ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যেভাবে তৈরি হয়েছিল ট্রাম্প উত্থানের পথ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ অক্টোবর ২০১৭

যেভাবে তৈরি হয়েছিল ট্রাম্প উত্থানের পথ

ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেনÑ এটা বর্তমান যুগের একটি মৌলিক ধাঁধা। এই ধাঁধার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন ভ্যানিটি ফেয়ারের সম্পাদক ও এমি পুরস্কার বিজয়ী প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ডেভিড ফ্রেন্ড। তিনি এক নতুন বক্তব্য নিয়ে এসেছেন যার মধ্যে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের মিশেল আছে। তাঁর নতুন গ্রন্থ ‘নটি নাইন্টিস : দি ট্রাম্প অব দি আমেরিকান লিবিডো’তে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, ১৯৯০-এর দশকে বাড়াবাড়ি রকমের যৌনতার মধ্য দিয়ে যে জগত রচিত হয়েছিল ট্রাম্পের অবস্থান ও ক্ষমতা সেই জগত থেকেই উৎসারিত। ফ্রেন্ড লিখেছেন যে, আমেরিকা নটি নাইন্টিসের অভব্যতা ও রুক্ষতাকে সামনে নিয়ে টিকে থাকতে এবং তারপর আত্মস্থ বা অঙ্গীভূত করতে না পারলে এক অর্থে ট্রাম্পের বিজয়ের কথা কখনও চিন্তাও করতে পারা যেত না। তিনি আরও লিখেছেন, এমন একজন প্রেসিডেন্ট যার ফ্যাশন মডেলদের প্রতি আসক্তি ছিল, যার সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনের ইতিহাস আছে, যার বিরুদ্ধে নারীদের হয়রানি করা, অবাঞ্ছিত যৌন প্রস্তাব দেয়ার কিংবা মারধর করার অসংখ্য অভিযোগ আছে এবং যিনি তিন তিনবার বিয়ে করেছেনÑ তাকে নিয়ে ভোটাররা কিভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারে? ফ্রেন্ড লিখেছেন, আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি যা বহুলাংশে ১৯৯০-এর দশকের দুই মহারথীর তৈরি। একজন ও, জে সিম্পসন এবং অন্যজন বিল ক্লিনটন। ২৪ ঘণ্টার নিউজ সাইকেলের আবির্ভাব, চরিত্র চালিত নাটকের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রিকতা এবং অসঙ্গত যৌন আচরণ মূলধারায় পরিণত হওয়াÑ এসবকিছুই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথকে সুগম করে তোলে। এই বিশ্লেষণে সিম্পসনের ব্রঙ্কো চেজের ঘটনাটি আসে। জাতীয় ফুটবল লীগের খেলোয়াড়, ব্রডকাস্টার ও অভিনেতা ও, জে সিম্পসন ১৯৯৪ সালের ২ জুন তার সাবেক স্ত্রী ও স্ত্রীর বন্ধুকে হত্যা করেন। তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হলে তিনি সাদা রঙের ব্রঙ্কো গাড়িতে করে পালাতে থাকেন। পুলিশও কয়েকটি গাড়ি নিয়ে লসএ্যাঞ্জেলেসের ফ্রিওয়ে দিয়ে তাকে তাড়া করে চলে। অরেঞ্জ কাউন্ট্রি থেকে তাড়া করা শুরু হয় এবং শেষ হয় সিম্পসনের ব্রেন্টউড এস্টেটের ড্রাইভওয়েতে। গোটা ঘটনাটি সারাবিশ্বে সরাসরি টিভিতে সম্প্রচারিত হয়। লসএ্যাঞ্জেলেসের অপরাধের ইতিহাসে এ ঘটনাটি অন্যতম পরাবাস্তব মুহূর্ত হিসেবে স্বীকৃত। সিম্পসনের বিচার এবং সেই বিচারের দৈনিক, বলা যায়, প্রতিঘণ্টায় যেভাবে বাঁক নেয়া ও মোড় পরিবর্তনের ব্যাপারটি ২০১৬ সালের ট্রাম্পশোর পূর্বকল্পনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে বিল ক্লিনটন হোয়াইট হাউসের এক ইন্টার্নের সঙ্গে যেভাবে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন সেটা ঐ দশকের আমেরিকাকে এক নতুন সিরিয়াল যুগিয়েছিল। ট্রাম্পের উত্থান ও রাজত্ব এখন এক নতুন সিরিয়াল যুগিয়েছে যার মধ্যে উন্মাদনা, রসালো ও নেশাক্ততার উপাদান আছে। তবে অতি বাস্তব ব্যতিক্রম অল আমেরিকান জনগণের ভাগ্যের উপর ট্রাম্পের সত্যিকারের প্রভাব আছে। অন্যদিকে সিম্পসনের অন্যান্য মানুষের জীবনের উপর তেমন কোন প্রভাবই ছিল না। আর ক্লিনটনের এনটারটেইনার হিসেবে সহজাত প্রবণতা থাকলেও তিনি ছিলেন কুশলী রাজনীতিক। নিজের ব্যক্তিগত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও তিনি বহুলাংশে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ যুগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফ্রেন্ড ২০১৬ সাল প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প ছিলেন একজন প্রবল যৌন আসক্ত, অসার দাম্ভিক ও সামাজিক মিডিয়া আসক্ত ব্যক্তি ঠিক যেমন ছিল তার ভোটাররা। ট্রাম্প আদর্শ পাবলিক সারভেন্টের মতো ছিলেন না। তিনি ছিলেন, স্বার্থপর এবং নিজের স্বার্থরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ ঠিক যেমন ছিল ভোটাররা। ওরা কোন কিছু দিতে বা ক্ষমা করতে হাড়ক্লান্ত ছিল। ট্রাম্পশোর জন্য এত বিপুলসংখ্যক দর্শক না থাকলে ট্রাম্পশো হতো না। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×