ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা সই

শিল্প-কারখানা ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন ৬০ দিনে

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৮ অক্টোবর ২০১৭

শিল্প-কারখানা ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন ৬০ দিনে

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সীমানায় যে কোন প্রকার ছোট বড় শিল্প কারখানা স্থাপনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কারখানা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেতে পূর্বের ১শ’ ৫০ দিন (৫ মাস) কমিয়ে ৬০ দিন করা হয়েছে। রাজউকের আওতাধীন এলাকায় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করতে, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি কমাতে ও কম সময়ে নাগরিকদের অধিক সেবা প্রদান করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সময় কমানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউক কর্তৃপক্ষ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রাজউক সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে কারখানা নির্মাণে সময় কমিয়ে আনার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানের চেয়ে অধিক পরিমাণে শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন। এখন থেকে কোন আবেদনকারী আবেদনের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যেই শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কারখানা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাবেন। যাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সহজেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন এবং এর মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি ঘটবে। বর্তমান সরকার দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশী বিনিয়োগকারীদের পাশপাশি বিদেশী উদ্যোক্তাদেরও বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী একটি কারখানা নির্মাণে রাজউকের অনুমতি নিতে ১শ’ ৫০ দিন বা পাঁচ মাস সময় লাগত। আবেদনের পর থেকে পাঁচটি পর্বে ভাগ করে সকল কাজ সম্পন্ন করত রাজউক কর্তৃপক্ষ। তবে পূর্বের নিয়মানুযায়ী এসব কাজ সমাধান করতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া থাকলেও সঠিক সময়ের মধ্যে খুবই কম আবেদনকারীই সঠিক সময়ে কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ছাড়পত্র পেতেন। এতে করে অনেক দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে আগ্রহ হারিয়ে ফলেছেন। এছাড়া এর সঙ্গে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণসহ নানা জটিলতা অব্যাহত ছিল। রাজউক সূত্র জানায়, সম্প্রতি রাজউক ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশকে দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে ও অধিক কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করতে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। স্মারক অনুযায়ী যে কোন বিনিয়োগকারী কারখানা নির্মাণের জন্য রাজউকের দেয়া শর্তাবলী মেনে আবদেন করলে ঐ দিন থেকে পরবর্তী ২ মাসের মধ্যেই তাকে ‘কনস্ট্রাকশন’ ছাড়পত্র প্রদান করবে রাজউক। এমনকি কোন আবেদনকারী কোন প্রকার শর্ত পূরণ না করতে পারলেও তা চিহ্নিত করে রাজউকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে উক্ত আবেদনকারীকে তা জানিয়ে দেবেন। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজেই ছাড়পত্র পেতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে উদ্যোক্তাদের জন্য কারখানা নির্মাণে অনুমোদন পাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। সূত্র জানায়, রাজউক এলাকায় শিল্প কারখানা নির্মাণ করতে হলে আবেদনের কাগজ মোট পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র গ্রহণ করা, এরপর কল কারখানা নির্মাণের জন্য গঠিত বৃহদায়তন কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ কনস্ট্রাকশন কাজ শুরু করতে নির্মাণ কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। কনস্ট্রাকশন কাজ শেষ করে রাজউক কর্তৃপক্ষকে ভবন মালিক জানালে রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন নক্সা, ভূমির সঠিক ব্যবহারসহ সকল নিয়ম কানুন মেনে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে কি না তা যাচাই করে অকুপেশন সার্টিফিকেট প্রদান করেন। মোট পাঁচটি পর্বের কাজ করতে পূর্বে এক মাস করে মোট পাঁচ মাস সময় পেতেন রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখার লোকজন। বর্তমানে পাঁচ শাখার কাজ কমিয়ে ২ মাসে আনা হয়েছে। রাজউক সূত্র জানায়, চারটি শাখার কাজ শেষ হলে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যেই কারখানার অকুপেশন সার্টিফিকেট প্রদান করবে রাজউক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রাজউকের আওতাধীন এলাকায় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করতে, গ্রাহক হয়রানি কমাতে ও কম সময়ে রাজউকের সেবাগ্রহীতাদের অধিক সেবা প্রদান করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কারখানা নির্মাণের কনস্ট্রাকশন অনুমোদনে সময় কমানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজউক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি যে কোন কারখানা নির্মাণে পূর্বের সময় কমিয়ে দ্রুত ছাড়পত্র প্রদান করতে বিডার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। মূলত রাজউক সীমানায় যে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণের জন্য রাজউক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তেমনি শিল্প কারখানা নির্মাণ করতে সকল প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য যেমন ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদান, বৃহদায়তন কমিটির নক্সা অনুমোদন, অকুপেশন সার্টিফিকেট প্রদানসহ সকল কাজ সম্পন্ন করতে মোট ১শ’ ৫০ দিন সময় প্রয়োজন হয়। সমঝোতা স্মারকের ফলে এখন থেকে কোন আবেদনকারীকে আবেদনের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যেই শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কনস্ট্রাকশন ছাড়পত্র প্রদান করা হবে। যা দেশে বিনিয়োগে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সহজেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন এবং এর মাধ্যমে দেশে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি ঘটবে। কারখানা নির্মাণে সময় কমিয়ে আনার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানের চেয়ে অধিক পরিমাণে শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন।
×