ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল

স্বস্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ২১৫ কর্মচারী

প্রকাশিত: ০৩:১৯, ৭ অক্টোবর ২০১৭

স্বস্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ২১৫ কর্মচারী

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ অবশেষে দীর্ঘ ২০ মাস পর স্বস্তি ফিরে এসেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত ২১৫ কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে। কর্মচারীদের পক্ষে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আপীল খারিজ করে দিয়েছে আপীল বিভাগ। ফলে আইনের শাসনের সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আনন্দিত ২১৫ কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সহস্রাধিক সদস্য। বুধবার (৪ অক্টোবর) ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়ার নেতৃত্বে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসাইন, বিচারপতি মাহমুদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফিরোজ সিদ্দিকুর ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার গঠিত আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের আপীল খারিজ করে দিয়েছে (সিভিল পিটিশন নং ২৪৫৮/২০১৭), যা ওই দিনই (৪ অক্টোবর) দুপুর বারোটায় বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্টের ৮নং বেঞ্চের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও জেএন দেব চৌধুরীর ঘোষিত কর্মচারীদের পক্ষের রায়টি (পিটিশন নং ১৩৬৩/২০১৬) বহাল রয়েছে। মামলায় কর্মচারীদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাডভোকেট মাহাবুব আলী ও রাষ্ট্রপক্ষের ছিলেন এ্যাডভোকেট হরিদাস পাল। এদিকে বুধবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে এমন আদেশ প্রকাশিত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। অনেকে হাসপাতালে এসে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সূত্রমতে, মামলার জটিলতার কারণে গত ২০ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন ওই সব (২১৫ জন) কর্মচারী। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ থেকে ১২ ডিসেম্বর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (স্বাপকম/প্রশা-১/এডি/১সি-১৩/২০১১/৭৯২ তারিখ ২৭/০৪/১৫ ইং ও স্বাপকম/প্রশা-১/এডি/১সি-১৩/২০১১/১৮৬৬ তারিখ ১২/১১/১৫ ইং স্মারকের আদেশ অনুযায়ী) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর বিভিন্ন পদে ২১৫ জন কর্মচারী যোগদান করেন। দীর্ঘদিন শূন্য থাকা শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী পদে নতুন কর্মচারী যোগদান করায় হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ঠিক সেই মুহূর্তে ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পার-২-এর উপ-সচিব স্বাক্ষরিত ৪৫.১৪৩.০২৭.০০.০০১.২০৫-৬০ নং স্মারকের আদেশে যোগদানকৃত কর্মচারীদের কার্যক্রম ও বেতন-ভাতা না প্রদানের স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়। সে প্রেক্ষিতে কর্মচারীরা ওই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হুসাইন ও বিচারপতি একেএম শহিদুল হকের বেঞ্চে রিট দাখিল করেন। উচ্চ আদালত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পার-২-এর উপ-সচিবের আদেশটি স্থগিতসহ কর্মচারীদের কাজে যোগদান ও বেতন-ভাতা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনজীবী হরিদাস পাল ওই আদেশটি বাতিল চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আপীল করলে আদালত হাইকোর্টের ৮নং বেঞ্চে শুনানির জন্য প্রেরণ করে। সেখানে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট ফের কর্মচারীদের পক্ষে রায় প্রদান করা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ফের সরকার আপীল করলে তাও বুধবার (৪ অক্টোবর) খারিজ করে দেয়া হয়। কর্মচারীদের পক্ষের মামলার বাদী সৈয়দ মোঃ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এর রায়ে আমরা মহাখুশি। এখন দ্রুততার সঙ্গে আমরা কাজে যোগদান করে যাতে বেতন-ভাতা পেতে পারি সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে জোর দাবি করছি। এ বিষয়ে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডাঃ মোঃ আব্দুল কাদির বলেন, যেহেতু কর্মচারীদের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়, সেহেতু উচ্চ আদালতের নিদের্শ মোতাবেক আমাকে মন্ত্রণালয় থেকে মতামত প্রেরণ করবে। তিনি আরও বলেন, এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সঙ্কট রয়েছে। এতে সেবার মান বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। কমসংখ্যক জনবল নিয়ে আমাকে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরীভিত্তিতে জনবল প্রয়োজন।
×