ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ফসলি জমি

ভার্মি কম্পোস্ট

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ৭ অক্টোবর ২০১৭

ভার্মি কম্পোস্ট

এবার ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার আধুনিক কৃষিসমৃদ্ধ শেরপুর অঞ্চলে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। অধিক ফলপ্রসূ হওয়ায় এ সারের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগে ব্যয় কমে বেড়েছে আয়, দিন দিন উৎপাদন ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে ফসলি জমি। ফলে এক দিকে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে কৃষি জমি। শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক লাঙ্গল নামে খ্যাত কেঁচো দিয়ে উৎপাদিত ওই জৈব সার প্রয়োগের ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে মাতৃকেঁচো ও রিং বা পাত্র কেনা ছাড়া নেই বাড়তি কোন খরচ। রাসায়নিক সারের চেয়ে ওই সার সব দিকেই লাভজনক। বিশেষ করে সবজি চাষে ভার্মি কম্পোস্ট জাদুর মতো কাজ করে আসছে। এমন চিত্রই মিলছে নকলা এলাকায়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, ভার্মি কম্পোস্টের সফলতা দেখে ওই এলাকায় আগামীতে ওই সারের প্রতি কৃষকরা হুমড়ি খেয়ে পড়বেন। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি বছর বিদেশ থেকে বিভিন্ন সার আমদানি করতে হয়। আমদানিকৃত সার প্রয়োগে টাকা এবং জমির উৎপাদন ক্ষমতা উভয়ই নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোন এক সময় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো অসাধ্য হয়ে উঠবে। এমন ক্ষতিকর সম্ভাবনার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে কৃষি দফতরের সময়োপযোগী পদক্ষেপের একটি অংশ হলো ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন। কৃষি গবেষকরা বলছেন, ওই সার প্রয়োগে জমির উৎপাদন ক্ষমতা না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। তারা জানান, ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগের ফলে কৃষকরা বিষমুক্ত শাক সবজি বা যে কোন ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। তাদের উৎপাদিত কেঁচো সার নিজেরা ব্যবহারের পর অবশিষ্ট সার অন্যের কাছে বিক্রি করলে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার কিনে আনতে হবে না। সার আমদানির কোটি কোটি টাকা বেঁচে যাবে। তাতে কমবে উৎপাদন খরচ, বাড়বে আয়। মাঠ পর্যায়ের সব কৃষকদের মাঝে ওই সারের ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নকলা উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। সরেজমিন গেলে কথা হয় নকলার বাছুরআলগা গ্রামের কৃষক জান্নাতুল ইসলাম বাদলের সঙ্গে। ওই এলাকায় প্রথম ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারী বাদল জানান, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ হর্টিকালচার সেন্টার হতে ভার্মি কম্পোস্টের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। সেখান হতে প্রাপ্ত বিনামূল্যের আধা কেজি কেঁচো ও প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার টাকা কেজি হিসেবে কয়েক কেজি কেঁচো ও ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি হিসেবে ১৩-১৪ হাজার টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ৬টি রিংয়ের মাধ্যমে ওই সার ও কেঁচো উৎপাদন করছেন। একটি রিং বা চাড়িতে আধা কেজি কেঁচো দিয়ে ২ মাস পর পর ২০ কেজি সার ও আধা কেজি নতুন কেঁচো উৎপাদন করা যায়। তাতে একটি মাত্র রিং দিয়ে বছরে কেঁচো হতে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা এবং সার বাবদ ১৪ শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা আয় করা যায়। সেই হিসাব অনুযায়ী, কোন কৃষকের ২০টি রিং থাকলে গড়ে তার মাসিক আয় হবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। কৃষ্ণপুরের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, ৩শ’ টাকা দিয়ে ১টি রিং, ১৫শ’ টাকা দিয়ে আধা কেজি কেঁচো, কলাগাছের কুচি ও সামান্য শুকনা গোবর ব্যবহার করে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। ২ মাসেই খরচের টাকা তুলে ফেলেছেন। এখন প্রতি দুই মাস অন্তর আধা কেজি কেঁচো ও ২০ কেজি করে সার উৎপাদন হচ্ছে। কেঁচো বিক্রি করেন আর সার নিজের ফসলি ক্ষেতে প্রয়োগ করেন। অন্য কৃষকের ফসলি ক্ষেতের চেয়ে রশিদের ক্ষেতের চিত্র অনেক ভাল। অনেকেই সার কিনে নিতে আগ্রহ দেখালেও রশিদ আপাতত বিক্রি করছেন না। তবে বাছুরআলগার বাদল বেশ কয়েকটি রিং দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করায় তিনি কেঁচো ও সার উভয় বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় উপজেলায় মডেলে পরিণত হয়েছেন। এ জন্য তার উৎপাদন ও সফলতা দেখে কৃষ্ণপুরের আকাব্বর আলী, হারুন মিয়া, রইস উদ্দিন, আবু সালেহ, গনপদ্দির সামছুল হক ও আশরাফ আলী, বানেশ্বর্দীর উজ্জল ও লুৎফর, ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষি পণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার ২৫ সদস্য, কায়দার আফরীন আন্না ও হাসি, ধুকুড়িয়ার রহুল আমীন, নজরুল ও হাসেমসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা ফোন বা সরাসরি গিয়ে কেঁচো ক্রয়ের জন্য আগাম অর্থ দিচ্ছেন। কৃষক পরিবারে ওই সারের সুফলতা ছড়িয়ে দিতে স্থানীয় কৃষি অফিস বাদলের কাছ থেকে কেঁচো কিনে নিয়ে পার্শ্ববর্তী গনপদ্দী, চন্দ্রকোনা, টালকী, হুজুরিকান্দা ও কুর্শা বাদাগৈড় এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভার্মি কম্পোস্টের প্রদর্শনী স্থাপন করেছেন। আশাতীত সফলতা দেখা দেওয়ায় ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, ওই সার উৎপাদনে তেমন কোন ব্যয় হয় না, লাগে না বেশি জায়গা, দিতে হয় না বাড়তি শ্রম। তাই যে কেউ চাইলে নিজের বাড়িকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর থেকে
×