ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষের উদ্বোধনী সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ অক্টোবর ২০১৭

আজ অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষের উদ্বোধনী সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ শুক্রবার বিকেল ৩টায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং সমন্বয়ক হায়দার আকবার খান রনো উদ্বোধনী সমাবেশে প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দ বলছেন, ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব সভ্যতার ইতিহাসে এক অসামান্য ঘটনা। অক্টোবর বিপ্লবের অনেকগুলো তাৎপর্যের মধ্যে রয়েছে এর আন্তর্জাতিকতা, সম্পদের পুঁজিবাদী মালিকানার জায়গাতে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং মুনাফার লোলুপ পৃথিবীতে আত্মকেন্দ্রিকতাকে হটিয়ে মনুষ্যত্বের সহমর্মিতার ও সহযোগিতার জগৎ প্রতিষ্ঠা এবং বৈজ্ঞানিকতা। এই বিপ্লব দেখিয়েছে যে, মালিকানা যদি ব্যক্তিগত থাকে তাহলে সকল উদ্ভাবন ও উন্নয়ন চলে যায় কতিপয় ব্যক্তির হাতে, যারা জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে শোষণ ও লুণ্ঠনের কাজে, মুনাফার নির্লজ্জ স্বার্থে। পুঁজির মালিকেরা মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের সঙ্গে শত্রুতা করে। তারা যুদ্ধ বাধায়, মারণাস্ত্রের উন্নয়নে বিজ্ঞানী ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ব্যবহার করে দাসানুদাস হিসেবে, ব্যবসা করে অস্ত্রের ও মাদকের। পুঁজিবাদের কঠিন কুঠারাঘাতে প্রকৃতি আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রকৃতিকে বিরূপ করার জন্য দায়ী পুঁজিবাদী বিশ্বের বিলাস ও ভোগবাদিতা, এর ভুক্তভোগী বিশ্বের গরিব মানুষ। প্রাচুর্যের ভেতর দারিদ্র্য পুঁজিবাদেরই অনিবার্য ফসল। পুঁজিবাদীরা বর্তমানকেই সবকিছু মনে করে উল্লেখ করে সিপিবি নেতারা বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে মূল্য দেয় না, ধারণা করে ভবিষ্যত হবে তাদের বর্তমান আধিপত্যেরই রঙিন সম্প্রসারণ। পুঁজিবাদীদের হাতে পৃথিবী আজ আক্ষরিক অর্থেই বিপদগ্রস্ত। ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব চেয়েছিল পুঁজিবাদের ক্রমবর্ধমান দুঃসহ দৌরাত্ম্যকে প্রতিহত করে একটি মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে। বাংলাদেশে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদ্যাপনে মাসব্যাপী বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে আলোচনা সভা-সেমিনার, মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদ্যাপন জাতীয় কমিটি। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে এ কর্মসূচী শুরু হবে। আর ৭ নবেম্বর সিপিবি-বাসদসহ সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ১২টি রাজনৈতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কমিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও লাল পতাকা মিছিলের মাধ্যমে অক্টোবর বিপ্লব উদ্যাপন শেষ করবে। ১৯১৭ সালের ১০ অক্টোবর রাশিয়ায় ভøাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিনের পরিচালনায় ও বলশেভিক পার্টির (কমিউনিস্ট পার্টির) নেতৃত্বে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা হয়। ২৫ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর বলশেভিকদের নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে মস্কো, গোটা রাশিয়া এবং পুরনো জার সাম্রাজ্যের অন্যান্য অংশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবর বিপ্লব হিটলারের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ থেকে বিশ্ব সভ্যতাকে বাঁচিয়েছে, রুশ দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ববাসীকে মুক্তির জন্য পথের সন্ধান দিয়েছে। দাসত্বেও জোয়াল থেকে মেহনতিদের মুক্তিদানের কাজটি করেছিল অক্টোবর বিপ্লব। মাসব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচীর বিষয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম জানান, ১১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ‘সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের অভিজ্ঞতায় সর্বজনের শিক্ষা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ অক্টোবর মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে প্রগতিশীল নারী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ‘রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও নারী মুক্তি আন্দোলন : তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ক সেমিনার, ১৯ অক্টোবর মুক্তিভবনে কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ‘শতবর্ষে অক্টোবর বিপ্লব : কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির বিপ্লব পুনর্গঠন’ শীর্ষক সেমিনার এবং ২০ অক্টোবর আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে শ্রমিক সমাবেশ। ২৮, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর পাবলিক লাইব্রেরির সেমিনার কক্ষে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ১ নবেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র-সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে ছাত্র সমাবেশ ও শোভাযাত্রা; ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সাংস্কৃতিক, চলচ্চিত্র ও শিশু-কিশোর সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা, গান, নাটক, আবৃত্তি, নৃত্য, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আলোকচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।
×