ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে আসুন কুমিল্লার প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলোতে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৬ অক্টোবর ২০১৭

ঘুরে আসুন কুমিল্লার প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলোতে

ইট পাথরের দেয়ালে ঘেরা আমাদের শহুরে জীবন। কর্মের অতিরিক্ত চাপে মনে বাসা বাঁধে বিষন্নতা। সেই বিষণ্ন তাকে দূর করতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। ভ্রমণ শরীর ও মনের ভাল রাখে। জাগতিক সব অসুখ দূর করতে ভ্রমণ অবশ্যই। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণ যদি হয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কেন্দ্রগুলোতে, তাইলে তো কথাই নেই। অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে ভরা আমাদের এই দেশ। আমরা আজ কুমিল্লার কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব। কুমিল্লা - কোটবাড়ি রোডে বার্ড এবং বি জি বি গেটের মাঝখানে রয়েছে তিনটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন - লতিকোট মুড়া, ইটাখোলা মুড়া ও রূপবান মুড়া। এছাড়া রয়েছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার। দৃষ্টিনন্দন এসব স্থাপত্যশৈলী দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নিয়মিত ভিড় জমান স্থানগুলোতে। ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার ;- প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের এক মহিমামন্ডিত নাম কুমিল্লার ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার বা শালবন বিহার। মাটি খুঁড়ে পাওয়া এসব প্রতœতত্ত্ব ভ্রমণপ্রিয়সীদের মনে দোলা দিয়ে যায়। তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের রেখে যাওয়া স্থাপত্যই আজ আমাদের পর্যটনের একটি বিরাট খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম কুমিল্লার বৌদ্ধ বিহার। পূর্বে এ প্রত্নতত্ত্বটি শালবন “রাজার বাড়ি” নামে পরিচিত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ উম্মোচিত হওয়ায় একে “শালবন বিহার” নামে আখ্যয়িত করা হয়। এর আসল নাম ছিল “ভবদেব মহাবিহার”। খ্রিস্টীয় সাত শতকের মধ্যভাগ হতে আট শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেব বংশের শাসকগণ এই অঞ্চল শাসন করেন। ওই বংশের চতুর্থ রাজা ভবদেব কর্তৃক এই মহাবিহার নির্মিত হয়। বর্গাকার বিহারটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৫৫০ ফুট। চার বাহুতে সর্বমোট ১১৫টি সন্ন্যাস কক্ষ, মধ্যভাগে একটি উন্নত বৌদ্ধ মন্দির এবং মূল মন্দিরের চারপাশে ছোট ছোট ১২টি মন্দির ও ৮টি স্তুপ উন্মেচিত হয়েছে। বিহারের মূল ফটকের পূর্বপাশে খননের ফলে একটি প্রাচীন কূপের কাঠামো উন্মেচিত হয়েছে। ধারণা করা হয় তৎকালীন বৌদ্ধ শাসকগোষ্ঠী এ কূপের পানি আহরণের মাধ্যমে যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করতেন। মন্দির ও মন্দিরের আশপাশে কয়েক দফা প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জের মূর্তি, নক্সাকৃত ইট ও মুদ্রাসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নতত্ত্ব পাওয়া গেছে। “খননের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ প্রত্নতত্ত্ব পাওয়া গেছে তা পার্শ্ববর্তী জাদুঘরে সঞ্চিত রয়েছে”।পুরো বিহারটিতে রয়েছে অসংখ্য ফুল গাছ। দেশী-বিদেশী ফুলের সৌন্দর্য, ভ্রমণপ্রিয়সী মানুষদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়। বিহারে প্রবেশ মূল্য : দেশী পর্যটকদের জন্য ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা। রূপবান মুড়া:- রূপবান মুড়া ময়নামতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতœস্থল। কুমিল্লার যতগুলো প্রতœতত্ত্ব রয়েছে তার মাঝে অন্যতম এটি। তবে লোকমুখে খুব একটা প্রচলন না থাকায় এ প্রতœতত্ত্বটির সন্ধান অনেক ভ্রমণপ্রিয়সী পর্যটকের কানে পৌঁছায়নি। কুমিল্লা-কালীর বাজার সড়কের দক্ষিণে বর্তমান বার্ড এ্যন্ড বি.জি.বি স্থাপনার মাঝখানে একটি টিলার ওপর এ মুড়া অবস্থিত। পাহাড়ে উঠার মতোই উঁচু পথ পাড়ি দিয়ে উঠতে হয় রূপবান মুড়াতে। লতিকোট মুড়া:- স্থানীয়ভাবে এই প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনাটি লতিকোট মুড়া নামে পরিচিত, কিন্তু খনেনর ফলে এখানে ৩৩টি ভিক্ষুকক্ষবিশিষ্ট ৪৭.২৪মি ঢ ৪৪.৮০ মি পরিমাপের একটি বৌদ্ধ বিহারের বীত নক্সা উন্মোচিত হয়। ফলে বর্তমানে লতিকোট বিহার নামে অবিহিত করা হয়। বিহারটিতে দুটি নির্মাণ যুগের প্রমাণ প্ওায়া গেছে। দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে পূর্ব বাহুর মাঝামাঝি স্থানে একটি ম-প নির্মাণ করা হয়। বিহার প্রবেশের প্রধান তোরণ উত্তর দিকে ছিল। এটিতে প্রবেশে কোন মূল্যেও প্রয়োজন হয় না। ইটাখোলা মুড়া:- কুমিল্লা জেলার আরেকটি দর্শনীয় স্থান ইটাখোলা মুড়া।এটি কুমল্লিা সদর হতে পশ্চিম দিকে ৮ কি:মি: দূরে কোটবাড়ি সড়কের ্ওপারে, রূপবান মুড়ার উল্টোদিকে অবস্থিত। অনেকেই মনে করেন এক সময় ওই স্থানটি ইট পোড়ানোর খনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর এজন্যই ওই স্থানটির নাম ইটা খোলা মুড়া করা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। কীভাবে যাবেন:- ঢাকার কমলাপুর থেকে প্রায় এক ঘন্টা পর-পর ছাড়ছে কুমিল্লার গাড়ি। নামতে হবে কোটবাড়ি চৌরাস্তায়। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোযোগে সোজা পৌঁছে যেতে পারেন রূপবান মুড়া, লতিকোট মুড়া, ইটাখোলা মুড়া এবং ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার। সি,এন,জি/অটো ভাড়া জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।
×