ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ভারত সরকার আয়োজিত বক্তৃতায় ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি

নগদ মুদ্রার অর্থনীতি গরিব মানুষের বিপক্ষে যায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৫ অক্টোবর ২০১৭

নগদ মুদ্রার অর্থনীতি গরিব মানুষের বিপক্ষে যায়

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অভিন্ন। উভয় দেশের মূল শিকড়ও এক। বাংলাদেশকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে সবচেয়ে ভাল বন্ধু মনে করে ভারত। দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে। বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘ভারত সরকারের ম্যাক্রোইকোনমিক উদ্যোগ’ শীর্ষক এক বক্তৃতার আয়োজন করে। এতে মূল বক্তব্য রাখেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এ সময় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অরুণ জেটলি বলেন, ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর বড় অংশের অর্থনীতি নগদ লেনদেনের উপর বিকশিত। দেশের অর্থনীতি যদি নগদ অর্থের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়, নিশ্চিতভাবেই অর্থের অভিশাপ আপনাকে ভোগাবে। এ ক্ষেত্রে নগদকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে কর ফাঁকি, কালো টাকা, দুর্নীতি এবং জঙ্গী অর্থায়নের সুযোগ তৈরির বিষয়গুলোও সামনে আনেন অরুণ জেটলি। তিনি বলেন, নগদ মুদ্রানির্ভর অর্থনীতি দুর্নীতির জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে, যা শেষ পর্যন্ত গরিব মানুষের বিপক্ষে যায়। তিনি বলেন, ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে ক্যাশলেস অর্থনীতি নিয়ে কাজ শুরু করে। ভারতে আমরা ৩০ কোটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলতে সক্ষম হয়েছি। দেশটিতে ৫৮ শতাংশ মানুষের ব্যাংক একাউন্ট আছে। কিন্তু তাদের অনেকে সেটা ব্যবহার করেন না। আমাদের উদ্দেশ্য যারা ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করেননি, যাদের ব্যাংক হিসাব নেই তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনা। যাতে নগদ লেনদেন কমিয়ে দেয়া যায়। এ জন্য সরকার প্রণোদনাও বাড়াচ্ছে। নগদ লেনদেন কমানোর সুবিধার কথা উল্লেখ করে অরুণ জেটলি বলেন, ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ায় ভারতে অর্থনৈতিক কাঠামো অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে ইনকাম ট্যাক্স বেড়েছে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, সন্ত্রাসী অর্থায়ন কমেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ ব্যাংকিং সেবার বাইরে আছে। তাদের এর আওতায় আনতে হচ্ছে। এজন্য বেসরকারী ব্যাংকও ভূমিকা রাখছে। অরুণ জেটলি বলেন, বাংলাদেশকে আগেও দু’দফা ঋণ দিয়েছে ভারত। ফলে বাংলাদেশের প্রতি আমাদের আস্থা অনেক বেড়েছে। তাই ভারত তৃতীয় বারের মতো বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে। ভারত ট্যাক্স নীতি সংস্কার করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত সরকার দেশটির ট্যাক্স ও ব্যাংক নীতিমালা সংস্কার করবে। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের জনগণ এবং সরকারের মধ্যেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। উভয়ই দেশই অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনে কাজ করেছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ, এ পর্যন্ত ভারতে ভ্রমণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। অরুণ জেটলি বলেন, ভারতে ব্যাংক হিসাবগুলো চালু রাখার স্বার্থে মানুষদেরকে কম খরচের ইন্স্যুরেন্স ও পেনশন নীতি গ্রহণের মাধ্যমে প্রণোদনা দেয়া হয় বলে জানান ভারতের অর্থমন্ত্রী। প্রতি মাসে এক টাকা প্রিমিয়ামে দুই লাখ টাকা এক্সিডেন্ট পেনশন পলিসি, দুই রুপী এক মাসের প্রিমিয়ামে ২ লাখ জীবন বীমা পাবে। এর ফলে লাখে লাখে মানুষ এই পলিসি গ্রহণ করা শুরু করল। ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, সাধারণত পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হয়। এ কারণে যাদের প্রয়োজন নেই, তারা সেটা পায়। পরে ব্যাংক হিসাব ও স্বতন্ত্র পরিচিতি নম্বর দেয়ার মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদানের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এখনকার অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী। দুর্নীতি দূর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বি শ্রীরাম, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসনিহা প্রমুখ। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ জায়েদি সাত্তার অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন। ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তিনদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন। বুধবার রাতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেয়া এক নৈশভোজে ভারতের অর্থমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে অরুণ জেটলি ঢাকা ত্যাগ করবেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বুধবার ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে পূজা অর্চনা করেন। বুধবার সকাল ৮টায় তিনি স্ত্রীসহ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রবেশ করেন। এ সময় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সদস্যসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর মূল মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং ১০ মিনিট পূজা অর্চনা করেন। পরে মন্দিরের ভেতরে এবং বাইরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং গ্রুপ ছবি তোলেন। পরে মন্দির কর্তৃপক্ষ অরুণ জেটলি ও তার স্ত্রীকে দুইটি ছোট প্রতিমা উপহার দেয়া হয়। এ সময় মন্দির প্রাঙ্গণে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডিএন চ্যাটার্জি, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল রায় ও ভারতীয় হাই কমিশনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×