ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ অক্টোবর ২০১৭

আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের অবদান শুধুমাত্র প্রাচীন পুঁথিপত্র সংরক্ষণের জন্যে নয়, তিনি বাঙালী মুসলমানদের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। আবদুল করিমের জন্ম ১১ অক্টোবর ১৮৭১ সুচক্রদন্ডী গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম ‘সাহিত্য বিশারদ’ উপাধি যার নামের পূর্বে সংযুক্ত হয়েছে তিনি আবদুল করিম। গবেষকদের কাছে সুপরিচিত। তরুণ প্রজন্ম এই মহান ব্যক্তিত্বকে কিভাবে চেনেন, তাদের কাছে তিনি আদৌ পরিচিত কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিকূল পরিবেশে যিনি গবেষণা শুরু করে বিশ^ব্যাপী পরিচিত করে তুলেছিলেন পুঁথি সাহিত্য-প্রাচীন গ্রন্থের উপাদান; তিনি পাদ-প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন। অথচ যতটা আগ্রহ গবেষণা হওয়া প্রয়োজন তাকে নিয়ে, হয়নি দুর্ভাগ্য আমাদের। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের অবদান শুধুমাত্র প্রাচীন পুঁথিপত্র সংরক্ষণের জন্যে নয়, তিনি বাঙালী মুসলমানদের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। আবদুল করিমের জন্ম ১১ অক্টোবর ১৮৭১ সুচক্রদন্ডী গ্রাম, পটিয়া, চট্টগ্রাম। সংগ্রাহক ও লেখক হিসেবে তিনি সুপরিচিত। শৈশব থেকে আবদুল করিম দরিদ্রাবস্থায় প্রতিপালিত হন। পিতৃ বিয়োগের তিন মাস পরে তার জন্ম, সতেরো বছর বয়সে তিনি মাতৃ হারা হন। ১৮৯৩ খিস্টাব্দে তিনি পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজে এফএ অধ্যয়নকালে সন্নিপাত রোগে আক্রান্ত হয়ে তাকে অধ্যয়নের সমাপ্তি ঘটাতে হয়। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে আবদুল করিম চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি এ সময় সীতাকু- মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অস্থায়ী পদ গ্রহণ করেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম প্রথম সাব-জজ আদালতে শিক্ষানবিস পদে যোগদান করেন। এ সময় অক্ষয় চন্দ্র সরকার সম্পাদিত পূর্ণিমা (মাঘ ১৩০২-অগ্রহায়ণ ১৩০৬) পত্রিকায় তার রচিত ‘অপ্রকাশিত প্রাচীন পদাবলী’ প্রকাশিত হয়। কবি নবীন চন্দ্র সেন আবদুল করিমের রচিত নিবন্ধ পড়ে বিশেষ আকৃষ্ট হন। ১৮৯৮ খ্রিস্টব্দে নবীন চন্দ্র সেন চট্টগ্রাম কমিশনারের পার্সোনাল এ্যাসিস্ট্যান্ট নিযুক্ত হলে তিনি আবদুল করিমকে সেখানে চাকরি দেন। এ সময় ‘জ্যোতি’ পত্রিকায় আবদুল করিম পুঁথি সংগ্রহ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। বিজ্ঞাপন প্রকাশের কারণে নবীর চন্দ্র সেনকে কুমিল্লায় বদলি করা হয় এবং আবদুল করিমকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিছুদিন তিনি বেকার থাকেন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে আনোয়ারা মধ্য ইংরেজী বিদ্যালয়ে আবদুল করিম নিযুক্ত লাভ করেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্কুল ইন্সপেকটরের অফিসে তিনি দ্বিতীয় কেরানি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল করিম অবসর গ্রহণ করেন।তিনি পুঁথি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। আবদুল করিম ১৯৩৫ থেকে ১৩৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি পটিয়া আঞ্চলিক ঋণ সালিসি বোর্ডের ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আবদুল করিম বঙ্গী সাহিত্য পরিষদের ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সদস্য ও ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দে সহ-সভাপতি নির্বাচন হন। সাহিত্য সংস্কৃতি আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আবদুল করিম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল করিমের জ্ঞান ও অধ্যবসরে মুগ্ধ হয়ে তাকে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স ও বি এর বাংলা পরীক্ষক নিযুক্ত করেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্সের একটি পত্রের প্রশ্নকর্তা ও পরীক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন। আবদুল করিম পুঁথি সংগ্রাহক হিসেবে সুপরিচিত। তার বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ব ছিল। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য রচনায় তার অভিমত প্রকাশ করেছেন। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে নব নূর পত্রিকায় উল্লেখ করেন। দেশে প্রচলিত ভাষাই কোন জাতির মাতৃভাষা ও জাতীয় ভাষা হওয়া উচিত এবং স্বাভাবিক কিন্তু বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট ভাষা মাতৃভাষার স্থানাধিকার নেই। বাংলার ভিন্ন ভিন্ন অংশে বিভিন্ন ভাষা মুসলমান সমাজে চলিয়া আসিতেছে। ইহার ফলে এই দাঁড়াইয়াছে যে বাংলার অন্যতম অধিবাসী হিন্দুদের সহিত একতার কথা দূরে থাকুক, বাঙালী মুসলমানদের মধ্যেও একটি ভাষাগত সংস্থাপিত হইতে পারিতেছে না এবং একতার অভাবই বাঙালীর জাতীয় শক্তি বিকাশের প্রধান অন্তরায় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। হিন্দু জাতির এই অভ্যুত্থানে বাংলা ভাষার প্রভাব রহিয়াছে। কোন জাতিকে মন্ত্র দ্বারা দীক্ষিত করতে হলে সে মন্ত্র অবশ্য হবে মাতৃভাষা। জন্ম ১১ অক্টোবর ১৮৭১
×