ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পী-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

খুলনার আড্ডা বাড়ি

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ৭ অক্টোবর ২০১৭

খুলনার আড্ডা বাড়ি

টিনের চালার গোলাকৃতি ছোট্ট একটি ঘর। ঘরটির বেড়া ও দরজা লোহার রডের তৈরি গ্রিল আকৃতির। সেখানে রয়েছে একটি টেবিল, কয়েকটি চেয়ার ও একটি আলমারী। আছে একাধিক বাদ্যযন্ত্র। এখানে নিয়মিত শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকদের মিলন মেলা বসে। সঙ্গীত চর্চা করেন যারা তারা গান শুনান। আবার কবি-সাহিত্যিকরা স্বরচিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ পাঠ করেন। আলোচনা পর্যালোচনাও হয়। খোস গল্পও চলে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, প্রকাশনা অনুষ্ঠান প্রভৃতি পালন করা হয় গোলাকার ছোট এই ঘরটিকে ঘিরে। দিন দিন এর ব্যাপ্তি বেড়ে চলেছে। এর নাম হচ্ছে ‘আড্ডা বাড়ি’। খুলনা মহানগরীর শান্তিধাম মোড় এলাকার জাতিসংঘ শিশু পার্কের দক্ষিণ পাশে এটি অবস্থিত। পার্কের মধ্য দিয়েই আড্ডা বাড়িতে যেতে হয়। এক বছর চার মাস আগে এর যাত্রা শুরু। ইতোমধ্যে এই আড্ডা বাড়ি শুধু শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকদের কাছেই নয়, খুলনার বিভন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। জাতিসংঘ শিশু পার্ক পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সহযোগিতায় এবং খুলনা সদর আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিছুর রহমান বিশ্বাসের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৬ সালের ৫ জুন পার্কের দক্ষিণ দিকে এই টিনের গোলাকৃতির ঘরটি কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীদের বসা ও আড্ডার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চেয়ার-টেবিল, ফ্যানসহ অনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘ পার্ক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি এসএম জাকির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা। শুরুর পর থেকেই আড্ডা বাড়ি জমজমাট হয়ে উঠছে। যে যখন সময় পাচ্ছেন এখানে আসছেন। আড্ডায় অংশ নিচ্ছেন। আবার চলে যাচ্ছেন। সকাল থেকে আড্ডা বাড়িতে আসা-যাওয়া চললেও মূলত অড্ডাটা বেশি করে জমে সন্ধ্যার পর থেকে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। নবীন-প্রবীণ কবিদের স্বরচিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ পাঠ এবং সঙ্গীত শিল্পীদের গানে মুখরিত হয়ে ওঠে আড্ডাবাড়ির আসর। কোন অনুষ্ঠান হলে লোক সমাগম বেশি হয়। তখন আড্ডা বাড়ি লাগোয়া পার্কের অংশ ব্যবহার করতে হয়। এদিকে আড্ডা বাড়ি চালুর পর পার্কের পরিবেশও বদলে গেছে। আড্ডা বাড়ির অন্যতম সংগঠক খুলনা রাইটার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা কবি সাহিত্যিক ডিকে ম-ল বলেন, এক বছর আগেও স্থানীয় কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীরা ছিলেন ভাসমান শেওলার মতো। তাদের বসার কোন জায়গা ছিল না। এখানে সেখানে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কথা আদান-প্রদান করতে হতো। অসহায় অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে সময় কাটাতে হতো। এখন ছোট পরিসরে হলেও শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকদের একটি বসার জায়গা হয়েছে। নিয়মিত এখানে আড্ডা বসে। সঙ্গীত পরিবেশন, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পাঠ ছাড়াও প্রকাশনা অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবসসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আড্ডা বাড়ির ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তা, খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিক, খুলনা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেছেন। আড্ডা বাড়িকে ঘিরে নতুন প্রজন্মের অনেকের কবি সাহিত্যিক, শিল্পী হওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবীন কবি সাহিত্যিকরা এখানে আসছেন। এটা সমাজের জন্য ভাল লক্ষণ। তিনি এই জায়গাটি বরাদ্দের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মিজানুর রহমানসহ যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সাবেক ছাত্র নেতা সমাজকর্মী মাহবুবুল আলম বুলবুল জানান, তিনি শিল্পী বা কবি-সাহিত্যিক নন। তবুও আড্ডা বাড়ির প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ রয়েছে। যখন সময় পান তখন তিনি এখানে চলে আসেন। পরিচিত-অপরিচিত কবি-সাহিত্যিক ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সময় কাটান। মনটা ভাল থাকে। তার মতে, ‘এখানে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা সকল সংকীর্ণতার উর্ধে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখেন। এখানে তরুণ লেখকরাও এসে পুরনোদের সঙ্গে একত্রে আলোচনায় অংশ নেন। এ ধারাটা অব্যাহত রাখা গেলে সমাজ উপকৃত হবে।’ আড্ডা বাড়ির সামনে পার্কের মধ্যে কথা হলো ব্যাংকার ইলিয়াস আলীর সঙ্গে। তিনি শিশু সন্তানকে নিয়ে এখানে প্রায়ই আসেন। তিনি জানান, আড্ডা বাড়ি চালুর আগে পার্কের পরিবেশটা ভাল ছিল না। সন্ধ্যার পরে এখনকার মতো আলো ঝলমলে পরিবেশ তখন দেখা যায়নি। আড্ডা বাড়ির দিকটাতে অন্ধকার ভুতুরে অবস্থা দেখা যেত। নেশাগ্রস্ত যুবকদের আনাগোনা ছিল। এখন সে অবস্থা বদলে গেছে। আড্ডা বাড়ির সঙ্গে পার্কের পরিবেশেরও যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। রাত ৯টা বা ১০ পর্যন্ত নির্বিঘেœ নারী-শিশুসহ সকলে এখানে ঘুরতে পারছেন, সময় কাটাতে পারছেন। তিনি এই পরিবেশ সৃষ্টির সঙ্গে জড়িতদের সাধুবাদ জানান। অমল সাহা, খুলনা থেকে
×