ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফসারা তাসনিম

মাছের মস্তিষ্কে ক্ষতির কারণ প্লাস্টিক কণা

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৬ অক্টোবর ২০১৭

মাছের মস্তিষ্কে ক্ষতির কারণ প্লাস্টিক কণা

একটি নতুন গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে, পানিতে বিদ্যমান প্লাস্টিক কণা শেষ পর্যন্ত মাছের মস্তিষ্কে গিয়ে জড়ো হয়। এই প্লাস্টিক মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, যা মাছের আচরণগত বৈশিষ্ট্যে অসামঞ্জস্যতার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। পরিসংখ্যান হতে জানা গেছে, পৃথিবী জুড়ে উৎপাদনকৃত সকল প্লাস্টিক পণ্যের ১০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে গিয়ে মিশে। এর ফলস্বরূপ দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক আবর্জনার সিংহভাগই প্রকৃতপক্ষে প্লাস্টিক বর্জ্য। মানবজাতি কর্তৃক প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং এর পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব একটি সার্বজনীন উদ্বিগ্নতার বিষয়। তবে খুব অল্পসংখ্যক গবেষণাতেই অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এই অতিক্ষুদ্র কণা ন্যানোপ্লাস্টিক কণা নামে পরিচিত। লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষক টমি সিডভল বলেন, ‘আমাদের গবেষনণায় প্রথম দেখানো হয়েছে যে ন্যানো আকারের প্লাস্টিক কণা মাছের মস্তিষ্কে গিয়ে জমা হতে পারে।’ লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন কিভাবে জলজ বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্য দিয়ে ন্যানোপ্লাস্টিক পরিবাহিত হয়। এই পরিবহন প্রক্রিয়া আলগি পর্বের জীব এবং জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন হতে শুরু করে বৃহদাকার মৎস্য প্রাণী পর্যন্ত বিস্তৃত। জুয়োপ্ল্যাঙ্কটনগুলো পানিতে ভাসমান ক্ষুদ্রাকার প্লাস্টিক কণাগুলো ভক্ষণ করে, অন্যান্য মাছ এই জুয়োপ্ল্যাঙ্কটনকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সিডভলের মতে, জলজ জীবস্বত্বার উপর বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের প্রভাব কিরূপ হয় সে বিষয়ে কিছু চমৎকার গবেষণালব্ধ ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো যে এই গবেষণা প্রমাণ করে বস্তুত ন্যানোপ্লাস্টিক কণা মাছের রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক বা ব্লাড-ব্রেইন ব্যারিয়ার অতিক্রম করতে সক্ষম, এবং এই রূপে তা মাছের মস্তিষ্কের টিস্যুর অভ্যন্তরে জমা হতে শুরু করে। এ ছাড়াও, বর্তমান গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা ন্যানোপ্লাস্টিক দ্বারা আক্রান্ত মাছের আচরণগত বৈশিষ্ট্যে অসামঞ্জস্যতা প্রদর্শন করেন। আক্রান্ত মাছগুলোর খাদ্য গ্রহণের গতি মন্থর হয় এবং তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিশ্লেষণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এ সকল আচরণগত পরিবর্তন মাছের মস্তিষ্কে ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ঘটিত কারণে মস্তিষ্কের যে ক্ষতি সাধন হয় তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ওই গবেষণা হতে আরেকটি তথ্য উদ্ঘাটিত হয় যে জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন বা প্রাণীপ্ল্যাঙ্কটনগুলো ন্যানো আকারের প্লাস্টিক কণার সংস্পর্শে আসলে মৃত্যুবরণ করে, যেখানে আকারে বড় প্লাস্টিক কণা এগুলোর ওপর কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। মোট কথা, ন্যানোপ্লাস্টিকের এই আলাদা আলাদা প্রভাবগুলো সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিকতায় আঘাত হানে। টমি সিডভল বলেন, ‘এই বিষয়ে অধ্যয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ যে বাস্তুতন্ত্রকে প্লাস্টিক কতটা প্রভাবিত করতে পারে এবং কিভাবে জলজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে বৃহদাকার প্লাস্টিক কণার তুলনায় ন্যানো প্লাস্টিক কণা সম্ভাব্যভাবে অধিকতর বিপজ্জনক।’ তবে, তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে অপরাগ যে আদৌ ন্যানোপ্লাস্টিক কনা মস্তিষ্ক ব্যতীত মাছের অন্যান্য অংশের টিস্যুতে জমা হতে পারে কিনা এবং ভক্ষণের মাধ্যমে সেগুলো মানবদেহে সঞ্চারিত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। ‘না, আমরা এ ধরনের কোন গবেষণা সম্বন্ধে অবগত নই। কাজেই, এর ওপর কোন মন্তব্য করা নিয়ে সতর্ক থাকব,’ বলেন সিডভল। বর্তমান গবেষণা লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈবরসায়ন ও গাঠনিক জীববিজ্ঞান বিভাগ, জলজ বাস্তুবিদ্যা এবং পরিবেশ ও জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের সম্মিলিত সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। সূত্র : লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে সরবরাহকৃত উপকরণ
×