ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিসিসিআইর সেমিনার

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরি হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৮ অক্টোবর ২০১৭

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরি হচ্ছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ বহু সূচকে এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে রয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরিতে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরি করতে পারছে না। প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কারিকুলামে। কোন প্রতিষ্ঠানের সিইও হতে চাইলে লেখাপড়া করে আসতে হয় বাইরে থেকে। এমনকি দেশের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে ম্যানেজার রয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ। স্বল্পতা রয়েছে দক্ষ প্রযুক্তিবিদের। পরিস্থিতি উত্তরণে ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে দেশীয় ব্যবস্থাপকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষতা বাড়াতে হবে দেশীয় ব্যবস্থাপকের। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যবসা পরিচালায় ব্যয় হ্রাস, পণ্যের বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরির ওপর দেশীয় ব্যবস্থাপকদের আরও বেশি জোর দিতে হবে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা করতে হবে গবেষণা কার্যক্রম। আর দেশীয় ব্যবস্থাপকদের হয়ে উঠতে হবে আরও বেশি প্রযুক্তিবান্ধব। শনিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলের ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে দেশীয় ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ ও বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (এনএসডিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ৩০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে চাইলে বাংলাদেশের জিডিপিকে প্রায় ১২৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে দেশীয় ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাস, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, যুগের চাহিদা মেটাতে দেশের শিক্ষা কারিকুলাম পরিমার্জন এবং আরও বেশি হারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। দেশীয় ব্যবস্থাপকদের আরও বেশি হারে তথ্য-প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, পণ্য ও বাজার সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, দেশের জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবলে রূপান্তরিত করতে পারলে আরও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ বাংলাদেশী বিদেশে কাজ করছে, যারা প্রতিবছর প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠাচ্ছে। আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানো সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হবে বর্তমানের প্রায় ১০ গুণ। তিনি বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা উচিত। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি সর্বোপরি আর্থিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে পেশাগত, ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। দক্ষ শক্তির অভাবে কাক্সিক্ষত মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে। দক্ষশক্তি তৈরির লক্ষ্যে দেশের শিক্ষা ও পাঠ্যসূচীর সংশোধন প্রয়োজন। আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্য বক্তারা বলেন, বিদেশী দক্ষ ব্যবস্থাপকবৃন্দ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত। আর তাদের পারিশ্রমিক বাবদ প্রতিবছর দেশের খরচ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ দেশে পর্যাপ্ত জনশক্তি রয়েছে। কিন্তু তাদের দক্ষতা নেই। তারা সিইও হতে পারছে না, যা দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (টেকনিক্যাল এ্যান্ড মাদরাসা ডিভিশন) অশোক কুমার বিশ্বাস ও ডিসিসিআই পরিচালক আতিক-ই-রাব্বানী। এ সময় ডিসিসিআইর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×