ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেয়ার রোডে উল্টোপথে যান চলাচল কমলেও অন্য সড়কে কমেনি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৮ অক্টোবর ২০১৭

হেয়ার রোডে উল্টোপথে যান চলাচল কমলেও অন্য সড়কে কমেনি

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীতে প্রতিদিন তিন শতাধিক যানবাহন ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে উল্টোপথে চলাচল করে। তিন বছর আগে ২০১৪ সালে রেট্রাকটেবল স্পাইকের যন্ত্র বসিয়ে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল বন্ধে প্রথম উদ্যোগ নেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ। কিছুদিনের মধ্যেই সেই যন্ত্রগুলো বিকল হয়ে পড়ায় সে উদ্যোগ থেমে যায়। এখন আবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের উপস্থিতিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হেয়ার রোডে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল বিরোধী অভিযান শুরু করার পর ব্যাপক আলোচনায় এসে প্রশংসা অর্জন করে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছুদুজ্জামান মিয়া ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল, সিগন্যাল অমান্য, অবৈধ পার্কিং ছাড়াও যারাই আইন লঙ্ঘন করবে তাদের ছাড় না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে রাজধানীর হেয়ার রোডের মতো ভিআইপি রোডে উল্টোপথে যানবাহন চালানোর প্রবণতা কমেছে। তবে রাজধানীর যানজট কবলিত রোডে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়নি। উল্টোপথে যানবাহন চলা প্রতিরোধ করতে হেয়ার রোডে বসানো রেট্রাকটেবল স্পাইকের যন্ত্রটি ফের অকার্যকর হয়ে পড়েছে। উল্টোপথে যানবাহন চলা প্রতিরোধকারী যন্ত্র রেট্রাকটেবল স্পাইকের যন্ত্রটি মেরামত ও সার্ভিসিং করে আবারও বসানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের উপস্থিতিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে হেয়ার রোডে উল্টোপথে যানবাহন চলাচলে অভিযান শুরু হওয়ার ঘটনাটি সর্বমহলে ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত। বিশেষ করে দুদক চেয়ারম্যানের উদ্যোগে ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে উল্টোপথে চলাচলকারী ভিআইপিদের গাড়ির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আইনের প্রতি মানুষকে সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে সাহায্য করছে। যেখানে সাধারণ মানুষ, অসুস্থ রোগী ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র গরমে, অসহ্য জ্যামে আটকে থাকেন সেখানে মন্ত্রী-এমপি, বিচারক, সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমনকি সাংবাদিকরা পর্যন্ত ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে উল্টোপথে পার হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই। উল্টোপথে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে চলমান এ অভিযান শুধু ট্রাফিক আইনই নয়, সর্বক্ষেত্রে আইন মেনে চলতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে সহায়ক হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি। ডিএমপি সূত্র জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছুদুজ্জামান মিয়া ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে উল্টোপথে যানবাহন চলাচলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারাই আইন লঙ্ঘন করবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। পরিচয় যাই হোক, ট্রাফিক আইন ভাঙ্গলে, উল্টোপথে গেলে, সিগন্যাল অমান্য করলে, অবৈধ পার্কিং করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। সেই থেকে প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব, বিচারপতি, আমলা, রাজনৈতিক নেতা, গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশ সদস্যরাও কেউই উল্টোপথে চলাচল ছাড়াও ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করার প্রবণতা একটা অঘোষিত আইনের মতোই হয়ে গিয়েছিল, যা এখন অনেক কমে গেছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় উল্টোপথে চলাচলকারী গাড়ির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। মামলা ও জরিমানার কবলে পড়েছেন প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সচিব, যুগ্ম সচিব থেকে শুরু করে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাও। এর মধ্যে পল্লী উন্নœয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব পরপর দুদিন আইন লঙ্ঘন করে উল্টোপথে যাওয়ার সময়ে দু’বারই ট্রাফিক পুলিশ তার ব্যবহৃত গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ঢাকা মহনগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল করার বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ঘটনা দীর্ঘদিনের হলেও প্রভাবশালী, বিত্তবান ও ভিআইপিদের গাড়িও আটক করে মামলা ও জরিমান করার বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে উল্টোপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে তিন বছর আগে থেকেই উদ্যোগ নেয়া হয়, ২০১৪ সালে। দীর্ঘদিন ধরেই উল্টোপথে গাড়ি চালানো থামাতে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়।
×