ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক শিখা সেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০১৭

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক শিখা সেন

নারীদের ‘নারী’ নয়, মানুষ হয়ে ওঠার প্রতীক শিখা সেন। একুশ বছরের প্রচেষ্টায় নারীদের মানুষ হয়ে ওঠার গল্প লিখে চলেছেন তিনি। বিষয়টির সত্যতা মিলেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। নিজেরা করি সংগঠনের ভেতর দিয়ে শিখা সেন কুমারখালীর প্রান্তিক ও নৃগোষ্ঠীর নারীদের স্বাবলম্বী ও অর্থনৈতিক দৈন্য থেকে বেরিয়ে আসার উজ্জীবনী শক্তি যুগিয়েছেন। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে (১৯৯৫-২০১৬) শিখা সেন চাকরি নিয়ে সংস্কৃতিনগর কুমারখালীতে আসেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নিবেদিত হন সকল শ্রেণী-পেশা মানুষের মধ্যে প্রিয়মুখ হয়ে ওঠেন। কুমারখালীর আদিবাসী নারীদের বাল্যবিয়ে বন্ধ তাদের স্কুলে পাঠানো, অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলেন এবং গৃহকর্মী নারীদের গৃহস্থালীর পাশে উপার্জন বাড়ানোর পথ দেখান। তারা সেলাই প্রশিক্ষণ ও হস্তশিল্পের কাজের মাধ্যমে উঠে দাঁড়াতে থাকে। শহর থেকে দূরে গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির গল্প শোনাতেন উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে। সাংস্কৃৃতিক পদযাত্রায়ও তার ভূমিকা অগ্রগণ্য। বিংশ শতকের শুরুতে যখন আকাশ সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটে তখন তিনি দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশে পথনাটক, গণনাটক, মুক্তির গান তার সংগঠনের মধ্য দিয়ে গ্রামে ও শহরে প্রদর্শন করে করে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলেন। গত একুশ বছর তার জীবন ও কর্ম ছিল পিছিয়ে পড়া নারীদের সংসারে উপযোগী তথা স্বাবলম্বী করা এবং শিশু-কিশোরীদের লেখাপড়াতে উৎসাহ যোগানো। বেসরকারী সংস্থায় কাজ করতেন এবং এই সংস্থার মাধ্যমে কুমারখালীর বিভিন্ন গ্রামের আনাচে-কানাচে ভূমিহীন সংগঠনের মানুষদের একতাবদ্ধ করে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও সবার সামনে থেকে পদক্ষেপ নিয়েছেন। বর্তমানে এই মহতী নারী অবসর যাপন করছেন চট্টগ্রামে স্বামী সংসারে। লেখাপড়া শেষ করে টাঙ্গাইল পিতৃগহ ছেড়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একুশ বছর (২০১৬) মানুষের সেবা করে বেড়িয়েছেন অনেক লোভনীয় চাকুরি ছেড়ে। তিনি শহর থেকে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামে-গ্রামে ছুটে যেতেন তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করতেন আর এ বৈঠকে তারাও নিশ্চিতভাবে সজাগ ও সচেতন হয়েছে। শিখা সেনের কাছে অর্থ থেকে মানুষের অর্থনেতিক মুক্তিই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। কুমারখালী শহরের নৃগোষ্ঠীর মেয়ে অর্চনা রানী এখন স্বাবলম্বী পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সারসরি অংশগ্রহণ করে পিছিয়ে পড়া নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। যে মেয়েটি অকালে হারিয়ে যেতে বসেছিল- যে মেয়েটি সবার আড়ালে চলে গিয়েছিল সেই অর্চনা রানী এখন সবার সামনে মাথা উঁচু করে শহর-গ্রামময় করে বেড়ায়। শিখা সেনের এই যোগীভাবনা ও পরিসেবা যে কোন একজন নারীদের মধ্যে প্রজ্বলিত হলেই কেবল সর্বক্ষেত্রে নারীমুক্তি কিংবা নারী অধিকার পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব। শিখা সেনেরাই শেকড় থেকে পিছিয়ে পড়া নারীদের আলোকশিখার কা-ারী হয়ে সমাজের পাদপ্রদীপের সামনে তুলে ধরেন।
×