ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৬ অক্টোবর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান আশ্বিন শেষ হতে চলল। আজ শুক্রবার মাসের ২১তম দিন। আর কয়েকদিন পর নতুন মাস। নতুন ঋতু। তার আগে শরতকে তো বিদায় বলতে হবে। এখন চলছে সে আয়োজন। প্রিয় ঋতুকে বিদায় জানানোর উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীর চারুকলার বকুলতলায় আজ সকালে শরতকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটি অনেক বছর ধরে শরত উৎসবের আয়োজন করে আসছে। তবে এবার বেশ পিছিয়ে। বরণ আর করতে পারেনি। বিদায় জানাচ্ছে। যন্ত্রসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সকাল সোয়া ৭টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ পঞ্চকবির গানে শরত বন্দনা করবেন শিল্পীরা। কবিতা থেকে বর্ণনা করা হবে। থাকবে নৃত্যের আয়োজন। উৎসবে যোগ দেবে ২৮টির মতো সংগঠন। একক গান, কবিতা পরিবেশন করবেন ২০ থেকে ২৫ জন শিল্পী। যারা প্রকৃতি ভালবাসেন, শরত যাদের প্রিয়, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বকুলতলায় যাবেন তারা। শরতের কাশফুলে সাজানো মঞ্চ আর শিউলির মিষ্টি ঘ্রাণ অপেক্ষা করে থাকবে তাদের জন্য। এদিকে, শরত শেষ হতে চললেও প্রকৃতিতে তেমন কোন পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে না। প্রচ- গরম অনুভূত হচ্ছে এখন। বৃহস্পতিবারের কথাই যদি ধরা যায়, ভাদ্রের তালপাকা গরম তো একেই বলে! সূর্যের তাপে গা পুড়ে যাচ্ছিল। খেটে খাওয়া মানুষের সে কী কষ্ট! দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকেও। অবশ্য প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, আর কদিন পর হেমন্ত। প্রকৃতি কোমল হবে। শীতল হবে। আপাতত অপেক্ষা করতে চান তারা। পুরান ঢাকা ইতিহাসের আয়না। সে আয়নায় চোখ রেখে কত কী যে দেখা যায়! অথচ আমাদের বোধ বুদ্ধির অভাব। আমরা দেখি না। বরং স্মৃতিচিহ্নগুলো ধ্বংস করে চলেছি। একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ হতে পারে আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত জমিদার নিকোলাস পোগজের বাড়িটি। আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে অবস্থিত বাড়ির হোলিডং নম্বর ৮/১ ও ৮/২। ১৯ শতক জায়গার ওপর অনন্য সুন্দর স্থাপনা। ভবনটির মূল অবয়বে রয়েছে ইউরোপিয়ান ধ্রুপদী রীতির লম্বা কলামের সারি। ভবনের সামনের অংশে দোতলার মাঝ বরাবর অবস্থিত প্যানেলটি আকারে অপেক্ষাকৃত বড় ও কারুকার্যখচিত। ভবনের পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে একই ধরনের কারুকার্যখচিত খিলান। নক্সাখচিত ছাদের কার্নিশ ও রেলিং। সব মিলিয়ে এত সুন্দর যে, তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সৌন্দর্য চেতনা যাদের নেই তারা এখন বাড়ির মালিক। ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে নিলামে বাড়িটি কিনে নিয়েছিলেন জনৈক খান বাহাদুর। তার স্ত্রী ও মেয়েদের কাছ থেকে ২০০৫ সালে বাড়িটি কিনে নেন বর্তমান মালিকরা। নিকি সাহেবের বাড়িটি এপি আয়ুর্বেদিক ফার্মেসির অফিস ও গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। আর এখন ভেঙ্গে ফেলার আয়োজন চলছে। গত কয়েকদিনে ভবনটির সামনের একাংশ গুঁড়িয়ে দেয়া হযেছে। এ অবস্থায় ভবনটি সংরক্ষণের দাবিতে মাঠে নেমেছে আরবান স্টাডি গ্রুপ। ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করে চলা গ্রুপটি বুধবার বিকেলে আরমানিটোলার আর্মেনিয়ান স্ট্রিটে মানববন্ধন করেছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, নিকোলাস পোগজ ঢাকায় আধুনিক শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূকিমা রাখেন। এজন্য ১৮৪৮ সালে পোগজ স্কুল নামে তিনি প্রথম বেসরকারী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার ও ব্যবসায়ী হিসেবেও সফল এ আর্মেনীয়। ঢাকার পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। ঢাকার প্রথম ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ভবনটি এসব ইতিহাসের সাক্ষী। ভবনের ইতিহাস ও স্থাপত্যিক গুরুত্ব বিবেচনায়ও আরমানিটোলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে ঢাকা জেলা পরিষদ ভবন ভাঙ্গার সময় এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার একটি বর্ধিত ও পরিবর্তিত তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। তখন ঐতিহ্যবাহী ভবনের একটি তালিকা তৈরি করেছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু এ তালিকায় নিকোলাস পোগজের বাড়িটি ছিল না। গত বছর আরও তিন হাজার ঐতিহ্যবাহী ভবনের একটি তালিকা হেরিটেজ কমিটির কাছে দেয়া হয়েছে। এ তালিকার প্রথম সারিতে নিকোলাস পোগজের ভবনটি আছে। তাই অবিলম্বে ভবনটি ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে আরবান স্টাডি গ্রুপ।
×