ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দ্য লায়ন কিং

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ অক্টোবর ২০১৭

দ্য লায়ন কিং

দ্য লায়ন কিং একটি মঞ্চ প্রযোজনা যা দেড় যুগ ধরে নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চায়ন হচ্ছে। তবে তা বাংলাদেশে নয়, প্রযোজনাটি হচ্ছে লন্ডনের পশ্চিম সীমান্তের কেন্দ্রে। লাইসিয়াম থিয়েটার নামক গ্রুপটি এর সফল মঞ্চায়ন অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে অনেক এ্যাওয়ার্ডের মালা গলায় পরেছে এই থিয়েটার কোম্পানি। এত লম্বা সময় ধরে দর্শক চাহিদা ধরে রাখার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে প্রযোজনাটি। ১৯৯৪ সালে ওয়ার্ল্ড ডিজনির নির্মিত এনিমিটেড মুভি দ্য লায়ন কিং থেকেই নির্মিত হয়েছে মঞ্চ প্রযোজনাটি। বর্ণনাত্মক ও গানের সুরে সুরে মালাগাঁথা হয়েছে দৃশ্য থেকে দৃশ্যে। ব্যবহৃত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব দ্রব্যসামগ্রী, মুখোশ। আফ্রিকার জঙ্গলে সিংহের জীবনচক্র নিয়ে মূলত নাটকটির কাহিনী নির্মিত হয়। জঙ্গলে প্রাণিকুলের রাজা সিংহ তার রাজত্ব, রাজনীতি ও সেই সঙ্গে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল সবই এই নাটকে স্থান পায়। ঐক্যবদ্ধ না থাকার ফলে অর্থাৎ বোকামির দ- যে প্রাণিকুলে মৃত্যুদ- তাও দেখানো হয়েছে। মঞ্চের পাশাপাশি কুশীলবরা দর্শকের মাঝে ঢুকে পড়ে অর্থাৎ সমস্ত অডিটরিয়ামকে অভিনয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ প্রসেনিয়াম বা গ্রীক আদলের মঞ্চ থেকে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রযোজনাটির কৌশল ও দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা রীতি দেখে চোখে ভেসে ওঠে সৈয়দ জামিল আহমেদের নির্মিত নাটক রিজওয়ান। রিজওয়ানে মঞ্চ ব্যবহার, দ্রব্যসামগ্রী এবং আলোক প্রক্ষেপণ সর্বোপরি সমস্ত প্রযোজনাটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সফল প্রযোজনা মনে হয়েছে। ঈদের ছুটিতে যখন ঢাকার চিত্র থাকে একেবারে ভিন্ন, জনশূন্য রাজপথ সেই সময়ে জাতীয় নাট্যশালা ছিল উৎসবমুখর। এটাই হচ্ছে পেশাদারিত্বের নিদর্শন। টানা ১০ দিন প্রযোজনা হলেও অনেকেই টিকেটের অভাবে দেখতে পারেনি। তাই আন্তর্জাতিক মানের কাজ হলে দর্শক তা গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। সঠিক পরিকল্পনা, মেধাবী নির্মাতা ও কুশলীদের যৌথ প্রচেষ্টায় আমাদের মঞ্চের চেহারা পরিবর্তন হতে পারে। যুগ এখন প্রযুক্তির, ঘরে বসে পৃথিবীর সমস্ত খবর রাখা যায়, সমস্ত কাজও দেখা যায়। তাই প্রয়োজন গবেষণার। মঞ্চ নিয়ে গবেষণা একান্ত জরুরী,নইলে এই শিল্পের উন্নয়ন অসম্ভব। ১৯৯৭ সালে লন্ডনে ব্রডওয়ে শুরু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি দ্য লায়ন কিং ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আকাশচুম্বী সফলতা অর্জনকারী এই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন জুলি টেমর এবং এর ডিজাইনও তিনি নিজেই করেছেন। তিনি নির্মাণ করেছেন একটি চাকচিক্যময়, কাল্পনিক ও সৃজনশীল পৃথিবী যেখানে উদ্ভিদকুল, প্রাণিকুল বসবাস করে ঠিক আফ্রিকার জঙ্গলে যেমন প্রাণীদের বাস। প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার দর্শক টিকেট কিনে উপভোগ করে লাইসিয়াম থিয়েটারের এই দৃষ্টিনন্দন প্রযোজনাটি যেখানে দর্শককে একটি নতুন পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রচুর পাপেট ব্যবহার করা হয় এই নাটকে যেমন জিরাফ, হাতি, হায়েনা ইত্যাদি। কখনও কখনও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা পাখির ন্যায় পাপেট নিয়ে উড়ে বেড়ায়। কখনও কুশলীরা বিভিন্ন প্রাণী সেজে গ্যালারিতে দর্শকের মাঝে উপস্থিত ও সঙ্গে তালও লয়ে শব্দ। সেই শব্দ কখনও এমনই বিকট যে দর্শকদের কানে হাত দিতে হয় এভাবেই ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের নাটকের মধ্যে দর্শকদের ডুবিয়ে রাখা হয়। ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট নাটকের মধ্যে ২০ মিনিটের মধ্য বিরতি রয়েছে। নাটকের মূল চরিত্র অর্থাৎ সিম্বা চরিত্রে এই মুহূর্তে অভিনয় করছেন নিউজিল্যান্ডের নিকোলাস আফোয়া। তিনি ছিলেন একজন পেশাদারী রাগবী খেলোয়াড়। গান ও থিয়েটার ছিল তার ২য় পর্যায়ের শখ বা নেশা। রাগবী খেলে তিনি এমনই শারীরিক আঘাত পেলেন যে আর খেলা সম্ভব নয়। পেশায় পরিবর্তন ঘটে, তিনি চলে আসেন অভিনয়ে। ২০১৩ সালে তিনি যুক্ত হন দ্য সিডনি কোম্পানি অব লায়ন কিং। ওখান থেকেই লন্ডনের লাইসিয়াম থিয়েটার। ২০০৩ সালে তিনি প্রথম প্রযোজনাটি দেখেন অস্ট্রেলিয়ায়। তখন এটি তার মনে দারুণভাবে দাগ কেটেছিল এবং প্রায়ই এ ভাবনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াত। সিম্বার জীবনচক্র তার খুব বেশি ভাল লাগত। তার সবচেয়ে ভাল লাগার দৃশ্য হচ্ছে নাটকে সিম্বাকে তার পিতা মুফাসা জীবন নিয়ে শিক্ষাদান করেন। এটি এমন এক প্রযোজনা যে কোন নির্দিষ্ট সময়কে না ধরে সব সময়ের উপযোগী করা হয়েছে। মানুষও গল্পটিকে খুব শ্রদ্ধা করে এবং সারাবিশ্বে এর দর্শক চাহিদা প্রচুর। সর্বোপরি এটি একটি পেশাদারী প্রযোজনার চমৎকার নিদর্শন।
×