ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছুটির আবেদনে সিনহা যা লিখেছেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৫ অক্টোবর ২০১৭

ছুটির আবেদনে সিনহা যা লিখেছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিতে যাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে অবশেষে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো তার ছুটির আবেদনটি প্রকাশ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। চাপের মুখে প্রধান বিচারপতিকে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলার পর বুধবার আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতি সিনহার আবেদনটি প্রকাশ করেন। সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আনিসুল হক রাষ্ট্রপতিকে লেখা প্রধান বিচারপতির ওই চিঠিটি প্রথমে পড়ে শোনান। পরে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে ওই চিঠি তিনি তুলে ধরেন এবং গণমাধ্যম কর্মীদের চিঠির ছবি তোলার অনুমতি দেন। পরে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হকের হাত থেকে সাংবাদিকরা প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনের ছবি তুলে নেন। রাষ্ট্রপতি বরাবর প্রধান বিচারপতির লেখা চিঠির ‘বিষয়’ লেখা হয়েছেÑ ‘অসুস্থতাজনিত কারণে ৩ অক্টোবর ২০১৭ খ্রি. হতে ১ নবেম্বর ২০১৭ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটির আবেদন।’ চিঠিতে আরও লেখা রয়েছে, ‘মহাত্মন, আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমি গত বেশ কিছুদিন নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছি। আমি ইতোপূর্বে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন ছিলাম। বর্তমানে আমি বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছি। আমার শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশ্রামের একান্ত প্রয়োজন। ফলে আমি আগামী ৩ অক্টোবর ২০১৭ খ্রি. হতে ১ নবেম্বর ২০১৭ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি ভোগ করতে ইচ্ছুক।’ আরও লেখা হয়েছে, ‘এমতাবস্থায় আগামী ৩ অক্টোবর ২০১৭ খ্রি. হতে ১ নবেম্বর ২০১৭ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত ৩০ (ত্রিশ) দিনের ছুটির বিষয়ে মহাত্মনের সানুগ্রহ অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।’ চিঠির নিচে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার স্বাক্ষর রয়েছে। আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের পুরো চিঠিটি পড়েও শোনান। এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাসায় অসুস্থ আছেন। মঙ্গলবার উনাকে ডাক্তার দেখতে যান। বুধবারও ডাক্তার দেখতে যাওয়ার কথা আছে।’ প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি অসুস্থ, এটা নিয়ে রাজনীতির কিছু নেই। আসুন আমরা সবাই মিলে বিচারপতি এস কে সিনহার সুস্থতার জন্য দোয়া করি। বিএনপির নেতৃবৃন্দকে বলব, আসেন দোয়া করি, উনি যেন সুস্থ হয়ে যান।’ আইনমন্ত্রী জানান, চিকিৎসকের সঙ্গে তার কথাবার্তা হচ্ছে। যখন দেখতে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে, তখন তিনি বিচারপতি এস কে সিনহাকে দেখতে যাবেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কি গৃহবন্দী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নিশ্চয়ই না।’ দীর্ঘ অবকাশকালীন ছুটি শেষে মঙ্গলবার আপীল বিভাগে বসার কথা ছিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। কিন্তু সোমবার বিকেল ৩টার দিকে আকস্মিক এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি। রাতেই সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। ফলে মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে দীর্ঘ অবকাশের পর আপীল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। সুপ্রীমকোর্টের অবকাশ শুরুর আগে গত ২৪ আগস্ট শেষ অফিস করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। অবকাশের মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে গেলে তার অবর্তমানে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সুপ্রীমকোর্টের অবকাশের শেষ দিন ছিল সোমবার, সেদিনই প্রধান বিচারপতির আরও এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার খবর দেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আগামী ৩ অক্টোবর হতে ১ নবেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেছেন এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগকালীন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক মাননীয় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন।’ সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা তার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমত অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি ওই কার্যভার পালন করবেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
×