ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দিলরুবা আহমেদ

তিনজনের বাসাটা

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৬ অক্টোবর ২০১৭

তিনজনের বাসাটা

বাপী প্রায়ই চেয়ে থাকে। কি যে এত দেখে সৌম্য তা বুঝে উঠতে পারে না! ছোট বেলায় বাপী বলত, তুই এত সুন্দর কেন হয়েছিস রে! সেও হেসে বলতো, মাম গালে কিসি দিয়েছে তাই। মামই তাকে বলেছিল, আমি যত কিসি দেব তুই তত সুন্দর হবি। বাপী শুনে তখন হাসতো। বলতো, আমাকে দিতে বল তো তোর মা-কে, আমিও সুন্দর হই। মাম সঙ্গে সঙ্গে বলতো, বান্দর বুঝি কখনো সুন্দর হয়!! প্রথম দিনে, সেই কবে, সেও অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিল, বান্দর কি মাম। এখন জানে বান্দর হচ্ছে মাংকী। বানর। মাম প্রায়ই বাপীকে মাংকী ডাকতো। বাপী নাকি খুব গাছে উঠতো, কোন এক গাছের ওপর থেকে মামকে কলেজে যেতে দেখে ফেলেছিল। তারপর পিছে পিছে ঘোরাঘুরি শুরু“ করে দিয়েছিল। এত নাকি ঘুরেছে যে এখন আর ঘোরাঘুরিই অপছন্দ একজনের আরেকজনের পেছনে। কে বলেছিল ওদেরকে সে আসবার আগেই সব ঘুরাঘুরি শেষ করে ফেলতে। কত পছন্দ বেড়াতে যাওয়া। অথচ তিনজন একসঙ্গে যাওয়া বুঝি আর হবে না কখনও। ওরা আলাদা থাকছে, বলেছে এভাবেই থাকবে আর সে বলের মতন এ বাড়ি ওবাড়ি করবে। বারী খাবে। খাবি খাবে। হাবুডুবু খাবে। কথাগুলো নানির। সে বুঝে না পানি নেই অথচ সে কিভাবে হাবুডুব খাবে! নানির অনেক কথাই সে বুঝে না। আগে আরও বুঝতো না। মামকে তো নানি প্রায়ই বলে,‘ঐ বান্দরের ছেলে আরেক বান্দরই হবে, নিজের ভাবিষ্যত ভাব, দেখ মকিদ এত ভাল একটা ছেলে, তাকে নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা বাড়া। একা তো আর সারা জীবন থাকা যাবে না।’ সে আছে তারপরও বলে মাম নাকি একা। নানি-টা যে কী! এত আদর করে তাকে তারপরও মাঝে মাঝে বলে, ‘ এ ও কি আর আপন হবে। মাংকীর ছেলে মাংকীই হবে। বান্দর। হাড়ে বজ্জাত।’ সৌম্য এখন ভালই নিশ্চিত যে বাপীর চেহারার সঙ্গে বান্দর নামের এনিমেলটার কোন মিল নেই। বান্দর একরকম দেখতে, বাপী আরেক রকম। একদিন নানিকে এ কথা বলতেই উনি বললেন, ‘তোর দাদার প্রদাদার প্রদাদার চৌদ্দ পুরুষের আগের দাদা বান্দর ছিলেন।’ নানাই ননাই করে তাকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, মানুষ একসময় বানর ছিল। তাই তোমার নানি ওটা বলছেন।’ ছোট বেলায় অবাক হতো অনেক কিছুতেই। এখন হয় না। এখন সে অনেক বড়, সাত বছর প্রায় শেষ হতে চলেছে। ক্লাস টু-তে পড়ে। অনেক বড়। স্কুলের অনেক বাচ্চা-কাচ্চা তাকে ভাইয়া ডাকে। বলেছেও তাদের কয়ে ক’জনকে, বানর থেকে আমরা মানুষ হয়েছি, বদলাতে বদলাতে ১০০০ বছর পর অনেকরকম কিছু হয়ে যাব। বাপীই বলেছিল তাকে, বদলাতে বদলাতে একদিন চারটা হাত আর একটা পা হবে, তালপাতার সেপাইতে পরিণত হবে, দুটো ডানাও হবে। এত কাজ করতে হয় তাই হাত বাড়বে। বসে বসে কম্পিউটারেই বেশিরভাগ মানুষের সময় কাটে তাই পা দুটো এক হয়ে যাবে। ডানা গজাবে উড়ার জন্য, ট্রাফিক জ্যামের ঐ সমাধানও বের হয়ে যাবে। আহ্ স্কুলের বন্ধুরা সবাই এসব শুনে কতই না খুশি হয়ে ছিল। কিন্তু মাম যে কি ক্ষেপে গেল। স্কুলের কোন মা নাকি ফোন করে কমপ্লেইন করেছে যে সে সব অদ্ভুত কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে। পরের প্রায় তিনমাস তাকে মাম বাপীর কাছে আসতে দেয়নি। তারপর থেকে বাপী অনেক মজার কথা আর বলে না। মাম বলে দিয়েছে বাপী নতুন কিছু বললে তাকে আগে জানাতে। সে এখন আর বুঝতে পারে না কোনটা ‘নতুন কিছু’, কি জানাতে হবে, কি জানাতে হবে না। আগের মতন হরবড়িয়ে সব বলতেও ভয় পায়। নানাই আজকাল প্রায়ই বলেন, ‘তোমাদের দু’জনের টানাপোড়ায় বাচ্চাটা কনফিউজ হয়ে বড় হচ্ছে।’ ‘কনফিউজ’ জিনিসটা যে কী, এটাই সে বুঝতে পারছে না। বড় হলে বুঝবে। মাম-ই বলেছে, বড় হলে বুঝবে। মাম অবশ্য বলে, সব কিছু যুক্তি দিয়ে বুঝতে হয়। স্বপ্নে থাকা ঠিকক না। তোমার বাপী যা করে বা যেখানে বসবাস করে সেটা সবটাই স্বপ্নে থাকা বলা চলে। মাম যে কেন এমন বলে!! বাপী যেখানে থাকে সেখানে তো ওরা তিনজনাই একসঙ্গে থাকতো এতদিন। ধানম-ির এই এ্যাপার্টমেন্টটা তার কত চেনা। জন্ম থেকে দেখা। উল্টাদিকের বাসায়ও কত গেছে। মিকা আন্টিরা ওখানে থাকেন। মিকা আন্টির বিয়েতেও গিয়ে ছিল, ওই আঙ্কেল কোথায় যেন চলে গেছেন, আর ফিরে আসেননি। এখন ওই বাসায় যেতে কেমন যেন লাগে। মাম-ও আবার ফিরে গেলেই জানতে চায়, ‘তোর মিকা আন্টি এসেছিল, গিয়ে ছিলি ওদের বাসায়!ওর ওই বুড়ি ভাম মা’টা কে দেখেছিলি। আছেন বহান তবিয়তে ঐ বাসায় সবাই জটলা পাকিয়ে, না! সব ক’টা বোনের তো ওটাই স্থান। মিকা, চিকা, ফিকা, কিকা। ফালতু সব নাম। মেয়েগুলো যেমন, নামগুলোও তেমন।’ মাম দুনিয়ার যত সব অদ্ভুত নাম বলে যায়। সে মামকে মনে করিয়ে দিতে চায় না নামগুলো ঠিক না। আন্টিগুলো কি সুন্দর। কত আদর করে তাকে। কত ভাল। এই তো সে এসেছে দেখে মিকা আন্টি এসে লুডুলস রেখে গেছে সামনে। খেতেই ভুলে গেছে। ছবি আঁকা বন্ধ করে বাটিটা তুলে নিল। বাপী তখনও চেয়ে আছে তার দিকে। একটু লজ্জা পেয়ে হেসে বলল, তুমি কি আমাকে জিজ্ঞেস করতে চাও তুই এত সুন্দর কেন রে? উত্তর তো জানই, মা কিসি দিয়েছে তাই। : তোর মাকে বলিস তাহলে ব্যাঙ রাজকুমারকে কিসি দিতে। এক কিসি-তে ব্যাঙ মিয়া হয়ে যাবে রাজকুমার। যাওয়ার সময় মনে রাখিস তোর মা-র জন্য দুটো ব্যাঙ নালা থেকে ধরে দেব। : সত্যি দেবে? : দেব-ই তো। মন যা চাইবে তাই করবো। : মাম বলেছে, জীবন অনেক কঠিন। আমার জীবনতো আরও কঠিন হবে। যা খুশি ভাবা বা করা আমার উচিত না। : তোর জীবন কঠিন হবে কেন? সৌম্য জবাব দেয় না। চুপ করে নুডুলস খায়। বাপীকে তার বলতে ইচ্ছে করে না যে, মাম বলেছে ব্রোকেন ফেমিলির বাচ্চাদের অনেক শক্তভাবে বড় হতে হয়। ব্রোকেন ফেমেলি শব্দটা শুনলেই তার কান্না পায়। তাদের ফেমিলি ভেঙ্গে যাচ্ছে। আগেই ভাল ছিল ছোট ছিল সে। কিছুই বুঝতো না। এখন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বোঝে। নানাই প্রায়ই বলে ও বড়দের থেকেও বেশি বুঝে। অনেক ম্যাচিউর আমাদের সৌম্যবাবু। অল্পদিনের মাঝেই আট হয়ে যাবে, বুঝবে নাইবা কেন সে? মাকিদ আংকেল যে তার নতুন বাবা হতে চায় এটাও সে জেনে গেছে যেন কেমন করে। বাপীকে বলেনি। বুঝে গেছে অনেক কথাই এখন আর সবাইকে জানানো যাবে না। মামকে বাপীর কথা, আর মাম এর কথা বাপীকে সব জানানো যাবে না। তবে মিকা আন্টিকে বলেছে, আন্টি নিজেই যখন জিজ্ঞেস করেছে, আমাকে ‘মা’ ডাকতে তোমায় কেমন লাগবে, সে সোজা উত্তর না দিয়ে বলেছে মাকিদ আংকেলকে বাবা ডাকতে যেমন লাগবে তেমন। আজ সকালেই বলেছে মাত্র। বলে মনে হচ্ছে বলা ঠিক হয়নি। পারলে ইংরেজ করে দিত। উনি কি বাপীকে বলেছে কথাটা! শুনে তো উনি খুব চোখ বড় বড় করে বললেন, : ওমা তাই, খুব ভাল কথা। তোমার মা বুঝি মাকিদ নামের কাওকে বিয়ে করতে চলেছে। : বিয়ে কথাটা আমার ভাল লাগে না। আমি কখনও বিয়ে করব না। : বাহ্ বিয়ে হলে তো খুব ভাল। তোমার দুই জোড়া বাবা মা থাকবে। : দেখেছো তুমি কোথাও দুইজোড়া বাবা মা থাকতে। : ভাগ্যবানদের থাকে। সবাই কি আর তোমার মতো ভাগ্যবান হয়। : ডবল বাপ মা ভাল কিছু কি? রাহিতা আমার সঙ্গে পড়ে, সে বলেছে তোমরা হবে সৎ বাপ-মা। তোমরা স্টোরী বুকে বিলগংস কর। : আরে না না, এ যুগে সৎ আপন সব বাপ-মাই ভালো হয়। বলে অবশ্য আন্টি চলে গেলেন ওনাদের ফ্ল্যাটে। মা অবশ্য প্রায়ই বলেন, ‘এতগুলো বোন, কোনটার বিয়ে হচ্ছে না, যাকে পারছে তাকে ধরছে বিয়ে করতে।’ তারা নাকি সবাই দরজার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এ বাড়িতে ঐ বাড়িতে ঢুকে যেতে। আজ সে আন্টির পেছন পেছন দরজা পর্যন্ত গিয়ে দেখেও এসেছে, কই পাঁচ বোনের একজনও তো দরজার ওপর দাঁড়িয়ে নেই। জিজ্ঞেসও করল, : অন্য আন্টিরা কী আজকে দরজায় দাঁড়াবে না! : কেন? : ঐ যে ওদের বিয়ে হচ্ছে না তাই, অন্য সবার বাসায় ঢোকার জন্য। তুমি যেমন আমাদের বাসায় ঢুকতে চাইছো। সঙ্গে সঙ্গে আন্টি ছুটে চলে গেলেন। তার আগে অবশ্য কয়েক পলক অবাক হয়ে চেয়ে থাকলেন। কেঁদে কি উঠে ছিলেন ছুটে যাওয়ার আগে! কিন্তু কাঁদবে কেন? কাঁদার কি আছে। কাঁদলে আবার কেকা আন্টি এসে কড়া চোখে তার দিকে চেয়ে বললেন, এটা হচ্ছে একটা নষ্টের ঝাড়। দেখা যাক কেকা আন্টি আসে কিনা। আগেও এমন হয়েছে। তার কথায় মিকা আন্টি দুঃখ পেয়েছে। দুঃখ কিভাবে সে দিয়েছিল তা সে নিজেও জানে না। তবে কেকা আন্টির কথায় জেনেছে সে নাকি দুঃখ দিয়েছে। কেকা আন্টি চোখ পাকিয়ে আসলেই পিছে পিছে মিকা আন্টিও ছুটে আসেন। তাকে বুকে আড়াল করে বলেন, ও আমার শোনা বাচ্চা, দুধের শিশু। ওকি বুঝে। ওর মা-ই ওর কানটা ভারি করছে। বাপী থাকলেই বহুবার বলে, মাই সব শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়। না হলে ওতো একটা কিউট বেবী। সোনা বাচ্চা। আদরের দলা। কত কি বলে। সে মিকা আন্টির গা ঘেঁষে আদর নেয়। মা মা গন্ধ পেতে চায়। কিন্তু কেন যেন পায় না। মাম বলেছে নিজের মা ছাড়া অন্য কারও মাঝে মায়ের গন্ধ খোঁজাই বোকামী। বাপী অবশ্য বলেছে মায়ের বয়সী সবাই মা। মাম জগৎময়। যা কিছু সুন্দর সবই মা। যদিও ভেবেছিল কথাটা মায়ের কানে তুলবে না, তারপরও বলে ফেলেছিল। মাম শুনে পুরা ঘরে তিনচার বার পাঁয়চারী করেছে, দৌড়েছে বলা চলে। বলেছে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে, এত্তবড় সাহস। বিশ্বময় সবাই তোর মা। তাহলে সবাই তোর বাপীর বউ হলো কি না বল। কি রকম দৃষ্টি আর চিন্তা ভাবনা ওই লোকের। কে ঘর করবে এর সঙ্গে? আরও অনেক কঠিন কঠিন কথা বলে বলে চেঁচিয়েছে। তারপরে তার দিকে তাক করে চেয়ে থেকে বলেছে, আমাকে ছাড়া আর যদি এই জীবনে কখনও কাউকে মা ডাকিস তারপরে বুঝবি মজা। তোকে সোজা আমার পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে কবরে চলে যাব। কিন্তু মাম তাকে পেটের ভেতর ঢোকাবে কিভাবে। বাপীকে জিজ্ঞেস করেও ছিল। বাপী সঙ্গে সঙ্গে বলেছে এ আর এমন কি, গপ করে ঘিলে ফেলবে। হয় কখনো এটা! কিন্তু সে আর মামকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করতে যায়নি। মাম হয়তো আবার তাহলে এ বাড়িতেই আসা তার বন্ধ করে দেবে। বাপী এখনও চেয়ে চেয়ে দেখছে তাকে। ভাবছে মনে হয় কিছু। নুডল্সটা পুরা শেষ। পানিও পাশে রেখে গেছেন মিকা আন্টি। : তোকে একটা কথা জানাব ভাবছি। : জানি তুমি বলবে মা কিসি দিয়ে ছে বলে আমি সুন্দর হইনি। বাপী হেসে ফেলল, বলল, : আমি কিসি দিলে তুই আরও সুন্দর হতিস। : দিলে না কেন? : ভাবছি যখন তুই বিয়ে করতে যাবি তখন দেবো। : আমি বিয়ে করবো না। : কেন? ২৫ বছর বয়স হলেই আমি তোর বিয়ে করিয়ে দেব। : অত বছর যদি তুমি বাঁচো বাপী। : সে কি রে, কেন ভাবছিস আমি মরে যাব। : আমাদের ক্লাসের রানীর বাবা মারা গেছে। সাফিনেরও। : ও তাই। হুম, দুঃখজনক। আমি মরলে তুই খুব দুঃখ পাবি, তাই না। : না বেশি না, আমার তখন শুধু একটাই বাবা থাকবে। মাকিদ বাবা। আমাদের ক্লাসের সবারই একটা বাবা! দুটো বাবা বলতে আমার ভাল লাগবে না। : হুম। : আমরা কেন আলাদা হয়েছি, জানিস। : মাম বলেছে তুমি ঐ মিকা আন্টির জন্য মাম এর সঙ্গে থাকতে পারনি। : কথাটা ঠিক না। তোর মা সরে গিয়েছিল। তখন জায়গাটা খালি হয়ে গেল। তাতেই ঢুকতে পেরেছে ঐ আন্টি। : বের করে দাও। আমার ভাল লাগে না এভাবে দুই বাড়িতে থাকতে। : সে আর সম্ভব না। সহসাই আমাদের ডিভোর্স ফাইনাল হয়ে যাচ্ছে। বাপী চেয়ে আছে তার দিকে। কিছু বলছে না। বুঝতে পারছে বাপী আরও কিছু বলতে যাচ্ছে। : ডিভোর্স তো বুঝিস, তাই না। গতদিন তো বলেছিলি আমি তোকে বুঝিয়ে। : হুম। : পানিটা তিতা লাগছে। ভাল লাগছে না। : কোথায় যাচ্ছিস সৌম্য। : মিকা আন্টি আমাকে তিতা পানি দিয়েছে। ফেলে নতুন পানি আনতে যাচ্ছি। : দে আমি টেস্ট করে দেখি। : না লাগবে না। আমি আর পানি চাই না। : কাছে এসে বস তো আমার। শোন মিকা আন্টিকে বিয়ে করব ভাবছি। আমাদের সঙ্গে থাকবে। কি বলিস? : শপিং মলে নিয়ে রেখে আস না। হারিয়ে যাক তাহলে। মরে গেলেই মা শক্ত করে হাত ধরে রাখে বলে হারিয়ে গেলে আর খুঁজে পাব না। : আমি ভেবেছিলাম তুই তোর মিকা আন্টিকে পছন্দ করিস। : করি। আবার করিও না। কখনো আবার করি। : তাহলে ওকে হারিয়ে যেতে বলছিস কেন? : বাপী মাম বলেছে আমাদের বাসাটা নাকি হারিয়ে যাচ্ছে। বলেছে মিকা আন্টির জন্যই আমাদের তিনজনের বাসাটা হারিয়ে যাচ্ছে। : না রে। বলেই বাপী তাকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরেছে। কিন্তু তারপরও কেমন যেন একটা কষ্ট হচ্ছে। ঠিক বুকের মাঝখানে। হাত ভাঙেনি। পা-ও না। তারপরও বুকের ভেতর কষ্ট। কি যেন পুড়ে যাচ্ছে। প্রায়ই এমন একটা কষ্ট হয় তার। নানি শুনে বলেছেন তোদের ঘর পুড়ছে রে, এটা তারই আগুন। সৌম্য বাপীর বুকের ভেতর হঠাৎ করে কাঁদতে শুরু করে। সে বুঝতে পারছে না কেন সে কাঁদছে। কিন্তু ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার।
×