ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃত চিত্র লুকাচ্ছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৬ অক্টোবর ২০১৭

প্রকৃত চিত্র লুকাচ্ছে মিয়ানমার

রাখাইন ছাড়াও দেশটির প্রকৃত বৃহৎ চিত্র কার্যত সবার কাছ থেকে লুকাচ্ছে মিয়ানমার। যে ছবি দেখলে শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে ভবিষ্যত কোন আশার আলোর দেখা মিলবে না। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে সেনাবাহিনীর হত্যা, গণধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান পাশবিক নির্যাতন ও চরম মানবাধিকার লংঘন নিয়ে আলোচনা ছাড়াও হাজার হাজার শরণার্থীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দিকে নজর নিবদ্ধ রেখেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ। রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ছাড়াও মিয়ানমারের ভেতরেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অন্তত ৫ লাখ মানুষ আছে যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজ দেশেই অনেকটা শরণার্থীর মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অন্তত ২০টি জাতিগোষ্ঠীর অস্ত্রধারী মিলিশিয়া সক্রিয়, যাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় দলটিতে অস্ত্রধারী গেরিলা যোদ্ধার সংখ্যা অন্তত ২০ হাজার। সত্যিকার অর্থে দেশটির কোথাও শান্তির নামগন্ধও নেই। নেই সুস্থ-স্বাভাবিক অর্থনীতি। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক এবং প্রশ্নবিদ্ধ। বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন কমছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশটির লাখ লাখ দরিদ্র মানুষজনের অবস্থার উন্নয়ন অনেকটা দিবাস্বপ্নের মতোই। দেশটিতে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়ে মিয়ানমারের মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা করছে চীন। মিয়ানমারের বর্তমান সংবিধান দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে নিরাপত্তাসহ সবকিছুর ওপর একছত্র সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। নির্বাচিত বেসামরিক সরকার অর্থনৈতিক বিষয়সহ বৈদেশিক স¤পর্কের ক্ষেত্রেই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দেশটিতে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২০ সালে। কিন্তু যে সাংবিধানিক কাঠামোতে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে বর্তমান অবস্থা থেকে ভবিষ্যতের মিয়ানমারের জন্য কোন রকম গণতান্ত্রিক সংস্কারের সামান্যতম নিশ্চয়তাও নেই। মিয়ানমারের লাখ লাখ জনসাধারণের জন্য এটি একটি চরম উদ্বেগের বিষয়। দেশটির হাজার হাজার মানুষ এই ভেবে চিন্তিত যে প্রকৃত গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য যে গতিতে মিয়ানমারের দ্রুত পরিবর্তন দরকার ছিল তা হচ্ছে না। পাঁচ বছরে যে পরিমাণ লোকের হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছানোর কথা ছিল তা দেশটিতে পৌঁছায়নি। লাখ দশেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পেলেও দেশটির বেশিরভাগ মানুষ এখনও বিদ্যুত,পরিষ্কার পানি বা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই সময়ে,একটি নয়া জাতীয়তাবাদ দেশটিতে ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিচ্ছে, যা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দিন দিন সক্রিয় হচ্ছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানায়, সেখানে তাদের হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বাড়িঘর। স্যাটেলাইট ইমেজেও রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বলতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যে সহিংস নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছে তাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে মনে করে জাতিসংঘ। যদিও মিয়ানমার সরকারের দাবি, আরএসের সদস্যরা গ্রামগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করছে এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে রাখাইনে অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গা গ্রাম খালি হয়ে গেছে। এদিকে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস (প্রিন্স অব ওয়েলশ) ও তার স্ত্রী ডাচেস অব কর্নওয়াল চলতি মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে এলেও তিনি মিয়ানমার যাচ্ছেন না। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও গণহত্যা চলতে থাকায় তাদের অফিসিয়াল সফরসূচী থেকে শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছে মিয়ানমার। রাখাইন অঞ্চলের চলমান সহিংসতার আগে মিয়ানমারের নেতা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী আউং সান সুচির সঙ্গে মে মাসে চার্লস ও ক্যামেলিয়া লন্ডনে সাক্ষাত করেছিলেন।
×