ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চালের মূল্য কমছে

সবকিছুকে ছাপিয়ে বাজারে কাঁচা মরিচ দামে শীর্ষে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ অক্টোবর ২০১৭

সবকিছুকে ছাপিয়ে বাজারে কাঁচা মরিচ দামে শীর্ষে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিত্যপণ্যের বাজারে কাঁচামরিচ সবকিছুকে ছাপিয়ে দামের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ দামে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। ক্রেতা, বিক্রেতা ও ভোক্তা সবার আলোচনায় এখন কাঁচামরিচ। ধীরে ধীরে কমে আসছে চালের দাম। বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কেজিতে ৫-৬ টাকা পর্যন্ত কমেছে মোটা চালের দাম। বর্তমান ৪৮-৫০ টাকায় মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া উন্নতমানের চালে কেজিতে ২-৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম কমতেই থাকবে, আর বাড়ার কোন কারণ নেই। এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে মাছের দাম বেড়ে গেছে। ইলিশ ধরা, বিক্রি ও মজুদ বন্ধ থাকায় বাজারে কোন ইলিশ নেই। ইলিশের ক্রেতারা দেশীয় জাতের মাছের দিকে ঝুঁকে পড়ায় দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া গরু, খাসি ও ব্রয়লার মুরগি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। আটা, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কেজিতে ২ টাকা কমে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। এছাড়া দাম কমেছে দেশী ও আমদানিকৃত রসুনের। আমদানিকৃত বড় দানার রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকায়। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, পলাশী বাজার, নিউমার্কেট এবং মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, রাজধানীর বাজারে কয়েক দিনের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে গেছে কাঁচামরিচের দাম। পবিত্র আশুরা ও দুর্গাপূজার ছুটির আগে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মরিচ ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন পাইকারি দোকানগুলোতেই কেজিপ্রতি ২০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি কাঁচামরিচের সরবরাহ একেবারেই কম থাকা ও ভারত থেকে আমদানি কয়েকদিন বন্ধ থাকায় দাম এত বেড়ে গেছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের আড়তগুলোতেও দাম এখন বেশি। টানা বর্ষণ এবং বন্যার কারণে এ বছর মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে গাছ মরে গেছে। এছাড়া মরিচও নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কারণে এই পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। বাজারে শীতের আগাম সবজি পাওয়া গেলেও দাম চড়া। গড়ে ৬০-৭০ টাকার নিচে কোন সবজি মিলছে না। এদিকে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় গৃহিণীরা বেকায়দায় পড়েছেন। বিপাকে পড়েছেন রেস্তরাঁ মালিকরা। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক রেস্তরাঁয় সালাদের সঙ্গে মরিচ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া গৃহিণীরা তরকারিতে মরিচ দেয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে পল্টনের একটি রেস্তরাঁর ম্যানেজার জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রাহকদের খাবার পরিবেশনের সময় আমরা সালাদের সঙ্গে মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে থাকি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ার কারণে এখন আর মরিচ দিচ্ছি না। তবে দাম কমে এলে আবার মরিচ দেয়া হবে। এছাড়া দেশের চলমান নানা সঙ্কট এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে যেভাবে চালের দাম বেড়েছিল সেভাবে দাম কমেনি। কেজিতে কমেছে মাত্র ৫-৬ টাকা পর্যন্ত। অথচ কয়েক মাসের ব্যবধানে চালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা ও পারিজা চাল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা দরে। এছাড়া মিনিকেট কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে (ভাল মানের) ৬৫ টাকা দরে, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৮ টাকা, বিআর-আটাশ ৫৬ টাকা, ভারতীয় বিআর-আটাশ ৫০ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৭০ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৬৫, হাস্কি ৫৬, পাইজাম চাল ৫২ টাকা, কাটারিভোগ ৭০-৭৫ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভাল মানের মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬৫-৬৮ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা, ভালমানের বিআর-আটাশ কেজিপ্রতি ৫৬-৫৮ টাকা, সাধারণ বিআর-আটাশ ৫৪-৫৬ টাকা ও মোট স্বর্ণা চাল ৪৮-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, মুদি পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে কেজিপ্রতি ছোলা ৮৫ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ৯০ টাকা, মাষকলাই ১২৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১২০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০ টাকা, প্রতি লিটারে ১-২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×