ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শব্দদূষণ-বায়ুদূষণ

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ৮ অক্টোবর ২০১৭

শব্দদূষণ-বায়ুদূষণ

ঢাকার শব্দদূষণ-বায়ুদূষণ-নদীদূষণ সবই ভয়াবহ ও মারাত্মক, যা একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। রাজধানীতে এসব দূষণ ইতোমধ্যে সকল সীমা অতিক্রম করেছে। বায়ুদূষণ ও নদীদূষণ নিয়ে লেখালেখি হয়েছে বিস্তর। তুলনামূলকভাবে শব্দদূষণ নিয়ে কম। ইদানীং দেখা যাচ্ছে যে, শব্দদূষণ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ছে ক্রমশ। সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার পর পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক যানবাহনের হাইড্রলিক হর্ন জব্দ করে ধ্বংস করেছে। জরিমানার খবরও আছে। তবে দুঃখজনক হলো, এরপরও এই হর্নের ব্যবহার কমেনি। এ নিয়ে ব্যাপকভাবে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে স্বপ্নময় নামের একটি স্ব্চ্ছোসেবী সংগঠন শুরু করেছে অভিনব প্রচারণা ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’। অবশ্য শব্দদূষণের জন্য শুধু হাইড্রোলিক হর্নই দায়ী নয়; মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন ও গণপরিবহনের হর্ন, কারণে-অকারণে জনসভা; মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাইকের ব্যবহার, বিনোদনের নামে উচ্চস্বরে গানবাজনা ইত্যাদিও কম দায়ী নয়। এর পাশাপাশি আছে যখন তখন অতিরিক্ত এ্যাম্বুলেন্স, ভিআইপি, র‌্যাব-পুলিশের গাড়ির মুহুর্মুহু সাইরেন বাজানো, যা এমনকি হাসপাতালসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও রেহাই দেয় না। মাত্রাতিরিক্তি শব্দদূষণের কারণে রাজধানীবাসীর যে বুক ধড়ফড় করাসহ শ্রবণশক্তি কমছে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেক্ষেত্রে অন্তত ‘হর্নমুক্ত ঢাকা’ একটি কাক্সিক্ষত স্বপ্ন হতে পারে অবশ্যই। শব্দ প্রবাহিত হয় বাতাসের মাধ্যমে। রাজধানীর বায়ুদূষণও মারাত্মক। ঢাকার বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। অবশ্য নাসা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বিশ্বব্যাপী। বাতাসের গুণাগুণ নির্দেশক শক্তিশালী রেজ্যুলেশনের স্যাটেলাইট মানচিত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে নাসার বিজ্ঞানীরা বায়ুদূষণ সংক্রান্ত এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। এতে বিশ্বের ১৯৫টি শহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের হ্রাসবৃদ্ধি সম্পর্কিত তথ্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। নাসার এই তথ্যটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে নাসা চিহ্নিত করেছে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ও শিল্পায়নকে। একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। এক হিসাবে জানা যায়, ঢাকায় ৩৫ শতাংশ মানুষ বস্তিবাসী। প্রায় দুই কোটি অধিবাসী অধ্যুষিত রাজধানীতে নেই পর্যাপ্ত আবাসন, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সর্বোপরি গ্যাস-পানি-বিদ্যুত, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা। তদুপরি মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি-বাস, ট্রাক, টেম্পো, লরি, মাইক্রো, প্রাইভেটকার, লেগুনা ইত্যাদি। সেই অনুপাতে নেই খোলা জায়গা, মহানগরীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্ক, গাছপালা, নদী-নালা। সুতরাং ঢাকার বায়ুদূষণ-শব্দদূষণ যে বিশ্বে সর্বাধিক মাত্রায় হবে তাতে আর বিচিত্র কি? রাজধানীর বাতাসে নাইট্রোজেনে ডাই-অক্সাইডের পাশাপাশি আছে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড, মাত্রাতিরিক্ত সীসা (লেড অক্সাইড), ধুলা, বালি, ধোঁয়া ইত্যাদি। শুধু নেই মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন। কেননা, তথাকথিত উন্নয়নের প্রয়োজনে আমরা অনেক আগেই দখল করেছি রাজধানীর খাল-নালা ও ছোট-বড় পার্কগুলো। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগসহ ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোও মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় অক্সিজেন মিলবে কোত্থেকে? সুতরাং নগরবাসীর এখন হাসফাঁস অবস্থা। ঢাকার জনস্বাস্থ্য রীতিমতো হুমকির মুখে, বিপন্নপ্রায়। শ্বাসকষ্ট, সর্দি-হাঁচি-কাঁশি, হাঁপানি, ফুসফুসের অসুখবিসুখ নগরবাসীর প্রায় নিত্যসঙ্গী। এ অবস্থায় নাসার পর্যবেক্ষণটিকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতরসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে, যে বা যারা এ বিষয়ে কাজ করে থাকেন। নাসা পর্যবেক্ষণে দেখেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাইট্রোজন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপান বায়ুদূষণের লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও অবশ্য কর্তব্য হবে সেসব দেশের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে শব্দদূষণ. বায়ুদূষণের মাত্রা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা। সরকার এ বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।
×