ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশীয় গণআদালতের প্রধান বিচারক ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন

রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় আজ হোক কাল হোক মিয়ানমারকেই নিতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৬ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা গণহত্যার দায় আজ হোক কাল হোক মিয়ানমারকেই নিতে হবে

তৌহিদুর রহমান ॥ মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক গণআদালতের প্রধান বিচারক ও গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এখন মিয়ানমার সরকার অস্বীকার করলেও আজ হোক বা কাল হোক এর দায় তাদেরই নিতে হবে। মিয়ানমার সরকার সেখানকার জাতিগত বিভেদ উস্কে দিচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। জনকণ্ঠকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এ আহ্বান জানান। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে গঠিত মালয়েশিয়ায় গণআদালতের প্রধান বিচারক ছিলেন ড. ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারের বিষয়ে ই-মেলে জনকণ্ঠকে এ সাক্ষাতকার দেন তিনি। মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক গণআদালতে রোহিঙ্গা হত্যার দায়ে মিয়ানমার সরকার দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এর ফলে মিয়ানমার সরকারের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে- জানতে চাইলে ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন বলেন, মালয়েশিয়ার গণআদালতে আমরা প্রতীকী বিচার করতে সক্ষম হয়েছি। মিয়ানমার সরকারের ওপর এর প্রভাব পড়বে। এর মাধ্যমে পুরোবিশ্বের মানুষই মিয়ানমারের ওপর নিজ নিজ দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করবেন। মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিটি দেশের মানুষই তাদের নিজ দেশের সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবেন বলে আমরা আশা করছি। মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও তারা বলার চেষ্টা করেছে, সেখানে কোন গণহত্যা হয়নি। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ‘গণহত্যা ও সামাজিক অনুশীলন’ শীর্ষক বইয়ের এ লেখক বলেন, মিয়ানমার সরকার সেখানের জাতিগত বিভেদ উস্কে দিচ্ছে। নন-বার্মিজ গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। আবার সে অভিযোগ তারা অস্বীকারও করছে। তবে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এখন মিয়ানমার সরকার অস্বীকার করলেও আজ হোক বা কাল হোক এর দায় তাদেরই নিতে হবে। মালয়েশিয়ার গণআদালতের রায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আর্জেন্টিনার সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন বলেন, এ রায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। তবে আমার অনুরোধ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখতে হবে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে নীরব রয়েছে। তাদের এ ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকটাই নীরব। তবে এসব দেশের জনগণের মধ্য থেকে এ ইস্যুতে প্রতিবাদ হওয়া উচিত। এসব দেশের মধ্য থেকে প্রতিবাদ হলে তাদের সরকার মিয়ানমার প্রশ্নে নমনীয় হতে বাধ্য হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মালয়েশিয়ার গণআদালতে মিয়ানমার সরকারের বিচার হয়েছে। তবে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এ ইস্যুতে বিচার হওয়া সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারের অন্যতম এ নেতা বলেন, হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচার হওয়া সম্ভব। এছাড়া যে কোন দেশের জাতীয় আদালতেও এটি নিয়ে বিচার করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো থেকে এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরী। উল্লেখ্য, গত ১৮-২১ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিনসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সরকার পরিচালিত গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য, বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে মালয়েশিয়ায় পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) রায় ঘোষণা করে। সেখানে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশের গণহত্যা ও ন্যায়বিচার’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন।
×