ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জন্মের পর স্থান হয়নি মায়ের কোলে, দত্তক নিতে চাইছে আট দম্পতি

শপিং ব্যাগে মুড়ে রাস্তায় ফেলে দেয়া শিশুটি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৫ অক্টোবর ২০১৭

শপিং ব্যাগে মুড়ে রাস্তায় ফেলে দেয়া শিশুটি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ শিশুটির বয়স মাত্র তিনদিন। লাল টুকটুকে মুখের এ কন্যা শিশুটির মাথায় একরাশ কালো চুল। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই শিশুটিকে ব্যাগে মুড়িয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয় রাস্তায়। জন্মের পর মায়ের কোলে স্থান হয়নি শিশুটির। বলছি সোমবার খিলগাঁওয়ে শপিং ব্যাগে পাওয়া সদ্যজাত শিশুটির কথা। বর্তমানে শিশুটি ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের ইনটেনসিভ কেয়ার সেন্টারে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে তার অবস্থা এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শারীরিকভাবে দুর্বল এই শিশুটির ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এদিকে শিশুটিকে দত্তক নিতে ৮ দম্পতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। ঢামেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মনিষা ব্যানার্জী বুধবার জনকণ্ঠকে জানান, মেয়ে শিশুটির বয়স মাত্র দুইদিন। নির্ধারিত সময়ের আগেই সে জম্মগ্রহণ করেছে। তার ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় কম। ওজন মাত্র পৌনে দুই কেজি। যতটুকু ভাল থাকার কথা ছিল, তার থেকে খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। শিশুটির ঠা-া লেগেছে। এখন যে চিকিৎসা দেয়ার কথা সেটাই আমরা দিচ্ছি। হাসপাতালে আনার পর থেকে স্যালাইন ও ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে। শিশুটির খাবারের বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শিশু উদ্ধারের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই ৮ নিঃসন্তান দম্পতি ছুটে আসে হাসপাতালে। তারা শিশুটিকে দত্তক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যেহেতু শিশুটি এখনও শঙ্কামুক্ত নয় তাই এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না। আগে তার সুচিকিৎসার বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা। এদিকে, শিশু উদ্ধারের খবর পেয়ে অনেক দম্পতি দত্তক নেয়ার জন্য খিলগাঁও থানায় ভিড় করেছে। এদেরই একজন মাহবুবা। তিনি এবং তার স্বামী থানায় হাজির হয়েছেন শিশুটিকে দত্তক নেয়ার বিষয়ে জানতে। এ বিষয়ে মাহবুবা জনকণ্ঠকে জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমরা নিঃসন্তান। তাই শিশুটি পরিত্যক্ত পাওয়ার ঘটনা শুনে থানায় এসেছি।’ পুলিশ জানিয়েছে, আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যে কেউ দত্তক নিতে পারে শিশুটিকে। শিশুটি যেহেতু রাস্তায় পড়ে ছিল তাই তার কোন ধরনের ইনফেকশন রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’ গত সোমবার সকালে এক মহিলা গৃহকর্মী কাজে যাওয়ার পথে খিলগাঁও সি ব্লকের ৪২৭ নম্বর বাসার সামনের রাস্তায় নবজাতকের কান্নার শব্দ পান। কান্নার শব্দে কৌতূহলী হয়ে সামনে গিয়ে তিনি একটি শপিংব্যাগ দেখেন এবং বুঝতে পারেন সেখান থেকেই কান্নার শব্দ আসছে। ওই গৃহকর্মী শিশুটিকে শপিংব্যাগ থেকে বের করে কোলে তুলে নেন। পরে আশপাশের লোকজন সেখানে জড়ো হতে থাকে। বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নবজাতককে উদ্ধার করে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত লোকজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এর আগে চলতি বছরের ১১ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া সদ্যজাত এক কন্যা শিশুকে। সুস্থ করে তুলতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক নার্সসহ সবাই এক মাস আপ্রাণ চেষ্টা চালান। একমাসের মধ্যেই শিশুটি শিশু বিভাগের চিকিৎসকদের চোখের মণি হয়ে উঠেছিল। তার নাম রাখা হয়েছিল আনিশা। কিন্তু চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টার পরও শিশু আনিশকে বাঁচাতে পারেননি। ছোট্ট শিশুটি হেপাটাইটিসে ভুগছিল। ১৭ এপ্রিলের ঢামেক হাসপাতালে মারা যায় শিশু আনিশা। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুরান বিমানবন্দরের কাছে একটি জঙ্গলে কুকুরে কামড়ানো এক নবজাতককে দুই নারী উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সুস্থ করে তোলা ওই শিশুর পরবর্তীতে নাম রাখা হয় ফাইজা। সে বছরের ১১ অক্টোবর ফাইজাকে পরে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ছোটমণি নিবাসে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে ফাইজা সেখানেই বেড়ে উঠছে।
×