ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উম্মে বুশরা সুমনা

উপেক্ষা ও অনীহা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৫ অক্টোবর ২০১৭

উপেক্ষা ও অনীহা

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এই শিল্পে অনেক এগিয়ে। এদেশগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের একটি প্রধান উৎস হচ্ছে পর্যটন শিল্প। নেপালের মোট জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ আসে পর্যটন শিল্প থেকে। বিশ্ব পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় মালয়েশিয়া নবম স্থানে। এসব দেশ পর্যটন শিল্পে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে কারণ তারা এই শিল্পকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে এবং তা সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রচার করে যাচ্ছে। এই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ করেছে। ফলে আজ তারা এর সুফল পাচ্ছে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। অথচ তাদের মতো আমাদেরও এই শিল্পে সম্ভাবনা ছিল এবং এখনও আছে। আমাদের পর্যটন স্পটের মাঝেও আছে অপার সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য। একটু সংরক্ষণ, পরিচর্যা আর প্রচারের মাধ্যমে আমরাও এই শিল্পকে খুব সহজে বিকশিত করতে পারি। প্রথমে পর্যটকদের অনীহার প্রধান কারণসমূহ চিহ্নিত করতে হবে। এই অনীহার প্রধান কারণসমূহের মধ্যে ভিসা জটিলতা, নিরাপত্তাহীনতা, কষ্টসাধ্য ও করুণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানহীন আবাসিক হোটেল, অতিরিক্ত খাদ্যমূল্য, বন্ধুসুলভ আচরণের অভাব, যোগ্য ট্যুরিস্ট গাইডের অভাব রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারী-বেসরকারী ও বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি অনুকূল সামাজিক পরিবেশ ও অবকাঠামোগত পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দরকার। পরিকল্পনামতো সৃজনশীল স্থাপনার সঙ্গে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমন্বয় করা দরকার। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন পুলিশ স্টেশন ও পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা উচিত যাতে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে। নিরাপত্তাহীনতার উদ্বেগ ছাড়াই নারী ও বিদেশী পর্যটকরা যেন রাতের বেলাতেও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেরিওয়ালা, ছিনতাইকারী আর বখাটেদের উৎপাত যেন না থাকে সেদিকে কঠোর নজর দিতে হবে। এছাড়া বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি দেশী পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষা সফরের আয়োজন করা যেতে পারে। আবার বিদেশমুখী উচ্চবিত্ত মানুষদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে দেশেই ঘুরে বেড়ানোর উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করা যেতে পারে। বিশ্বায়নের এই যুগে আকর্ষণীয় ও সময়োপযোগী প্রচারণার ব্যবস্থা করা উচিত। দেশী-বিদেশী টিভি, বেতার, ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে খুব সহজে দর্শনীয় স্থানসমূহের প্রচার করা যেতে পারে। বিউটিফুল বাংলাদেশের মতো আরও কিছু চমৎকার তথ্যচিত্র বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা অফুরন্ত। সংরক্ষণ, পরিচর্যা আর প্রচারণার মাধ্যমে আমরাও এই শিল্পকে খুব সহজে বিকশিত করতে পারি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের একটি অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারি। পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকাশমান। একটু প্রচেষ্টা আর উদ্যোগে একদিন আমাদের দেশেও এই শিল্পের উন্নতি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×