ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইরান চুক্তি বাতিলের ফিকিরে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ অক্টোবর ২০১৭

ইরান চুক্তি বাতিলের ফিকিরে ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ই ইরান পরমাণু চুক্তিটিকে সবচেয়ে বাজে চুক্তি আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই চুক্তি তিনি বাতিল করেননি বটে। তবে প্রতি ৯০ দিন পর পর তা করার সুযোগ তার আছে। পরবর্তী সুযোগটা আসবে অক্টোবরে। ইরান পরমাণু চুক্তি পর্যালোচনা আইন (ইনারা) ২০১৫ এ উল্লেখ আছে যে মার্কিন প্রশাসন প্রতি তিন মাস পর পর কংগ্রেসের কাছে সত্যায়ন করবে যে ইরান চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলছে। বিভিন্ন পরমাণু উপাদান মজুদ রাখার সে সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে দেশটি তা লঙ্ঘন করেনি; এমন কিছু করেনি যাতে করে দেশটির পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীকে এগিয়ে নেয়া যায়; এবং পরমাণু সংক্রান্ত অবরোধ স্থগিত রাখা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য। এই তিনটি বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সত্যায়ন না করলে গোটা বিষয়টি কংগ্রেসের হাতে চলে যাবে এবং ৬০ দিন পর কংগ্রেস ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন করে অবরোধ আরোপ করতে পারবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত এপ্রিলে প্রথম সত্যায়ন করেছিলেন যে ইরান চুক্তির শর্ত মানছে। দ্বিতীয়বার সত্যায়ন করেন গত জুলাই মাসে। তবে তখন নাকি ইরানের কুমতলবের প্রমাণ তার কাছে দিতে না পারার জন্য তিনি তার জাতীয় নিরাপত্তা দল বিশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে যাচ্ছেতাই বলেছিলেন। অক্টোবরে পরবর্তী রিভিউ হবে এবং তখনও মোটামুটি একই বক্তব্য পেশ করা হবে যার ফলে প্রেসিডেন্টের পক্ষে সত্যায়ন আটকে রাখা কঠিন হবে। জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি যদিও বলেছেন যে চুক্তির একাধিক শর্ত ইরান লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু সেই অভিযোগ তিনি প্রমাণ করতে পারেননি। বরং জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি দল আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা এ মাসের গোড়ার দিকে জানিয়েছে যে ইরান সবকিছু ঠিকঠাক মেনে চলেছে এবং সংস্থার ইন্সপেক্টরকে তাদের ইচ্ছেমতো যা খুশি পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সুতরাং ইরান এমন কিছু করছে বলে প্রমাণ নেই সেটি করার জন্য সত্যায়ন দেয়া যাবে না। তবে চতুর্থ একটা শর্ত ইনারায় চাপিয়ে দেয়া আছে। সেটা হলো আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের সহায়ক কি সহায়ক নয় তা পর্যালোচনায় নেয়া। এই শর্তটি একান্তভাবেই বিষয়ীগত মি. টিলারসন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইজ আর ম্যাকমাস্টার সবাই মনে করেন চুক্তিটি বহাল রাখা জাতীয় স্বার্থের সহায়ক। কিন্তু অন্যরা তা ভাবেন না। সিআইএ ডিরেক্টর মাইক পম্পিও কংগ্রেস সদস্য থাকাকালে এই চুক্তির ঘোর সমালোচক ছিলেন। এখনও আছেন। মিজ হ্যালিও ইরান প্রশ্নে উগ্রবাদী ভূমিকা নিয়েছেন। হয়ত তাঁর লক্ষ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে টিলারসনের স্থলাভিষিক্ত হওয়া। বোঝাই যাচ্ছে যে ট্রাম্প ও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী সাঙ্গপাঙ্গরা ইরান চুক্তি বাতিল করতে উদগ্রীর হয়ে আছেন। তার জন্য তারা অজুহাত দেখাতে চাইবেন এ অঞ্চলে ‘স্থিতিশীলতা বিনষ্টে’ ইরানের আচরণ, সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। এগুলোকে তুলে ধরে তারা দোহাই পারতে পারেন যে তেহরান ইরানচুক্তির মর্মবস্তু নস্যাৎ করেছে। ইরান চুক্তির সমালোচকরা যুক্তি দিতে পারেন যে তারা বর্তমান চুক্তির চেয়ে আরও ভাল চুক্তি চান সেখানে গোটা পারমাণবিক অবকাঠামো ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং এ অঞ্চলে ইরান আর তার প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কিন্তু তেমন চুক্তি কিভাবে সম্ভব হতে পারে তার কোন যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তাদের নেই। ট্রাম্প যদি ইরান চুক্তি থেকে সরে আসেন তেহরান সেক্ষেত্রে নিজেকে বন্ধনমুক্ত মনে করে পরমাণু অস্ত্র তৈরির সুযোগ নিতে পারে। ইরানী নেতারা ভাবতে পারেন যে ওবামা যেটুকু অবরোধ আরোপে সফল হয়েছিল তার চেয়েও আরও কঠিন অবরোধ আরোপে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন গড়ে তোলা ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব হবে না। আমেরিকা আরেকটা কাজও করতে পারে। তা হলো ইরানকে পরমাণু অস্ত্রধর হতে না দেয়ার জন্য সেদেশে হামলা চালিয়ে পরমাণু স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া। কিন্তু বেশিরভাগ সামরিক বিশেষজ্ঞ একমত যে বিমান হামলার দ্বারা পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা হলে ইরানের বোমা করায়ত্ত করার ব্যাপারটা দু’এক বছর পিছিয়ে যাবে মাত্রÑ তার বেশি কিছু নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী বিচারে সরকারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। শুধুমাত্র সরকার বদলানোর জন্য যুদ্ধ চালালে কাজ হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক দুর্বল দেশ ইরাকের দৃষ্টান্তটা আশাব্যঞ্জক নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ইরান চুক্তি সত্যায়ন না করে তার থেকে সরে আসেন তার পরও খুব সম্ভব চুক্তিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলবে। কারণ এর পেছনে অন্যান্য স্বাক্ষরদাতা দেশ যথা ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের জোরালো সমর্থন আছে। আমেরিকা না থাকলে চুক্তি দুর্বল হবে তবে এর অপমৃত্যু হবে না। তবে এই ভূমিকার জন্য আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপীয় মিত্রদের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। অন্যদিকে ইরানের উগ্রপন্থীরা এতে খুশি হবে। তারা তাদের অ-পারমাণবিক এ্যাডভেঞ্জার চালিয়ে যাবে এবং এক পর্যায়ে চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে অস্ত্র তৈরির দিকে যাবে এবং তার জন্য সব দোষ চাপাবে আমেরিকার ঘাড়ে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×