স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে একযোগে সরকারী-বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হয়। এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৩ হাজার। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় মোবাইল, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, ব্লুটুথ ডিভাইসসহ সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিক্স উপকরণ নিষিদ্ধ ছিল। সুষ্ঠু ও সৃশৃঙ্খল পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা নিয়ে কোন অভিযোগ উঠেনি। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়েও শিক্ষার্থীদের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে মেডিক্যাল ভর্র্তি পরীক্ষা পরিদর্শনে যান। তবে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ব্যাঘাত হবে বলে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কলা ভবনের মূল ফটকে মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, এক মিনিটের জন্যও যদি আমি পরীক্ষার হলে প্রবেশ করি, তাহলে আপনারাও (সাংবাদিকরা) আমার সঙ্গে প্রবেশ করবেন। এতে পরীক্ষার্থীদের ‘ডিস্টার্ব’ হবে। পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি সেকেন্ডই অনেক মূল্যবান। তিনি বলেন, পরীক্ষা অত্যন্ত সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জালিয়াতি ঠেকাতে তিন দিন আগে থেকেই কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ সময়ে স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পরে কলা ভবনের প্রধান ফটকে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অভিভাবকরা নিজেদের বিভিন্ন দাবির কথা মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। অভিভাবকদের একজন বলেন, সরকারী মেডিক্যালে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে আমরা ছেলেমেয়েদের প্রাইভেটে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি। সরকারী মেডিক্যালের আসন সংখ্যা বাড়ানো হলে আমাদের প্রাইভেটে যাওয়া লাগত না। টাকা-পয়সার খরচও কমত। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন জবাব দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
একজন অভিভাবক প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো ও মেধাবীদের জন্য সুযোগ অবারিত রাখার দাবি জানালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ভর্তি প্রক্রিয়াকে মেধাবীদের উপযোগী করে গড়ে তুলছি। আমরা কোচিং বন্ধ করে দিয়েছি। তবুও কিছু অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অসদুপায় অবলম্বনকারীদের ‘ধরছে’ মন্তব্য করে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। নাসিম বলেন, যারা মেধাবী তারা যাতে চিকিৎসক হতে পারে, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের প্রশ্নই আসে না। যারা প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ায় তারা পরীক্ষার্থীদের শত্রু। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ ২০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা দেখভাল করছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই এ পরীক্ষার ফল দেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সারা দেশের ২০টি কেন্দ্রে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ৫টি কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের ১৫টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৮২ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্য বিবেচিত ৯ হাজার ৩৪৩ জন দেশের সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন। এর মধ্যে ৩১টি সরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন ৩ হাজার ৩১৮ জন এবং বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন ৬ হাজার ২৫ জন।
পরীক্ষার পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র তৈরি এবং সেগুলো পরীক্ষা সেন্টারে পাঠানোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, সুষ্ঠু ও সৃশৃঙ্খল পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোন সুযোগ নেই।