ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটকবান্ধব পরিবেশ ও সুবিধা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৫ অক্টোবর ২০১৭

পর্যটকবান্ধব পরিবেশ ও সুবিধা

আমাদের দেশে বিদেশী পর্যটকরা কেন আসতে চায় না, তার কারণ বহুবিধ। প্রথমত, নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে কোন পর্যটক কোথায় বেড়াতে গেলে প্রথমেই মনে করে সে নিরাপদ কোন অঞ্চলে ঘুরতে যাচ্ছে তো? নাকি তাকে প্রতি পদে পদে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হবে! বাংলাদেশে পর্যটকদের জন্য যেটুকু নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে তা পর্যাপ্ত নয়। কক্সবাজার বা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে গেলে আপনারা দেখতে পাবেন স্থানীয় ভবঘুরে কিশোর হতে শুরু করে দোকানদার পর্যন্ত বিদেশীদের বিভিন্ন বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলে। ফলে তিনি আর দ্বিতীয়বারটি বাংলাদেশের সৌন্দর্য দেখতে আসেন না। তিন পার্বত্যে আমি কিছুদিন কাজ করেছিলাম, কাজ করতে গিয়ে বহু বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছি, তার মধ্যে ছিল পর্যটন শিল্প। আমার কাছে মনে হয়েছে সত্যিই তো বিদেশীরা কি আমাদের দেশে পর্যটক হিসেবে আসবে শুধুমাত্র মামের বোতলের পানি খেতে? প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরও কিছু আধুনিক পদ্ধতি সংযোজন করে প্রতিটি স্পটে নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা, দেশীয় খাবারের পাশাপাশি বিদেশী খাবারের সুবিধা থাকা, নিজের দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা, যানবাহনের সুব্যবস্থা, ইংরেজীতে অনর্গল কথা বলতে পারা স্মার্ট গাইড নিয়োগÑ এভাবে পর্যটকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। দৃষ্টান্তস্বরূপ চীনের কুনমিং-এর স্টোন ফরেস্টের কথা বলা যায়। বাইরের অনেক দেশেই আমরা এমনটা দেখতে পাই, তার মধ্যে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ব্যাংকক, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, নেপাল অন্যতম। এসব দেশ পর্যটন খাতেই আয় করছে কোটি কোটি টাকা। যা বাংলাদেশও অনায়াসে পারে। আমাদের রয়েছে পর্যটন মন্ত্রণালয়, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে ঘটাতে পারি বিপ্লব। শুধুমাত্র দিবস পালন করা ছাড়া এই মন্ত্রণালয়ের তেমন কোন জোরালো কাজ কি আমরা দেখতে পাই? অগণতি জনবল কাজ করছে এই মন্ত্রণালয়ে, কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ নয়। তাই পর্যটন শিল্পে পরিবর্তন আনতে হলে বিশ্বপরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করে এই শিল্পকে সাজাতে হবে। পাশাপাশি মিডিয়ার মাধ্যমে জোরালো প্রচারণা চালাতে হবে দেশী এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এখানে সম্পৃক্ত করতে হবে সৃজনশীল মানুষদের, যাদের দেখার আর বোঝার মনটি দেশীয় ধাঁচের কিন্তু আধুনিক। গতানুগতিক কর্মী দিয়ে এই শিল্পের পরিবর্তন আনা কখনই সম্ভব নয়। আমাদের দেশে যে জিনিসটি আমরা দেখতে পাই তা হলো যে যেটার যোগ্য তিনি কিন্তু ওই চেয়ারে নেই, আছে অন্যতর মানুষ। ফলে অগ্রগতি হচ্ছে না সেই সেক্টরের। এদেশে বহু বিদেশী কাজ করছেন, কিন্তু দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিটা তারা কাটিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ব্যাংকক বা ইন্দোনেশিয়াতে গিয়ে। কারণ কিন্তু ওই একটিই। তাদের জন্য কোন সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল আমাদের দেশে নেই, যেখানে গিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পরিবার বা প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সময় কাটাতে পারে। প্রতি সপ্তাহে এসব বিদেশী মোটা অঙ্কের একটি অর্থ খরচ করছে অন্য দেশে গিয়ে। আজ যদি আমাদের পর্যটন আধুনিক ও যুগোপযোগী হতো তা হলে তো এই অর্থ স্বদেশেই থেকে যেত। আর এই একটি খাতের অর্থ দিয়েই বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে
×