ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণশুনানিতে অভিযোগ, দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন

‘ওজোপাডিকো’ সিবিএ নেতাদের হাতের পুতুল!

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ অক্টোবর ২০১৭

‘ওজোপাডিকো’ সিবিএ নেতাদের হাতের পুতুল!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিবিএ নেতাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে দেশের ২১ জেলায় বিদ্যুত বিতরণকারী কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। গ্রাহক পর্যায়ে কোম্পানিটির বিদ্যুতের দর বৃদ্ধির শুনানিতে এমন অভিযোগ উঠেছে। সিবিএ’র জন্যই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন হচ্ছে না। মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) শুনানিতে সিবিএ’র নেতাদের সম্পর্কে অভিযোগ করে বলা হয় কোম্পানিটি অনেকটাই জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই নেতাদের হাতে। নতুন সম্পদ যোগ হলেও তার কার্যকর ব্যবহার হচ্ছে না। এতে গ্রাহক কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। যেখানে সেবা পাওয়াই দুরূহ সেখানে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। শুনানিতে অংশ নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, দেশের ২১টি জেলায় বিদ্যুত বিতরণকারী কোম্পানি ওজোপডিকোর সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন গ্রাহকরা। সিবিএ নেতারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা চর্চা করে কোম্পানিটিতে স্থবিরতা তৈরি করে রেখেছে। নতুন সম্পদ যোগ হলেও তার কার্যকর ব্যবহার না করে অবচয় খাতে ব্যয় বৃদ্ধির চাপ জনগণের উপর চাপানো হচ্ছে। জাঁকজমক করতে গিয়ে ব্যয় বৃদ্ধি কেন? অতিরিক্ত খরচ ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি দূর করলে ওজোপাডিকো লোকসানী নয় বরং লাভজনক কোম্পানি। তাই দাম বাড়ানোর প্রশ্নই আসে না। শুনানিতে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারী কোম্পানিটি ১৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা লাভ করলেও গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭১ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। এখন এই লোকসান মেটাতে বিদ্যুতের দাম ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে ওজোপাডিকো। শুনানিতে অংশ নিয়ে ওজোপাডিকো জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত সরবরাহে খরচ হয় ৬ টাকা ৯৪ পয়সা। বিপরীতে বিক্রয় মূল্য বাবদ মোট আয় ৬ টাকা ৫৬ পয়সা। এর মধ্যে ৬ টাকা ৪০ পয়সা হলো অর্জিত রাজস্ব আর ১৬ পয়সা অন্যান্য আয়। অর্থাৎ ঘাটতি ৩৮ পয়সা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে এ ৩৮ পয়সা বৃদ্ধির দাবি জানায় ওজোপাডিকো। তবে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির মতে, ২০১৭-১৮ সালে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত বিতরণে ওজোপাডিকোর খরচ হবে ৬ টাকা ৫৭ পয়সা। আর বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খুচরা দাম ৬ টাকা ৪৬ পয়সা। অর্থাৎ ঘাটতি থাকবে ১১ পয়সা। এই ১১ পয়সা ঘাটতি দূর করে বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ৫৭ পয়সা পুনঃনির্ধারণের সুপারিশ করে কমিটি। গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। শুনানিতে কমিশনের সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূইয়া, আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান ছাড়াও ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিক উদ্দিনসহ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মূল্যায়নে আরও বলা হয়, কোম্পানিটির অধীনে থাকা পাইকারি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য অভিন্ন বিলিং পদ্ধতি নির্ধারণ করা দরকার। আর্থিক প্রতিবেদনে অবচয় তহবিল এবং ভোক্তা নিরাপত্তা জামানতের বিনিয়োগ পৃথকভাবে প্রদর্শন করা আবশ্যক। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংস্থাটির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) রবীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, নতুন বেতন কাঠামো এবং নতুন সম্পদ যোগ হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। ব্যাংক সুদের হার কমে যাওয়ায় আয় কমেছে। নতুন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও অর্থ প্রয়োজন।
×