ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নে ঋণ সহায়তা

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ৭ অক্টোবর ২০১৭

উন্নয়নে ঋণ সহায়তা

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে যদি সে ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহজ শর্ত আরোপিত হয়। বুধবার ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ ঋণচুক্তি সই হয়েছে, এটিকে বিশেষ অর্থবহ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর একটি কারণ এটি ভারতের সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা। অর্থাৎ কোন দেশকে দেয়া ভারতের সর্বোচ্চ মাত্রার ঋণ। এর পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে বিদ্যুত, রেল, সড়ক, জাহাজ চলাচল, বন্দরসহ অবকাঠামো খাতের ১৭ অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, এই ঋণ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সুসম্পর্কের বহির্প্রকাশ। প্রথম দুটি এলওসির (লাইন অব ক্রেডিট) মতো এবারও এই ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ আগামী ২০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। এই চুক্তি বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি দু’দেশের অর্থনীতি আরও সমন্বিত করবে বলে আশা করা যায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও ভারত। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ ভারতের সঙ্গেই হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। দরকার শুধু সদিচ্ছা ও সমতাভিত্তিক বাণিজ্যনীতি। বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের ওপর শুল্ক বাধা কমিয়ে আনার মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। নতুন সম্ভাবনার কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের ঘোষণা দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় অর্থমন্ত্রীর এবারের সফরে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি করা হলো। এর আগে ২০১০ সালে প্রথম লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাংলাদেশকে এক শ’ কোটি ডলার ঋণ দেয় ভারত। ওই ঋণের আওতায় নেয়া ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ১২টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় এলওসির আওতায় ভারতের সঙ্গে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে, এটা নিশ্চিতরূপেই বলা যায়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনৈতিক কর্মকা- গ্রুত সম্প্রসারণ হওয়ার সুযোগও তৈরি হবে এতে। ব্যাপক শিল্পায়ন হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান এবং রফতানি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। আর তাই এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা চাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক একজন গবর্নর ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের অর্ধেক অনুদানে রূপান্তরের কথা বলেছেন। ভারত এটি বিবেচনা করলে তা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য যে অত্যন্ত ইতিবাচক হবে সেকথা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সাধারণ নাগরিকমাত্রই অনুধাবন করতে পারছেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন স্বর্ণযুগে অবস্থান করছে। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় তারা বাংলাদেশের পাশে ছিল। আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে প্রতিবেশী মিত্র রাষ্ট্রের পাশে থাকাটা প্রত্যাশিত।
×