ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৪ অক্টোবর ২০১৭

‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ বলা হয় হাইড্রোলিক হর্ন। ঢাকার রাস্তায় গত ২৭ আগস্টের পর কোন যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে গাড়িসহ তা জব্দের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সম্প্রতি এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে। বাস্তবতা হলো উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর উচ্চমাত্রার হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার রয়েই গেছে। যদিও উচ্চমাত্রার শব্দ দূষণ রোধে এই হর্ন ব্যবহার না করতে কাজ করছে বিআরটিএ ও পুলিশ। কিন্তু জনসচেতনতার অভাবে মাঠ পর্যায়ের সমস্যা রয়েই গেছে। এবার হর্নমুক্ত ঢাকা গড়ার আহ্বানে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘আমি হর্ন বাজাই না বন্ধু’। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে সংগঠনটি। ‘হর্নমুক্ত বাংলাদেশ, আরও সুস্থ বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা। মানববন্ধনে তারা সবাইকে উচ্চ মাত্রার হর্ন না বাজাতে আহ্বান জানান। এছাড়া যদি হর্নমুক্ত গাড়ি চালানো সম্ভব হয় তাহলে সবচেয়ে ভাল। এতে কারও কোন ক্ষতি হবে না। পরিবেশ ভাল থাকবে। যা আপনার-আমার-সকলের জন্যই মঙ্গল। মানববন্ধন শেষে রাজধানীর মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের সড়কে থাকা বিভিন্ন পরিবহনে সচেতনতামূলক স্টিকার লাগিয়ে দেন সংগঠনের কর্মীরা। অনলাইন ভিত্তিক এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ শাহেদ ও নাজমুল হুদাসহ আরও অনেকে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন। তারা বলেন, সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে শব্দের বাইরে থাকা জরুরী। এবং এ ব্যাপারে প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে। শব্দ দূষণে কেবল অপরের ক্ষতি হয় এমন ধারণা করার কোন কারণ নেই। নিজেরও ক্ষতি হয়। তাছাড়া আপনি দূষণ করে যাচ্ছেন, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আপনার সন্তান-প্রজন্ম। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে আদালতের আদেশে আরও বলা হয়, ২৭ আগস্টের পর যদি ঢাকার রাস্তায় কোন গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়, তাহলে ওই গাড়িও জব্দ করতে পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) ও ডিএমপি, মহানগরীর চার বিভাগের ট্রাফিকের ডেপুটি কমিশনারসহ ঢাকার ২০ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ এই রিট আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী যানবাহনে শব্দ দূষণকারী হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না। এ কারণ ব্যবহারকারী যানবাহনও জব্দের নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই আবেদনে। মনজিল মোরসেদ বলেন, রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি রুলও জারি করেছে। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না এবং হাইড্রোলিক হর্ন এবং গাড়িতে প্রচণ্ড শব্দযুক্ত হর্ন বন্ধে কেন ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হবে না-রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সাধারণ হর্নের তুলনায় হাইড্রোলিক হর্নে শব্দ হয় কয়েক গুণ বেশি। নগরীতে চলাচলকারী যানবাহনে এ ধরনের হর্ন ব্যবহারে মারাত্মক শব্দ দূষণ তৈরি হয়। ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া গত ১৬ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজধানীতে হাইড্রোলিক হর্নের অননুমোদিত ব্যবহার কমে এলেও পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ট্রাফিক পুলিশ গত এক বছরে ১০ হাজার হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করেছে। চালকদের অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অবাধে হর্ন কেনাবেচা, কম শাস্তি এবং প্রশিক্ষণের ঘাটতিকে হাইড্রোলিক হর্নের বহুল ব্যবহারের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
×