ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও এলগার-মার্করামে ডুবছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৭ অক্টোবর ২০১৭

আবারও এলগার-মার্করামে ডুবছে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম টেস্টে যেমনটি হয়েছে। দ্বিতীয় টেস্টেও একই দশা হচ্ছে। ডিন এলগার ও এইডেন মার্করামে ডুবছে বাংলাদেশ। পোচেফস্ট্রুম টেস্টে মার্করাম অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসেই ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে তো সেঞ্চুরিই করে ফেললেন। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেলেন। এলগার তো প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন। ১৯৯ রান করেছেন। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করে ফেলেন। ক্যারিয়ারের দশম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন এলগার। ১৫২ বলে ১৭ চারে ১১৩ রান করে শেষ পর্যন্ত আউট হন এলগার। আর মার্করাম ১৮৬ বলে ২২ চারে ১৪৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন। তবে দুইজন মিলে এমনই ব্যাটিং করেন যে, বাংলাদেশকে শুরুতেই দুর্দশায় ফেলে দেন। দুইজন মিলে ২৪৩ রানের জুটি গড়েন। আগে ব্যাট করতে পারার সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন এ দুই ব্যাটসম্যান। উইকেট থেকে শুরুতে বোলাররা সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে পেসাররা। আর তাই টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ পেসাররা তো কিছুই করতে পারেননি। উল্টো এলগার ও মার্করাম মিলে শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। যেন ‘ওয়ানডে’ খেলছেন। এলগার তো এ বছর প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে হাজার রান পূরণ করে ফেলেন। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে শুভাশীষ রায়ের করা মিডল স্ট্যাম্পের বলটি ড্রাইভ করে মিডঅন দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বছরের প্রথম হাজার রানের ব্যাটসম্যান হয়ে যান এলগার। তবে গতি আর বাউন্সের খেলাও চলে। কিন্তু কোন কাজে দেয় না। এলগার ও মার্করাম যে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। এলগার অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মার্করামের মাত্র পথ চলা শুরু। এলগার তাই মার্করাম থেকে এগিয়েই থাকেন। এলগার যে পথে হাঁটেন মার্করাম দেখাদেখি সেই পথেই হাঁটতে থাকেন। এলগার যেভাবে ধীরগতিতে, কখনও খারাপ বল পেলে বাউন্ডারি মারতে থাকেন। মার্করামও তাই করেন। দুইজন একটা সময় ২৫ ওভারে গিয়ে শতরানের জুটিও গড়ে ফেলেন। তখনই যেন আঁচ পাওয়া যায়। এই দুইজন আবারও বাংলাদেশের বারোটা বাজাতে যাচ্ছেন। প্রথম টেস্টে দুইজন মিলে ১৯৬ রানের জুটি গড়েছিলেন। এই জুটিতেই টেস্টের অবস্থা কি দাঁড়াতে যাচ্ছে যেন বোঝা হয়ে গিয়েছিল। ব্লুমফন্টেইনেও সেই পথেই এগিয়ে যেতে থাকেন এ দুই ব্যাটসম্যান। প্রথম সেশন যখন শেষ হয় তখন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে জমা থাকে ২৯ ওভারে ১২৬ রান। কি মারমুখী হয়ে খেলেছেন এলগার ও মার্করাম, তাতেই বোঝা যাচ্ছে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে ৮৮ বলে ৭২ রান করেন এলগার। আর মার্করাম ৮৬ বলে ৫৪ রান করেন। প্রথম টেস্টের মতো ঠিক একই চিত্র দেখা মিলে। দুইজন মিলে শতরানের জুটি গড়েন। কোন উইকেট যায়নি প্রথম সেশনে। উইকেট অনুযায়ী বল করতে পারেননি বাংলাদেশ বোলাররা। তাতে করে বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসেন এলগার ও মার্করাম। দ্বিতীয় সেশনেও একই অবস্থা চলতে থাকে। ৩৪ ওভারে গিয়ে দুইজন মিলে ১৫০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এমন অবস্থা হয় একটা সময় গিয়ে কে, কার আগে সেঞ্চুরি করবেন; যেন সেই প্রতিযোগিতায় নামেন। দুইজনের রানই কাছাকাছি থাকে। শেষ পর্যন্ত এলগারই আগে সেঞ্চুরি করেন। ৪১তম ওভারে তাইজুলের করা চতুর্থ ও পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করেন এলগার। ১১৬ বলেই সেঞ্চুরির দেখা পান। কিছুক্ষণ পরই ২০০ রানের জুটি গড়া হয়ে যায়। মার্করামও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে ফেলেন। ১৪১ বলে সেঞ্চুরি করেন মার্করাম। এক ইনিংসে প্রথম দুই ব্যাটসম্যানই যদি সেঞ্চুরি করে ফেলেন, তাহলে সেই ম্যাচে আর কতটা ভাল করা সম্ভব? তারপরও চেষ্টার কোন কমতি থাকেনি। বোলাররা ধৈর্য হারা না হয়ে একটি উইকেটের জন্য চেষ্টা করেই যেতে থাকেন। প্রথম টেস্টে শুরুতেই ক্যাচ মিস হয়। এবার দুই ওপেনার মিলে যেন কোন সুযোগই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে সুযোগ মিলে। কিন্তু ততক্ষণে ২২৫ রানের জুটি হয়ে যায়। মুস্তাফিজের বলে ১১০ রানে থাকা এলগারের ক্যাচটি ধরতে পারেননি উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাশ। লাফিয়ে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হাতে জমা পড়েনি। তবে খুব বেশিক্ষণ উইকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি। শুভাশীষ রায়ের বলে ১১৩ রানে থাকা এলগার পুল শট খেলেন। কিন্তু শটটি ব্যাটে ঠিকমতো লাগেনি। ফাইন লেগে থাকা মুস্তাফিজ এগিয়ে এসে ক্যাচটি ধরেন। অবশেষে একটি উইকেট পড়ে। ২৪৩ রানে গিয়ে প্রথম জুটি ভাঙ্গে। কিন্তু ততক্ষণে বিশাল রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়ে যায়। এলগার যখন আউট হন তখন মার্করামের স্কোরবোর্ডে ১২২ রান জমা থাকে। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই একটি উইকেট শিকার করা যায়। এলগার ও মার্করামের জুটিও ভেঙ্গে যায়। দ্বিতীয় সেশনের পর ১৪৩ রানে থাকা মার্করামকে বোল্ড করে দেন রুবেল হোসেন। দুইজনই শেষ পর্যন্ত প্রথমদিনেই আউট হন। কিন্তু এই জুটিই যেন বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দেয়।
×