ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গা যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু

নানান অঙ্গনের শিল্পী সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৭ অক্টোবর ২০১৭

নানান অঙ্গনের শিল্পী সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলা

মোরসালিন মিজান গঙ্গা যমুনা নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব একটু আলাদা চরিত্রের। গত কয়েক বছরে এই চরিত্রটি মোটামুটি পরিষ্কার হয়েছে। স্বতন্ত্র রূপ পরিগ্রহ করেছে উৎসব। উৎসবের প্রতিদিন নাটক মঞ্চস্থ হয়। মিলনায়তনের ভেতরে নাটক। বাইরে সাজানো খোলা মঞ্চে সঙ্গীত নৃত্য আবৃত্তি পথনাটক। সঙ্গত কারণেই বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় উৎসবটি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা এখন মুখরিত। পুরো প্রাঙ্গণটি জমজমাট। শুক্রবার থেকে এখানে শুরু হয়েছে এবারের উৎসব। বড়সড়ো আয়োজন বলে কথা, অনেকদিন ধরেই চলছিল প্রস্তুতি। গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব পর্ষদ বেশ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। কয়েকটি উপকমিটি কাজ করেছে দিন-রাত। এর পরও প্রথম দিন একটু আগেভাগে উৎসবস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কাজ থেমে নেই। শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ করছিলেন কর্মীরা। জাতীয় নাট্যশালার বহিরাঙ্গন বরাবরের মতোই সাজিয়ে নেয়া হয়েছে। মেঝেতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ফুলের পাপড়ি। মঞ্চ তখনও তৈরি হচ্ছিল। এরই মাঝে বিকেল সাড়ে ৫টায় সরব হয়ে ওঠে উন্মুক্ত মঞ্চটি। জাতীয় নাট্যশালার প্রশস্ত সিঁড়ি যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে পরিপাটি মঞ্চ। মঞ্চে প্রথম পরিবেশনা নিয়ে আসে প্রাচ্যনাট স্কুল। সর্বশেষ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে পথনাটক ‘পুনরাবৃত্তি।’ মাত্র দশ মিনিটের পরিবেশনা। ধর্ষণ ও অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানান তারা। সুন্দর অভিনয় ও জোরালো উপস্থাপনার কারণে দর্শক পেতে সময় লাগে না। সিঁড়িতে বসে দাঁড়িয়ে নাটক উপভোগ করেন বহু মানুষ। সন্ধ্যায় দশদিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব আলী যাকের, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, লিয়াকত আলী লাকী, উৎসব উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ ও সদস্য সচিব আকতারুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও। সকলে মিলে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় বর্ণাঢ্য নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলনায়তনের প্রতি কোণে উৎসবের রং ছড়িয়ে দেয়া হয়। স্বাগত নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দনের শিল্পীরা। আলোচনা পর্বে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এই উৎসব বাংলাদেশের। একইসঙ্গে ভারতের। আয়োজনটির মাধ্যমে দুই দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নাট্যজন আলী যাকের বলেন, এটি দুই বাংলার উৎসব। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ লাভ করি। বাংলাদেশ ও ভারতের দুটো নাট্যধারা সর্বভারতীয় সংস্কৃতির অংশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রামেন্দু মজুমদার কিছুটা অভিযোগের সুরে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাটকের প্রতি আমাদের আগ্রহ থাকলেও, বাংলাদেশের নাটকের ব্যাপারে তাদের উদাসীনতা রয়েছে। তাদের জানার আগ্রহের কমতি রয়েছে। একইসঙ্গে আদান-প্রদানের নামে নি¤œমানের নাটক যেন না আসে সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। উদ্বোধনী পর্ব শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে ছিল প্রাচ্যনাট প্রযোজনা ‘সার্কাস সার্কাস’। আজাদ আবুল কালামের লেখা নাটক। তিনি নিজেই নির্দেশনা দিয়েছেন। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল পরিবেশন করে নাটক ‘কনডেমড সেল।’ লিখেছেন অনন্ত হীরা। নির্দেশনা আওয়াল রেজার। স্টুডিও থিয়েটার হলে লোক নাট্যদল (বনানী) পরিবেশন করে নাটক- বৈকুণ্ঠের খাতা, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা থেকে নির্দেশনা দেন কামরুন-নূর চৌধুরী। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ শনিবার জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে ঢাকা থিয়েটারের বিখ্যাত প্রযোজনা ‘ধাবমান।’ পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে নাট্যদল সময়ের ‘যযাতি।’ স্টুডিও থিয়েটার হলে ‘মৃত্যুক্ষুধা’ নিয়ে থাকবে নাট্যচক্র। তৃতীয় দিন রবিবার উৎসবে কলকাতার দল দক্ষিণ রুচিরঙ্গ মঞ্চস্থ করবে ‘বর্ণপরিচয়।’ পদাতিক নাট্যসংসদ (টিএসসি) থাকবে ‘গহনযাত্রা’ নিয়ে। চতুর্থ দিন সোমবার কলকাতার গণকৃষ্টি মঞ্চস্থ করবে ‘তোমার আমি।’ আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘দি জুবিলী হোটেল।’ ‘কমলা সুন্দরী’ মঞ্চস্থ করবে ‘নাট্যতীর্থ।’ পঞ্চম দিন মঙ্গলবার থাকছে শেক্সপিয়ারের কালজয়ী সৃষ্টি ‘হ্যামলেট’র প্রদর্শনী। অসুস্থ অবস্থায় সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদ করা নাটকটি প্রযোজনা করেছে শিল্পকলা একাডেমি। ঢাকা পদাতিক মঞ্চস্থ করবে ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা।’ ম্যাড থেটার প্রদর্শন করবে অপেক্ষাকৃত নতুন প্রযোজনা ‘নদ্দিউ নতিম।’ বুধবার মঞ্চস্থ হবে কণ্ঠশীলনের নতুন নাটক ‘যাদুর লাঠিম।’ থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘কোর্ট মার্শাল।’ রঙ্গপীঠ মঞ্চস্থ করবে ‘শাদী পয়গাম।’ বৃহস্পতিবার মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্যাঙ্গন বাংলাদেশের ‘গহর বাদশা ও বানেছাপরী।’ শব্দনাট্যচর্চা কেন্দ্র মঞ্চস্থ করবে ‘চম্পাবতী।’ ‘গালিভারের সফর’ মঞ্চস্থ করবে ভিশন থিয়েটার। শুক্রবার লোক নাট্যদল (সিদ্বেশ্বরী) পরিবেশন করবে ‘কঞ্জুস।’ থিয়েটার মঞ্চস্থ করবে ‘মুক্তি।’ থিয়েটার স্কুল প্রাক্তনী মঞ্চস্থ করবে ‘প্রথম পার্থ।’ শনিবার কলকাতার অনীক নাট্যদল মঞ্চে আনবে ‘শকুন্তলা।’ ‘মহাজনের নাও’ নিয়ে থাকবে সুবচন। বহুবচন পরিবেশন করবে ‘অনিকেত সন্ধ্যা।’ সমাপনী দিনে দেশ নাটক মঞ্চস্থ করবে ‘সুরগাঁও।’ নাট্যম রেপার্টরী মঞ্চস্থ করবে ‘দমের মাদার।’ ‘প্রীতিলতা’ নিয়ে থাকবে জয়যাত্রা। উৎসবের প্রতিদিন সরব থাকবে উন্মুক্ত মঞ্চ। চলবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। নাচ-গান-আবৃত্তি পরিবেশন করবে ঢাকার বিভিন্ন দল। উৎসব চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
×