ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেলে ঢাকার দূরত্ব ও সময় কমবে

অবশেষে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৭ অক্টোবর ২০১৭

অবশেষে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রতীক্ষার বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ (মিশ্র গেজ) রেলপথ নির্মাণের অর্থের সংস্থান হয়েছে। এই প্রকল্পে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঢাকায় বাংলাদেশের যোগাযোগ ও বিদ্যুত খাতের ১৭টি প্রকল্পে ৪শ’ ৫০ কোটি ডলার (প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা) ঋণ সহয়তার চুক্তি করেছেন। এর মধ্যে বগুড়া- সিরাজগঞ্জ রেলপথ ও অন্যান্য অবকাঠামো আছে, যা নির্মাণে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা আছে ৫ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের জনসভায় এই রেলপথ নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেন। সূত্র জানায়, টাকার জোগাড় হওয়ায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আর বাধা নেই। শীঘ্রই প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় উপস্থাপিত হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে বিদ্যুত ও রেল যোগাযোগে সহায়তা দিতে লাইন অব ক্রেডিটের কথা বলেন। তারই আলোকে ভারতীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাংলাদেশে এসে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ প্রায় ৭৪ কিলোমিটার রেলপথসহ ১৭ প্রকল্প সহায়তার চুক্তি করেন। এই রেলপথের সঙ্গে নতুন কয়েকটি রেলওয়ে স্টেশন, আধুনিক সিগনাল, রেলসেতু, রেলক্রসিং নির্মিত হবে। বগুড়া রেল স্টেশনকে উন্নীত করে জংশন করা হতে পারে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে জরিপসহ ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ শেষ হয়েছে। ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয় ৫ হজার ৫শ’ কোটি টাকা। আগে এই প্রকল্পটিতে রেললাইন ছিল মিটার গেজ। বর্তমানে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ; দুই গেজই রেখে মিশ্র গেজ করা হয়েছে। এতে ব্যয়ের প্রাক্কলন কিছুটা বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যমুনায় বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণের সময়ই উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি গুরুত্ব পায়। পরে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়। তারপর প্রকল্পের ফাইলটি কখনও টেবিলে ওঠে কখনও ফিরে যায়। অর্থের সংস্থান না হওয়ায় এক পর্যায়ে ফাইলের ঠাঁই হয় হিমঘরে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোকে ঈশ্বরদী হয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছতে ৪শ’ থেকে ৫শ’ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়; যার ১শ’ ৩০ কিলোমিটারেরও বেশি ঘুরপথ। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ মনসুর আলী রেল স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন স্থাপিত হলে উত্তরবঙ্গের যে কোন জেলায় যেতে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই সাশ্রয় হবে। তখন ট্রেনে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘণ্টা। বর্তমানে ঈশ্বরদী হয়ে ঘুরপথে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। কখনও এর চেয়েও বেশি। বগুড়া থেকে ঢাকা সড়কপথে পৌঁছতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা; এই সময় মহসড়কে ট্রাফিক জ্যাম না থাকলে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেলপথ নির্মাণের বিষয়টি বিশ বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন স্থাপনের বিষয়টি দাতা সংস্থাকে জানানো হয়। এডিবি অর্থায়নে রাজি হয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। বগুড়া থেকে শাজাহানপুর শেরপুর হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের জরিপ শুরু হয়। রেলপথ নির্মাণে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত পুরনো কাঁচা সড়কটি আমলে নেয়া হয়। সিরাজগঞ্জের জেলা পরিষদের তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সড়কটির সন্ধান দিয়ে সরকারকে জানান। প্রকল্পের সারপত্র তৈরি হয়। পরে সকল প্রকল্পই ভেস্তে যায়। ২ হাজার ১১ সালের ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া-সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেললাইন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তারপর ২ হাজার ১৫ সালের ১২ নবেম্বর বগুড়ায় আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর ফাইল নড়েচড়ে ওঠে। ওই সময় বৈদেশিক অর্থ সহযোগিতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সবশেষ খবর হলো: এই প্রকল্পে অর্থের জোগাড় হয়েছে। ভারতীয় ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
×