজেদের মাটিতে সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ। এর আগের টেস্টে ৩ উইকেটে প্রথম ইনিংসে ৪৯৬ রানই ছিল সেরা। দুই দলের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হওয়া সিরিজের রেকর্ডেও এ দুটিই সেরা ইনিংস। তবে বাংলাদেশের মাটিতে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম টেস্টে ৭ উইকেটে ৫৮৩ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর একটি ৫ শতাধিক রানের ইনিংস আছে তাদের। ২০০২ সালে ইস্ট লন্ডনে ৪ উইকেটে ৫২৯ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একই ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি করার ঘটনা টেস্ট ক্রিকেটে আছে এর আগে ২১টি। এবার সেখানে যোগ হলো ব্লুমফন্টেইন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসটিও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুইবার ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি করেছে প্রতিপক্ষরা। কিন্তু তাদের কীর্তি ছিল একবারই। এক ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরির প্রথম ঘটনা ছিল ১৯৫৫ সালের জুনে। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে কিংস্টনে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিল ৫ ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি। ৫ ব্যাটসম্যান একই ইনিংসে শতক হাঁকানোর আরেকটি ঘটনাই ঘটেছে আজ পর্যন্ত। সেটি ২০০১ সালে মুলতান টেস্টে সফরকারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করেছিল পাকিস্তান। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথমবার করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেন্ট জনসে ২০০৫ সালের এপ্রিলে। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের মধ্যে করেছিল ৪ ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি। অবশ্য প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাও ৪ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রথমবার এই কীর্তি দেখায়। আরেকবার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল প্রোটিয়া বোলারদের। কলকাতায় ভারতের ৪ ব্যাটসম্যান এক ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমনটা ঘটেছিল আরও দুইবার। ২০০৭ সালের মে মাসে ঢাকা টেস্টে ভারত ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই ৪ সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ৬১০ রানের বড় সংগ্রহ গড়েছিল। একই বছর জুনে শ্রীলঙ্কার ৪ ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন কলম্বোয়। এক ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি হওয়ার সর্বশেষ ঘটনা ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার। তারা ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে মেলবোর্নে বক্সিংডে টেস্টে ওই কীর্তি গড়ে। তারপরই এবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ঘটনা। বোলিং ব্যর্থতায় আরেকবার প্রতিপক্ষের এক ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি এবং বিশাল সংগ্রহ দেখল বাংলাদেশ দল।
×