ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বজ্রপাত, হঠাৎ বৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৭ অক্টোবর ২০১৭

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বজ্রপাত, হঠাৎ বৃষ্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা। হঠাৎ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঢাকার আকাশ। এরপরেই শুরু হয় মেঘের গর্জন। কান ফাটানো গর্জনে মানুষ অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। মেঘের গর্জন এত শক্তিশালী ছিল যেন মনে হচ্ছিল বজ্রপাতের আঘাতে ঘরবাড়ি ধসে পড়বে এখনই। এরপরই দমকা হাওয়া আর মুষলধারে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় মাত্র ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে আর সামান্য এই বৃষ্টিপাতে ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেয়। জুমার নামাজের সময় হঠাৎ করেই যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া অনেক মুসল্লি ভিজে একাকার হয়ে পড়েন। অনেকেরই বৃষ্টির মধ্যে ভিজে নামাজ পড়তে দেখা গেছে। এদিকে বর্ষার শেষ সময়ে এসে বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে গেছে। সাধারণত দেশে এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলেও বর্ষা বিদায়ের সময় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমি বায়ু বিদায়ের সময়ে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাতাসে জলীয় কণার পরিমাণও বেশি রয়েছে। এ কারণে হঠাৎ সৃষ্ট মেঘ ভয়ানক হয়ে উঠছে। সৃষ্টি হচ্ছে বজ্রপাতের। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, এ ধরনের মেঘে যে বজ্রপাত হচ্ছে মূলত মৌসুম-পরবর্তী কারণে হচ্ছে। বছরের দুই সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণেই এটা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল মে মাসে আকাশে খাড়াভাবে তৈরি হওয়া মেঘের কারণে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এখান থেকে সৃষ্টি হওয়া বজ্রপাত সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে আঘাত করে আর এ বজ্রপাতের কারণেই মানুষের মৃত্যুসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে বর্ষার সময় আকাশে আড়াআড়ি মেঘের কারণে এবং তাপমাত্রা কম থাকায় বজ্রপাতের ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় না। তবে বর্ষার বিদায়ের কারণে প্রকৃতিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে শুরু হয়েছে এই বজ্রপাত। আবহাওয়া অফিস বলছে, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত না থাকায় প্রকৃতি চলছে এক ধরনের গুমোট ভাবে। প্রচ- গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার। শুক্রবারের সামান্য সময়ের এই বৃষ্টিপাত গরমে স্বস্তি দিলে ভোগান্তিতে ফেলে দেয় নগরবাসীকে। বিভিন্ন কারণে যারা বাইরে বের হন তাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ ছুটির দিনে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও শুক্রবারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। পুরো মানিক মিয়া এভিনিউ যেন গাড়িতে থমকে ছিল। রাজধানীর কলেজ গেট থেকে আসাদগেট হয়ে নিউ মার্কেটগামী রাস্তাটা গাড়িতে আটকে ছিল। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিভিন্ন জায়গায় পানি বেঁধে যায়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে বিদায় মুহূর্তে মৌসুমি মাঝে মধ্যে সক্রিয় হওয়ায় এ ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। তারা জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বিহার, হিমালয়ের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। এ কারণে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দম্কা হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। শুক্রবার সকাল থেকে সারাদেশে আকাশ ছিল পরিষ্কার। জলীয় কণার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে রোদের তাপ ছিল গায়ে হুল ফোটনোর মতো। গত কয়েকদিনের আবহাওয়া ছিল একই রকম। ফলে প্রকৃতিতে হঠাৎ গরম বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শুক্রবার দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। শুরু হয় কালো মেঘের আনাগোনা। এরপরই ঝুম বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে ১২টার পর ঢাকায় কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৬০ সেলসিয়াস। এই সময়ে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরম বেড়ে যায়। তবে বৃষ্টির কারণে প্রকৃতিতে অনেক স্বস্তি নেমে আসে। তারা জানায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় আর্দ্রতা ছিল ৬০ শতাংশ। তবে তারা জানায়, আগামী তিন দিন দেশে বৃষ্টিপাতের এ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
×