ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেলফির বলি

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ৭ অক্টোবর ২০১৭

সেলফির বলি

প্রযুক্তির নতুন নতুন সব উদ্ভাবন মানুষের প্রয়োজন মিটিয়েছে, সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আবার একই প্রযুক্তির অপব্যবহার মানুষের জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছে, সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট ছাড়া একদিন অতিবাহিত করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ মাত্র দশ বছর আগেও এটি আমাদের এখানে জীবন যাত্রার নাগালে ছিল না। এখন ইন্টারনেট সেক্টরেই হাজার হাজার কর্মহীন মানুষ তাদের কর্মসংস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় তথ্যপ্রাপ্তি ও জ্ঞান আহরণে সহজতা ও গতি এসেছে। আবার এটি অনেকের জন্যেই সর্বনাশা আসক্তির কারণ হয়েছে। যেমন ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা অনেক, এটি অফুরন্ত অবসর সময়ের অধিকারী লোকদের জন্য সময় কাটানোর বিরাট এক পন্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অথচ বহু শিক্ষার্থী ও কর্মপ্রাণ মানুষের মূল্যবান সময় অহেতুক বিনষ্ট করছে এই ফেসবুক। বলাবাহুল্য, এখানে ফেসবুক মাধ্যমটির কোন অপরাধ নেই। সব দোষ মানুষের ক্ষতিকর আসক্তির। আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবেই এটা হচ্ছে। একইভাবে মোবাইল ফোন এদেশে চালু হয়েছে কুড়ি বছর হবে। এখন এটি দেশের প্রত্যেক মানুষ না হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তির হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। দেশে এখন মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ১২ কোটি ৪৭ লাখ। অল্প খরচে দূর-দূরান্তে অবস্থানকারী নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসার গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। মোবাইলে ইন্টারনেট বা ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ভীষণভাবে বেড়েছে। বেশ ক’বছর হলো দেশে মোবাইল ফোনে নিজেই নিজের ছবি তোলার চল গড়ে উঠেছে। এর নাম হয়েছে সেলফি। শুধু অল্পবয়সীরাই নয়, বয়সী মানুষও এখন সেলফি-সংস্কৃতির শিকার। মানুষ আত্মপ্রেমের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে সেলফি তুলে। এই আদিখ্যেতা মানুষকে ভুলিয়ে দিচ্ছে স্থানকালপাত্র জ্ঞান। তাই ক’দিন পরপরই সেলফি তুলতে গিয়ে জীবননাশের খবর সংবাদপত্রের জায়গা করে নিচ্ছে। কিছুদিন আগে জনকণ্ঠের শেষ পাতায় ছাপা হয়েছে এমনই এক মর্মস্পর্শী দুঃসংবাদ। সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় কলেজছাত্র মৃত্যুবরণ করেছে। ছাত্রটির মৃত্যুর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করব, কিন্তু পাশাপাশি দুঃখ করে একথাও বলতে হবে যে, কতখানি কা-জ্ঞানবর্জিত হলে একজন শিক্ষিত তরুণ এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেলফি তোলার পরিকল্পনা করতে পারে! এটি কি বাহাদুরি প্রদর্শনের বাতিক? নাকি সেলফি সংস্কৃতিতে অভিনবত্ব আনার ভয়ঙ্কর প্রয়াস! এভাবে আর কত মানুষ সেলফির বলি হবে? এমন ভয়ঙ্কর শখে অবশ্যই লাগাম টানতে হবে। কানে হেডফোন নিয়ে পথ চলা এখন যেন ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে। যিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন তার মনোযোগ কি থাকে সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন গতির যানের দিকে? এতে তার ঝুঁকিই বাড়ে। রেললাইনে সেলফি তুলতে গিয়ে যে তরুণের দুঃখজনক মৃত্যু হলো তাকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী চিৎকার করে সাবধান করে দিচ্ছিলেন এই বলে যে বিপরীত দিক থেকেও আরেকটি ট্রেন আসছে। কিন্তু কানে হেডফোন লাগানো থাকলে কী করে তার কানে পৌঁছুবে সেই সাবধানবাণী! এমন অপমৃত্যু, তথা জীবনের মর্মান্তিক পরিণতি থেকে মানুষ যদি শিক্ষা না নেয় তাহলে কিভাবে তাদের বাঁচানো সম্ভব? আমরা আশা করব পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এ ব্যাপারে সচেতন করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে সতর্ক ও সচেতন করার।
×