ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার শুরু বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্ট

ব্লুমফন্টেইনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ অক্টোবর ২০১৭

ব্লুমফন্টেইনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ পোচেফস্ট্রুম টেস্টেই গতি আর বাউন্সি উইকেট চেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। কিন্তু পাননি। তাতেও হেরেছে বাংলাদেশ। যদিও এবার ইনিংস হার এড়ানো গেছে। কিন্তু প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের হারটি বর্তমান সময়ে সাফল্যে ভরা বাংলাদেশের জন্য লজ্জ্বারই! ফ্ল্যাট উইকেটে এমন করুণ অবস্থা। তাহলে ব্লুমফন্টেইনে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্টে যে প্লেসিস গতি আর বাউন্সি উইকেট চাচ্ছেন তা মিললে কেমনটি হবে? বোঝাই যাচ্ছে সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। আগে থেকেই জানা ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট বরাবরের মতোই গতি আর বাউন্সি হবে। সেখানে স্পিনারদের জন্য খুব বেশি কিছু থাকবে না। এরমধ্যে ব্যাটসম্যানরা যদি হাল ধরে, ধৈর্য ধরে উইকেটে টিকে থাকতে পারেন রান পাবেন। তবে এজন্য অনেক কষ্ট করতে হবে। কিন্তু প্রথম টেস্ট শুরুর আগেই যেন খোলাসা হয়ে যায় সব। উইকেট গতি কিংবা বাউন্সনির্ভর নয়। উইকেট ফ্ল্যাট। পুরোপুরি ব্যাটিংনির্ভর। আর এই ব্যাটিংনির্ভর উইকেটে টস জেতা মানেই হচ্ছে আগে ব্যাটিং নেয়া। কিন্তু অবাক করা বিষয় তো ঘটল ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম টস জিতেও নিলেন ফিল্ডিং। আর তাতে করে প্রথম ইনিংসে ভাল করা গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে লজ্জা মিলল। ৯০ রানেই শেষ হয়ে গেল দ্বিতীয় ইনিংস। তাতে করে বড় হার তো হলোই, দক্ষিণ আফ্রিকাতে যে বাংলাদেশের কি করুণ দশা হবে তাও যেন সবাই বুঝতে শুরু করে দিয়েছে। পোচেফস্ট্রুমে যেন উপমহাদেশীয় উইকেটই মিলেছে। স্পিনারদের দাপটও দেখা গেছে। কিন্তু ব্লুমফন্টেইনে কী সেই ভুল হবে? প্লেসিস এরই মধ্যে উইকেট নিয়ে, নিজের চাহিদাতো উইকেট না পাওয়ায় সমালোচনা করে বসেছেন। ব্লুমফন্টেইনে তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, যেভাবেই হোক কিউরেটর গতি আর বাউন্সি উইকেটই বানাবেন। আর তা বানালে তো বাংলাদেশ বড় ধরনের বিপত্তিতেই পড়বে। গতি আর বাউন্সি উইকেটে যে ভাল করার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। গতি আর বাউন্স উইকেট এমনিতেও ব্লুমফন্টেইনে থাকে। এই মাঠে পেসারদের দাপটই দেখা গেছে বারবার। তাই ধরেই নেয়া হচ্ছে গতি আর বাউন্সি উইকেটই মিলবে। এমন উইকেটে বাংলাদেশের কী করতে হবে? স্বাভাবিকভাবেই সবার জানা, ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ধরে উইকেট আঁকড়ে খেলতে হবে। কোন পাগলামি করা যাবে না। করলেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকানরা নিজেদের মাটিতে খেলছে। গতি আর বাউন্সি বল খেলে তারা সবসময়ই অভ্যস্ত। তাদের জন্য স্পিন সমস্যার। কিন্তু পেস কোন সমস্যা নয়। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানরা যে এমন উইকেটে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তা সবারই জানা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা বুঝে না খেললেই বিপদে পড়বে। পোচেফস্ট্রুমেই পেসারদের দাপট দেখা গেছে। সেখানে উইকেট গতি আর বাউন্সি হলে তো কথাই নেই। দক্ষিণ আফ্রিকারই সুবিধা। আর তাইতো পোচেফস্ট্রুমে ব্যাটিং উইকেটে জিতেও প্লেসিস চাচ্ছেন গতি আর বাউন্সি উইকেট। প্লেসিস নিজেই বলেছেন, ‘আশা করছি ব্লুমফন্টেইন পিচে কিছুটা ঘাস থাকবে। থাকবে কিছুটা বাউন্সও।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘কন্ডিশন যেটা ছিল সেটাতে সত্যিই আমি হতাশ হয়েছি। বাউন্স ও গতি চাইলেও সেটা পাইনি। তারপরও এই পিচে বোলারদের পারফর্মেন্স প্রশংসাযোগ্য।’ প্রোটিয়া বোলাররা প্রশংসা তো পাবেনই। বোঝাই যাচ্ছিল, উইকেটে চাইলেই ব্যাটিং করা সম্ভব। তারপরও প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ৪৯৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশও প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাটিং করে। ৩২০ রান করে অলআউট হয়। আরও ভাল হতে পারত। কিন্তু মরকেল, রাবাদা, ওলিভিয়ার ও পেহলুকওয়ায়ো যেভাবে গতির ঝড় তুলেছেন, তাতে আর এগিয়ে যাওয়া যায়নি। একদিকে পেসাররা চাপ তৈরি করেছেন। আরেকদিকে স্পিনার কেশভ মহারাজ উইকেট তুলে নিয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশ পেসার কিংবা স্পিনাররা কিছুই করতে পারেননি, সেখানে এমন ফ্ল্যাট উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার ও স্পিনাররা দেখিয়ে দিয়েছেন ঝলক। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৪৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের সামনে জিততে ৪২৪ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এই টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৯ রান করে চতুর্থদিন শেষ করে বাংলাদেশ। এখানে তৃতীয়দিনের শেষদিকে আলো স্বল্পতা ও চতুর্থদিনের শেষভাগে বৃষ্টি খেলা হতে দেয়নি। পঞ্চমদিনে বাংলাদেশের সামনে টেস্ট ড্র করার সুযোগ ছিল। যদি হাতে থাকা সব উইকেট না পড়ত। কিন্তু কি খেলা দেখাল প্রোটিয়া বোলাররা। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও কি লজ্জাই না উপহার দিলেন। পঞ্চমদিনের খেলা শুরু হতেই যেন শেষ হয়ে যায়। মুহূর্তেই বাংলাদেশের ৭ উইকেট খতম হয়ে যায়। ৪১ রানেই সব শেষ। ১৭.১ ওভারের বেশি খেলতে পারল না বাংলাদেশ। দেড় ঘণ্টার মতো খেলতে পারল। কি এক ভুতুড়ে দিনের দেখা মিলল। লজ্জা মিলল। একটা সময় এমনটি হতো প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে নামা মানে ইনিংস হার এড়ানো। সেই সময় দূর হয়ে আসল হার এড়ানো। এরপর আসল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া। এরপর আসল ড্র করা। এরপর আসল জেতা। এখন বাংলাদেশ জেতে। সাফল্যে ভাসে। ঠিক এমন সময় সেই পুরনো দুর্দশার চিত্র কে দেখতে চায়। কিন্তু তাই হয়েছে। সাফল্যে ভাসমান বাংলাদেশ যেন মুহূর্তেই ব্যর্থতায় ভাসতে শুরু করল। ৯০ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া তো সেই চিত্রই বহন করে। মাঝখানে প্রথম টেস্ট শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইনিংস হার এড়ানোই শুধু প্রাপ্তির খাতায় লেখা থাকল। কিন্তু সেই প্রাপ্তি কি কোন কাজে আসছে। ৩৩৩ রানের বড় হার যে সহ্য করতে হয়েছে। হার হতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশ দল এখন যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে এমন হার কেউই মেনে নিতে পারছে না। তা ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক। তাইতো এমন লজ্জাজনক হারের জন্য জাতির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। এখন ব্লুমফন্টেইনে ভাল করার আশা। সেই আশা কী পূরণ হবে? যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে ব্লুমফন্টেইন টেস্টে তো আরও কঠিন পরীক্ষার সামনেই পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
×