ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বছর পূর্তি আজ

মির্জাপুরে মা ও তিন মেয়ে পুড়িয়ে হত্যার বিচার থেমে আছে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ অক্টোবর ২০১৭

মির্জাপুরে মা ও তিন মেয়ে পুড়িয়ে হত্যার বিচার থেমে আছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, ৬ অক্টোবর ॥ মির্জাপুরে ঘরের ভেতর পেট্রোল ঢেলে মা ও তিন মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার কাজ থেমে গেছে। জামিনে বেরিয়ে কতিপয় আসামি উচ্চ আদালতে আপীল করলে আদালতের স্থগিতাদেশে মামলাটির বিচার কাজ থেমে যায় বলে মামলার বাদী মোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন। এদিকে এই ঘটনার তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও বিচার শুরু না হওয়ায় মামলার বাদী ও নিহতদের পরিবারে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় উপজেলার সোহাগপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মজিবর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম ও তিন মেয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী মনিরা আক্তার (১৪) বাক প্রতিবন্ধী মীম (১১) ও নার্সারির ছাত্রী মলিকে (৭) ২০১৪ সালের ৭ অক্টোবর ঈদ-উল-আযহার রাতে ঘরে পেট্রোল ঢেলে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করে একই গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা। ঘাতক জাহাঙ্গীর ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে স্থানীয় মাছরাঙা ফিলিং স্টেশন থেকে ৩০ লিটার পেট্রোল কিনে আনে। ঘটনার পরদিন হাসনা বেগমের ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন জাহাঙ্গীরকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নামে মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শ্যামল দত্ত তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীর ও তার চাচাত ভাই নূর মোহাম্মদ নিপু এবং ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজারসহ চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বাদী নারাজি দিলে কোর্ট মামলাটি সিআইডিতে প্রেরণ করেন। সিআইডি তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনে ৬ আসামির সঙ্গে আরও দুই আসামির নাম যুক্ত করা হয়। এদিকে মামলার আসামি নূর মোহাম্মদ নিপু কোর্টে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। এতে হারুন অর রশিদ নামে একজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সে জবানবন্দীতে জানিয়েছে। সিআইডির প্রতিবেদনে হারুন অর রশিদের নাম ছিল না। পরবর্তীতে কোর্ট ২০১৬ সালের ১৬ জুন চার্জ গঠনের মাধ্যমে হারুন অর রশিদকে মামলায় অভিযুক্ত করে বিচার কাজের জন্য সাক্ষী গ্রহণের আদেশ দেন। মামলাটি টাঙ্গাইল জজকোর্টের বিচারক মুনসুর আহম্মেদের আদালতে বিচারাধীন আছে। কিন্তু এই আদেশের বিরুদ্ধে হারুনসহ কতিপয় আসামি হাইকোর্টে আপীল করলে আদালত মামলাটির ওপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এতে এই আলোচিত মামলাটির বিচার কাজ থেমে যায়। প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর জেলহাজতে থাকলেও অন্য সব আসামি জামিনে বেরিয়ে এসেছে। বাদী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, দেশে অনেক ছোট ঘটনার বিচার হচ্ছে। কিন্তু এত বড় মর্মান্তিক ঘটনার বিচার কাজ স্থগিত হয় কিভাবে ? তিন বছর হয়ে গেল সাক্ষীই হলো না। আমরা বার বার সাক্ষী নিয়ে যাই কিন্তু সাক্ষী হয় না। তিনি বলেন, এক আসামি বাদে সব আসামি জামিনে বেরিয়ে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এত বড় একটি মামলা কতিপয় আসামির আপীলে বিচার কাজ স্থগিত হয়ে যাবে ভাবতে অবাক লাগছে। আমরা কি তাহলে বিচার পাব না? এই হৃদয়বিদারক মামলাটির বিচার কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান বাদী মোফাজ্জল হোসেন। মামলার আইনজীবী টাঙ্গাইল জজকোর্টের সহকারী পিপি এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মা ও তিন মেয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় দেশবাসী স্তম্ভিত হয়েছিল। মামলাটিতে বারবার সাক্ষীর তারিখ পড়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষী হচ্ছে না। এত বড় একটি মামলার বিচার কাজ যদি থেমে থাকে তাহলে আইনের প্রতি বিচার প্রার্থী বিশ্বাস হারাতে পারেন। মামলাটির বিচার কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
×