ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেখার কেউ নেই

বদরগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে ৫৮ ইটভাঁটি

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৭ অক্টোবর ২০১৭

বদরগঞ্জে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে ৫৮ ইটভাঁটি

সংবাদদাতা, বদরগঞ্জ, রংপুর, ৬ অক্টোবর ॥ বদরগঞ্জে কৃষি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাঁটি গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে। গত বছরগুলোতে গড়ে উঠা ৪৩ ভাঁটির পাশাপাশি নতুন করে ১৫ ইটভাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইট প্রস্তুত করতে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমির উপরিভাগ কেটে নিয়ে মাটি মজুদ করছে ভাঁটি মালিকরা। আর এ মাটি সংগ্রহ করতে ৩শ’ ট্রাক্টর প্রতিদিনই তছনছ করছে উপজেলার রাস্তাঘাট। এ কারণে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। এত কিছুর পরও এসব দেখেও না দেখার ভান করছে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে ইটভাঁটি মলিকরা বিভিন্ন দফতরে উৎকোচ দিয়ে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই একের পর এক কৃষি ও বসতবাড়ির পাশে ইটভাঁটি স্থাপন করছে। সূত্রমতে এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নে বিগত বছরগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে ৪৩ ইটভাঁটি। মধুপুর ইউনিয়নে ২০, রামনাথপুরে ৯, দামোদুরপুরে ৬, কুতুবপুরে ২, কালুপাড়ায় ৩, বিষ্ণুপুরে ১, গোপালপুরে ১ ও রাধানগর ইউনিয়নে একটি ইটভাঁটি রয়েছে। এবারে নতুন করে মধুপুর ইউনিয়নে ৪, রামনাথপুরে ৪, কুতুপুরপুরে ২, বিষ্ণুপুরে ২, রাধানগরে ১, কালুপাড়ায় ১, দামোদুরপুরে একটি ইটভাঁটি স্থাপনের কাজ চলছে। আর এসব ভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে ও কৃষি জমিতে। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী কৃষি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বনভূমি, অভয়ারণ্য, জনবসতিপূর্ণ ও আবাসিক এলাকায় ইটভাঁটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ রাস্তা ব্যবহার করে ভারি যানবাহন দিয়ে ইট বা ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করা নিষিদ্ধ রয়েছে। এছাড়া ইটভাঁটি তৈরি করতে হলে জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিতে হবে। কিন্তু এ সবের কোন কিছুই মানছেন ভাঁটির মালিকরা। তারা একের পর এক কৃষি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে ইটভাঁটি নির্মাণ করছেন। একেকটি ইটভাঁটি ১০ থেকে ১৫ একর জমির উপর স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি মৌসুমে একটি ইটভাঁটির ইট প্রস্তুত করতে ২৫ থেকে ৩০ একর জমির উপরিভাগ কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি হারাছে। অন্যদিকে খাদ্য ঘাটতি ও পরিবেশ বিনষ্টের আশঙ্কা করছে কৃষি সংশিষ্টরা। ইট ভাঁটির মাটির যোগান দিতে প্রায় তিন শতাধিক ট্রাক্টর প্রতিদিনেই গ্রামীণ রাস্তাঘাট তছনছ করছে। এত কিছুর পরও দেখেও না দেখার ভান করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে উপজেলার ঘাটাবিল শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ঘাটাবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘেঁষে ১০ বছর আগে আরবিবিসহ তিন ইটভাঁটি স্থাপন করেছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান আলী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে ওই ভাঁটিগুলো চালাচ্ছেন। সেখানে ভাঁটির মৌসুম শুরু হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। এরপরও ওই শিক্ষক পরিবেশ অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরে ঘুষ দিয়ে ভাঁটিগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। শাহাজাহান আলীর মতো অন্যরাও বিদ্যালয় ঘেঁষে অথবা কৃষি জমিতে ইটভাঁটি স্থাপন করেছেন।
×