ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জের কৃষক দিশাহারা

বালুতে ঢাকা কৃষি জমি

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৬ অক্টোবর ২০১৭

বালুতে ঢাকা কৃষি জমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ৫ অক্টোবর ॥ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালুতে আগ্রাসনে বিপন্ন হচ্ছে বসতবাড়ি, কৃষি জমি। পাহাড়ী ছড়া, নদী দিয়ে নেমে আসা বালুর কারণে জেলার তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলা ২০-২৫টি গ্রাম, হাজার হাজার একর কৃষি জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। বাড়িঘর, কৃষি জমি হারিয়ে পথে বসেছেন হাজার হাজার মানুষ।তাহিরপুর ও দোয়ারা বাজার উপজেলা ভারত সীমান্তঘেঁষা। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এ দুই উপজেলার হাজার হাজার একর চাষযোগ্য কৃষিজমি রয়েছে। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় কৃষি জমি ও বসবাস করা স্থানীয়দের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পাহাড়ী অর্ধশতাধিক ছড়া ও নদীর পানির সঙ্গে বয়ে আসা বালু-পাথরে বিপন্ন হচ্ছে সীমান্তের জমি। বালুর স্তরে ঢেকে যাচ্ছে কৃষি জমি ও বাড়িঘর। সীমান্তঘেঁষা প্রতি গ্রামে কৃষিজমির ওপর ৩/৪ ফুট বালুর আস্তরণের কারণে ফসল ফলানো যাচ্ছে না জমিতে। এতে কৃষক পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দশা। জানা গেছে, বালুর আগ্রাসনের শিকার জেলার প্রায় এক হাজার ৫০০ একর জমি। তবে স্থানীয়দের দাবী কয়েকগুণ বেশি। কৃষকদের অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি কৃষি অফিস। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই উপজেলার অধিকাংশ কৃষিজমির ওপর ৩/৪ ফুট বালুর আস্তরণের কারণে ফসল ফলানো যাচ্ছে না জমিতে। একমাত্র ফসলি জমি হারিয়ে দিশেহারা কৃষকদের জীবন সংগ্রাম চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এমন পরিস্থিতির ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, বালু আগ্রাসনের সমস্যা বহুদিনের। তবে ২০০৫ সাল থেকে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাহাড়ে ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় বিশেষ করে বর্ষাকালে বালুর সঙ্গে বড় বড় পাথরও নেমে আসে। শুধু যে কৃষি জমি তা নয়, এ আগ্রাসনের শিকার বসতবাড়ি, স্কুল, বাজার ও স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পও। দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তে থাকা কৃষক আব্দুল জলিল জানান, তার দুই বিঘা জমিতে প্রায় চার ফুট বালুর আস্তরণ পড়েছে। যে জমিতে এক সময় ধান, আলুসহ বিভিন্ন মৌসুমে সবজি রোপণ করে সংসার চলত, এখন চাষযোগ্য না হওয়ায় তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাহেদুল হক জানান, পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারলে বালুর আগ্রাসন থেকে কৃষি জমি রক্ষা করা যাবে। কেবল কৃষি বিভাগ নয়, সরকারের সবাইকে নিয়ে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। যেসব জমিতে বালু পড়েছে, সেখানে বাদাম ও মিষ্টি আলু চাষের পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।
×