ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতল পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন ‘আইক্যান’

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৭ অক্টোবর ২০১৭

নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতল পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন ‘আইক্যান’

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে উদ্যোগী বেসরকারী সংগঠন ‘আইক্যান’ এ বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছে। সংগঠনটির পুরোনাম ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু এ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপন্স বা আইক্যান। শুক্রবার নরওয়ের স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় দেশটির রাজধানী অসলোতে এ পুরস্কার ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩১৮ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। খবর বিবিসি ও এএফপির। নোবেল কমিটি বলেছে, পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহ পরিণতি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং এই অস্ত্রকে নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টার জন্য এই সংস্থাটিকে এবার শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সংগঠন হিসেবে আইক্যানের নাম এমন এক সময়ে ঘোষণা করা হলো যখন পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে পরস্পরকে আক্রমণের হুমকি দেয়া হচ্ছে।নোবেল কমিটি থেকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি বর্তমানে গত বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইট এন্ডারসন এ সময় উত্তর কোরিয়ার কথাও প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে চুক্তির ব্যাপারে সংস্থাটি বড় রকমের অগ্রগতি সাধন করেছে। পরমাণু অস্ত্রকে পর্যায়ক্রমে নির্মূল করার লক্ষ্যে আলোচনা শুরুর জন্য বিভিন্ন দেশের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান। এ বছর জুলাই মাসে পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘে ১২২টি দেশ এক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। কিন্তু পরমাণু শক্তিধর ৯টি দেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ, এই প্রস্তাবে সই করেনি। নোবলে পুরস্কার পাওয়া প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে আইক্যান বলেছে, পরমাণু হামলা বর্তমান সময়ে বিশ্বকে চিন্তায় ফেলেছে। সেখানে এই পুরস্কার একটু হলেও চিন্তা প্রশমিত করবে। নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শুক্রবার জেনেভায় আইক্যানের মুখপাত্র আলেক্সান্দ্রো ভেলুচি বলেন, এ পুরস্কার পরমাণু নিষিদ্ধকরণ চুক্তির জন্য পক্ষে কাজ করবে। এদিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার আইক্যানকে অভিনন্দন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান ফ্রেদেরিকো মোগেরিনি। এক টুইটার বার্তায় শুক্রবার তিনি বলেন, আমরা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার পক্ষে আরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আশা করছি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মুখপাত্র বলেছেন, পরমাণু সমতা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আরও বলেন, বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কোন বিকল্প নেই। নোবেল কমিটির এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি স্বাক্ষরে আইক্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আইক্যানের নোবেল জেতায় ন্যাটো শীতল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু এ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপন্স বা আইক্যান নিজেদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বেসরকারী সংস্থার একটি জোট বলে বর্ণনা করে। দশ বছরেরও বেশি পুরনো জেনেভাভিত্তিক এই সংস্থাটি বলছে, একশোটিরও বেশি দেশের বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এই জোটের সদস্য। পুরস্কার হিসেবে আইক্যান পাবে ১১ লাখ ডলার ও একটি নোবেল পদক। আগামী ডিসেম্বর মাসে এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির হাতে এসব পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। বাংলাদেশের দুটি সংগঠনও শান্তিতে নোবেলের অংশীদার ॥ চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার অংশীদার হয়েছে বাংলাদেশের দুটি বেসরকারী সংগঠন। আইসিএএনের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র (সিবিএস) ও ফিজিশিয়ান ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির নাম রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) একটি জোট হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় দ্য আইসিএএন। বাংলাদেশী সংগঠন দুটির মধ্যে সিবিসি ২০১৪ সাল থেকে আইসিএএনের সদস্য ও ফিজিশিয়ান ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি ২০০৬ থেকে ওই জোটের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে পরমাণু অস্ত্রের ক্ষতিকারক দিক নিয়ে এই দুটি সংগঠন নানা ধরনের কর্মকা- পরিচালনা করছে।
×