ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখুন ॥ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৪ অক্টোবর ২০১৭

বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখুন ॥ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় উভয় বিভাগের (আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) বিচারপতিদের তিনি এ আহ্বান জানান। বেলা সোয়া ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যথা সময়ে এজলাসে বসতেও বিচারপতিদের পরামর্শ দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। এ সময় বিচারপতিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন তিনি। সভায় প্রয়োজন অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠনের কথাও বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। এর আগে ৩৯ দিন অবকাশের পর মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের প্রথম কর্মদিবসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বেই বসে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপীল বেঞ্চের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর তা ১০টা পর্যন্ত চলে। বেঞ্চের অপর বিচারকরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এরপর ৩৯ দিনের ছুটি শেষে মঙ্গলবার থেকে উচ্চ আদালতে শুরু হয়েছে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম। প্রথা অনুযায়ী, অবকাশ শেষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীরা সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। তবে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এরপর বেলা সোয়া ২টায় সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ফুলকোর্ট সভা ডাকেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মোঃ আজিজুল হকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই সভার বিষয়টি জানানো হয়। ফুলকোর্ট সভা সংক্রান্ত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, অদ্য (আজ) ৩ অক্টোবর, ২০১৭ খ্রীঃ তারিখ রোজ মঙ্গলবার বেলা ০২:১৫ ঘটিকায় বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতিগণের অংশগ্রহণে অত্র কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হবে।’ প্রসঙ্গত, ফুলকোর্ট সভায় বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করা হয়। একইসঙ্গে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে সে নিয়েও আলোচনা হয়ে থাকে। দীর্ঘ অবকাশকালীন ছুটি শেষে মঙ্গলবার আপীল বিভাগে বসার কথা ছিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। কিন্তু সোমবার বিকেল ৩টার দিকে আকস্মিক এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি। রাতেই সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। ফলে মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে দীর্ঘ অবকাশের পর আপীল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। সুপ্রীমকোর্টের অবকাশ শুরুর আগে গত ২৪ আগস্ট শেষ অফিস করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। অবকাশের মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে গেলে তার অবর্তমানে আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সুপ্রীমকোর্টের অবকাশের শেষ দিন ছিল সোমবার, সেদিনই প্রধান বিচারপতির আরও এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার খবর দেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আগামী ৩ অক্টোবর হতে ১ নবেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেছেন এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগকালীন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক মাননীয় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন।’ সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা তার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি ওই কার্যভার পালন করবেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। কয়েক মাস আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন তিনি। এরপর তার আয়কর রিটার্নে অসঙ্গতি ও ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের খবর সামনে এলে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অবকাশ শেষে সুপ্রীমকোর্ট খুললে বিচারপতি সিনহার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। তার আগেই প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে।
×