ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৈয়দা রুবি রাজ্জাক

অভিমত ॥ প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতি সাজাতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ৮ অক্টোবর ২০১৭

অভিমত ॥ প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতি সাজাতে হবে

একঘেয়েমি ক্লান্ত জীবন থেকে কিছু দিনের জন্য মুক্ত নিশ্বাস নিতেই সভ্য সমাজের বিলাসী মানুষেরা দেশ-বিদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ ঘুরে ঘুরে দেখে মনমানসিকতা সতেজ-সজীব করে। পরবর্তীতে জীবনকে নতুন করে শুরু করে। ওয়েস্টার্ন দেশেই এটা বেশি ছিল। আগে আমাদের দেশে শুধু অসুস্থ হলেই হাওয়া পরিবর্তন করতে বলত ডাক্তাররা। বর্তমানে বাংলাদেশবাসীরা পিছিয়ে নেই। আগে সবাই চিটাগাং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের জায়গা জানত। এখন সোনার বাংলায় প্রচুর অবসর যাপনের স্থান রয়েছে। এখন এসব পর্যটন স্থানে দেশের লোক দিয়ে ভরপুর। আজ দেশ উন্নত হয়েছে। শিক্ষিত এবং অর্থ দুই-ই হয়েছে। দৃষ্টি খুলে গেছে। শ্রষ্টার সৃষ্টির অপূর্ব শোভা দেখার মনমানসিকতা গড়ে উঠেছে। সত্যি এটা গর্বের বিষয়। এত দৃশ্যমান স্থান হয়েছে যে লিখে শেষ হবে না। সুন্দরবনই ধরুন কি অপূর্ব সৌন্দর্য। পরশু নদী বয়ে গিয়েছে। কিছু দূর বয়ে গিয়ে গিয়ে দুই বাহু মেলে দিয়েছে। খালগুলো বনের ভেতর চলে গেছে। যেন মা তার দু’বাহু মেলে সন্তানদের আহ্বান করছে। এমন দেশ আমার অপার সৌন্দর্য। নদীর তীর ঘেঁষে সুন্দরবন। যেখানে নদী শেষ সেখান থেকেই বঙ্গোপসাগর। সবুজ আর সবুজ বনায়ন। মাঝ নদীতে ট্রলার রেখে নৌকায় খালগুলোর ভেতরে হরিণেরা আনমনে ঘাসপাতা খাচ্ছে। মাঝে মাঝে আওয়াজ পেয়ে আপনার দিকে আনমনাভাবে চেয়ে দেখবে। ডিমচর খাল চারদিকে পানি আর পানি মাঝখানে বালুচর ‘কষ্টা’ খাল যেখানে চিত্রা হরিণ, বলগা হরিণ, হরিণ শাবক ঘুরে বেড়াচ্ছে দলবেঁধে। হাত বাড়িয়ে কেওরাপাতা খেতে দেন লাফিয়ে এসে খাবে। মন ভরে ওঠে। ঘরে ফেরার ইচ্ছা হয় না। রাতে নিঃস্বকালো আঁধার তাঁরা খচিত আকাশ। দিনের বেলায় উপরে অসীম নীল আকাশ, নিচে অথৈ জল চারদিকে ঘন সবুজ বন। নৈসর্গিক সৌন্দর্য। কে ফিরতে চায় এসব সৌন্দর্য রেখে। তবু ফিরতে হয়। কুয়াকাটায় সূর্য ডোবা-ওঠা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে উর্মিমালা আছড়ে পড়ে পানিতে পা ডুবিয়ে প্রভাতে হাঁটা কি-না আনন্দ। বান্দরবানে নীলগিড়ি মেঘরাজকন্যারা ভেসে এসে ঝরে পড়ছে। সেন্ট মার্টিনের নীলাভ জল। সিলেটে মনোলোভী চায়ের বাগানের মিষ্টি গন্ধ। সবুজ ঘেরা দেশ কার না ভাল লাগে। ভুলে যায় বর্তমানকে। হারাতে চায় সবাই প্রকৃতির মাঝে। এত কিছু থাকার পরও পর্যটন শিল্প অবহেলিত। কারণ সৌন্দর্যের সঙ্গে আকর্ষণ থাকা প্রয়োজন। সেটা আমাদের পর্যটন বিভাগ চিন্তা করে না। সেই পদ্ধতি জানতে হবে। টাকা-পয়সা সরকারী-বেসরকারীভাবে খরচ হয়, তবে একটা ফাঁক আছে, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ওদের থেকে অনেক তফাত। প্রথমত জীবনের নিরাপত্তা, রাস্তাঘাট এবং যাতায়াতের অসুবিধা, সুন্দর থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। ওদের স্টাইলে নেই। সবকিছু মিলে পুলকিত হওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই। সবই সাদামাটা। যেমন একটা উদাহরণ দেই, সিঙ্গাপুর বার্ড পার্ক। জুরাং পার্ক। কি অপূর্ব প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতি সাজিয়েছে। মুগ্ধ হতে হয়। পার্কে ঢুকতেই ইউসেফে তিনটি গেট পার হতে হয়। সেই গেটগুলো অর্কিড দিয়ে সাজানো। কি যে আর্টিস্টিক বলে বোঝানো যাবে না। আপনি কিছুক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করবেন। সোনাদানা কিছুই লাগায়নি। পাখি পোষার যে ব্যবস্থা বিউটিফুল। শুধু তাই নয়, তা ঘুরে ঘুরে যে দেখবেন তার জন্য টায়ারযুক্ত রেলগাড়ি। খাবার জায়গা বিশ্রামের জায়গা, বাথরুম, নিট এ্যান্ড ক্লিন, সবকছিু ফুলগাছ, পাতা দিয়ে সাজানো। নিট এ্যান্ড ক্লিন, যারা ভ্রমণ করছেন তারা বুঝবেন। আকর্ষণীয় করতে হলে চোখের দৃষ্টি বুদ্ধি, রুচি, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যারা এসবের দায়িত্বে তাদের উচিত বাইরের গিয়ে শিক্ষা নিয়ে সবকিছু তৈরি করা। প্রকৃতির জিনিস দিয়েই প্রকৃতির সৌন্দর্য তৈরি করুন। নিরাপত্তা সুন্দর রাস্তাঘাট সুন্দর যাতায়াত ব্যবস্থা, খাওয়া দাওয়ার সুব্যবস্থা সর্বোপরি বিদেশীদের জন্য আলাদা হোটেল রিসোর্ট তৈরি করা। তাহলে অবশ্যই বিদেশের পর্যটকরা আমাদের এত সুন্দর দেশটি দেখতে ছুটে আসবে। লেখক : সাবেক শিক্ষক
×