ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল

প্রধান বিচারপতিকে সরকার জোর করে ছুটিতে পাঠিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ অক্টোবর ২০১৭

প্রধান বিচারপতিকে সরকার জোর করে ছুটিতে পাঠিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সরকার জোর করে ছুটিতে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, উচ্চ আদালতও এখন সরকারের আক্রমণের শিকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে নজিরবিহীনভাবে ছুটি নিতে বাধ্য করে সরকার নোংরা কাজ করেছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বর্তমান অবস্থান জাতি জানতে চায়। প্রধান বিচারপতিকে এভাবে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সর্বোচ্চ বিচারপতির সঙ্গে এমন আচরণ করা থেকে প্রমাণ হয় যে, সরকার অস্তিত্ব সঙ্কটের ভীতিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে। আর সরকারের এ আচরণে আজ সারাদেশে একটা ভীতি-ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি মাত্র ক’দিন আগে জাপান ও কানাডা সফর করে এসেছেন। এসব দেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেখানে কোন চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলে দেশবাসী জানে না। এমনকি সোমবার তিনি সুপ্রীমকোর্টে তার কার্যালয়ে বসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ফাইল সই করেছেন। নিয়মিত প্রথা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকল বিচারপতিকে নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। অথচ মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী ও এ্যাটর্নি জেনারেল মিডিয়াকে জানিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি নাকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ছুটি নিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সাক্ষাতপ্রার্থী সুপ্রীমকোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তার পক্ষ থেকে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনেই জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমি সুস্থ আছি কিন্তু কথা বলতে পারব না। এসব কিছু থেকে প্রমাণ হয় যে, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। তাকে জোর করে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে বিচার বিভাগকে অনুগত করার সরকারী অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। ফখরুল বলেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। তাকে জোর করে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সরকার অস্তিত্ব সঙ্কটে বেসামাল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি কয়েক মিনিটের মধ্যে বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমে স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক বিশ্বাস লালন করার জন্য অন্য কোন দল গঠনের অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা হয়। তখন সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও হরণ করা হয়। এমনকি বিচার বিভাগকে প্রশাসনের অধীন করা হয়। তখন উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ ও বরখাস্তের ক্ষমতা ছিল প্রশাসনের প্রধান রাষ্ট্রপতির হাতে। আজ আবার সেই রাজনৈতিক দলটিই সুকৌশলে বাকশাল কায়েমের অপচেষ্টা করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রহসনের মাধ্যমে অনুগত বিরোধী দল সাজিয়ে প্রকৃতপক্ষে একদলীয় সরকার কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ। এর পর প্রশাসন ও নিম্ন আদালতকে কুক্ষিগত করেছে। অবাধে রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করছে। গুম, খুন ও মামলা দিয়ে বিরোধী মতের জনগণের জন্য স্বাভাবিক রাজনৈতিক তৎপরতা চালানো অসম্ভব করে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে সুবিচার পাওয়ার সর্বশেষ ভরসাস্থল উচ্চ আদালতও আজ সরকারের আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়েছে। ফখরুল বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ আদালত এবং বিচারপতিদের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, সরকারী দল ও জোটের নেতাকর্মীরা অসাংবিধানিক, অযৌক্তিক ও কুৎসিত ভাষায় সমালোচনা করছেন। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায় পছন্দ না হলে তা রিভিউ করার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরকার দেশের প্রধান বিচারপতিকে নজিরবিহীনভাবে ছুটি নিতে বাধ্য করার নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের আইনজীবীদের পাশাপাশি সচেতন জনগণকে এর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া উচিত। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান বিচারপতির অফিস থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোন কমেন্টস পাইনি এবং তিনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন বা কি করেছেন, কি অবস্থায় আছেন কিংবা তার অসুখ হয়েছে কি তার কার্যালয় থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোন রকমের ইনফর্মেশন পাইনি। আমরা অবশ্যই প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ের কাছে জানতে চাই, দেশ ও জাতি জানতে চায়, এখন প্রধান বিচারপতির অবস্থানটা কী? সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
×