ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার

একটা বাজে দিন গেছে’

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ অক্টোবর ২০১৭

একটা বাজে দিন গেছে’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। তাতে করে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হার হয়েছে। ১০ বছর পর বাংলাদেশ আবার এমনদিন দেখল। সেই দিনটিকে ‘একটা বাজে দিন গেছে’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশ ক্রিকেট এমন দুর্দশার দিন এর আগেও দেখেছে। তবে সেটি ১০ বছর আগে। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬২ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। সেটি বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে লজ্জাজনক দিন। সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার দিন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে এক শ’ রানের নিচে অলআউট হওয়ার দিক থেকে ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই কলম্বো টেস্টে যে ৮৬ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ, সেটিই দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন স্কোর। ১০০ রানের নিচে এ পর্যন্ত ৯ বার অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে সর্বশেষ হয়েছে। সোমবার হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ১০ বছর পর এমন দিন দেখাতেই বাজে দিনের আখ্যা দিচ্ছেন মাশরাফি। মঙ্গলবার একটি বহুজাতিক মোবাইল প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় যে একটা বাজে দিন গেছে। আপনি গেলে বুঝবেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওই কন্ডিশনে আমাদের জন্য কতটা কঠিন হয়। উইকেট যেটা, আমরা যা আশা করেছিলাম তার থেকে ভাল ছিল। এটা সত্যি কথা। তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন ওরা বোলিং করে, ওদের যে ক্ষমতা, সেই অনুযায়ী আমাদের ব্যাটসম্যানদের কাজ এতোটা সহজ না। তারপরও আমাদের একটা পর্যায়ে প্রথম ইনিংসে বিশেষ করে আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান সেট হয়ে গিয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই একটা দুইটা ইনিংস যদি বড় হতো তাহলে আমাদের জন্য খুব ভাল হতো। আর দ্বিতীয় ইনিংসে কাল (সোমবার) যেটা হয়েছে ক্রিকেটে মাঝে মাঝে এমন দিন আসে। হুট করে এমন হয়ে যায়। এটা অবশ্যই হতাশাজনক। আমাদের দিক থেকে আরও বেশি হতাশাজনক এই দিক থেকে যারা খেলছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা ভুলে গিয়ে সামনের ম্যাচে কিভাবে আরও ভালভাবে খেলা যায় এবং আমরা যারা বাইরে আছি আমাদের তাদের অনুপ্রাণিত করাই উচিত।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এরআগে চারবার টেস্ট খেলে চারবারই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এইবার সেই হার এড়িয়েছে মুশফিকবাহিনী। এ বিষয়টিকেই সামনে তুলে ধরলেন মাশরাফি, ‘এর আগে চারবার প্রত্যেকবারই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছি। এবার একটু হলেও উন্নতি আছে। নাই যে তা না। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের চেয়ে অনেক ভাল ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে গিয়েও সংগ্রাম করে না তা না। ওদের প্রত্যেকেই প্রতিটা সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, এই টেস্ট ম্যাচ ড্র হবে। তার মানে ড্রেসিংরুমেও এই ধরনের আলোচনা করেছে। যতটুকু আমি বুঝি কারণ আমি এখনও খেলছি। এই মানসিকতা নিয়ে খেললে দিনে দিনে আমাদের খেলাটার উন্নতি হবে।’ টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং করাটা বাংলাদেশের সবসময়ই দুঃশ্চিন্তার। বিশেষ করে দেশের বাইরে খেলতে গেলে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট যদি তুলে নেয়া না যায় তাহলে ম্যাচে ভাল ফল করা কঠিন। মাশরাফি তাই যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটের বোলিং সবসময়ই আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় বল করতে হবে পাশাপাশি ব্রেক থ্রু দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় বলেন কিংবা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বলেন সেখানে স্পিনাররাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাই টেস্ট ক্রিকেটের বোলিং আসলে রাতারাতি বদলে দেয়া সম্ভব না। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা বাইরে থাকবে তাদের মন দিয়ে খেলতে হবে এবং সেটা অনেক লম্বা সময় ধরে। এমন না যে দুই তিন চারটা ম্যাচ ভাল খেলেই আমি টেস্ট ক্রিকেটে ভাল খেলব। ওইখানে ভাল করছি বলে টেস্টেও ভাল করব। এতো সহজ না টেস্ট ক্রিকেট। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং তেমনি ব্যাটসম্যানরাও আপনাকে চ্যালেঞ্জ দিবে। তাই এমন না যে রাতারাতি বদলে দেয়া সম্ভব। তারপরও এরা একবারেই অনভিজ্ঞ, এরা যদি আরও বেশি খেলার সুযোগ পায় অভিজ্ঞ হলে আমার বিশ্বাস এরা ভাল করবে।’ পঞ্চমদিনে বাংলাদেশ একেবারেই নেতিয়ে গেছে। কিন্তু চারদিন হাত থেকে ম্যাচ একেবারে ছিটকে যায়নি। সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে বললেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আমরা সরাসরি এ্যাকশনের দিকে তাকাই। চারটাদিন যে ছেলেরা লড়াই করেছে, সেটা কিন্তু আমরা কেউ বলছি না। হ্যাঁ এটা ঠিক কিছু না কিছু ভুল না করলে এ ইনিংস এমনভাবে ভেঙ্গে পড়তো না। কিন্তু আমরা যদি ঘরে বসে এটুকু এনালাইসিস না করতে পারি দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন কি। অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশে এসে তিনদিনে হেরে যাচ্ছে। এটাও যদি এনালাইসিস করি। শুধু যদি জয় আর হারটাই দেখি। ঘরে বসে যদি এনালাইসিসই না করতে পারি যে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন কি, তাদের কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, এটা যদি বুঝতে না পারি; তাহলে আমার মনে হয় ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করা ঠিক না। আমরা যদি ওইভাবে চিন্তা করি ওদের জন্য কঠিন কন্ডিশন, আসলেই কঠিন হ্যাঁ এটা ঠিক চার নম্বর ইনিংসে যেটা হয়েছে আমি আপনি কেউই আশা করিনি এটা। এমন তো হওয়ার কথা না। কিন্তু হয়ে গেছে দুঃখজনকভাবে ক্রিকেটে এমন দিন হয়। এমন ইনিংস কিন্তু ১০ বছর পর হলো। ২০০৭ সালে মনে হয় ১০০’র নিচে আউট হয়েছে। ১০০ তো না আমাদের আশা ছিল ৭ উইকেট নিয়ে শেষ দিনতা পার করব। যারা খেলেছে তাদের যদি আপনি প্রশ্ন করেন তারা আমাদের থেকে আপনাদের থেকে আরও বেশি হতাশ।’ যা হয়ে গেছে, তা হয়েছে। এখন সামনের দিকে তাকানোর কথাই বললেন মাশরাফি, ‘হয়ে গেছে আর এখানেই তো শেষ না আসলে, সামনে ম্যাচ আছে। এই দলটাই কিন্তু টেস্ট ম্যাচ জিতে আমাদের আনন্দ দিয়েছে। আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করি, এখান থেকে বসে আরও ভাল কথা কিভাবে বলা যায়, তাদের নিয়ে ইতিবাচক কিছু বলা যায় এটা ব্যক্তিগতভাবে আমি অনুভব করি। অনেকেই বলতে পারে আমি খেলোয়াড় বলে এটা বলছি আসলে তা না। তাদের দরকার ওইটাই। কারণ এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কি হয়েছে টেস্ট ম্যাচে সেটা আমি আপনি সবাই জানি। সেখান থেকে তারা এখন ভাল খেলছে। দুঃখজনকভাবে একটা দুইটা ঘটনা ঘটেছে যেটা অন্যদল বাংলাদেশে আসে, বিশেষ করে উপমহাদেশের বাইরের দল যখন আসে তখন তাদেরও কিন্তু এমনটা ঘটছে। আপনাকে ওই জিনিসটাও এনালাইসিস করতে হবে।’
×