ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৪ হাজার ৫৪২ সহকারী সার্জন, ২৫০ সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ

৩৯তম বিসিএসই হবে চিকিৎসক নিয়োগের বিশেষ বিসিএস

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৪ অক্টোবর ২০১৭

৩৯তম বিসিএসই হবে চিকিৎসক নিয়োগের বিশেষ বিসিএস

বিভাষ বাড়ৈ ॥ দীর্ঘদিন আলোচনার পর অবশেষে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক চিকিৎসক পরীক্ষার্থীদের জন্য সুখবর আসছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেষ্টায় চিকিৎসক নিয়োগের জন্য ‘বিশেষ বিসিএস’ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আসন্ন ৩৯তম বিসিএস ই হবে ‘বিশেষ বিসিএস’। যেখানে নেয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চার হাজার ৫৪২ জন সহকারী সার্জন এবং ২৫০ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন। এছাড়া চলতি মাসেই প্রকাশ হচ্ছে ৩৬ ও ৩৭ বিসিএসের ফল। জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনেক মন্ত্রণালয় ও দফতরে হাজার হাজার পদ খালি থাকায় সঙ্কট তৈরির প্রেক্ষাপটে দ্রুত জনবল নিয়োগের দাবি তোলা হচ্ছে বহু বছর ধরেই। বিশেষ বিসিএস নিয়ে অন্তত হাসপাতালগুলোতে যেন দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের দাবি তোলা হচ্ছিল বহুদিন ধরে। কিন্তু কখনও সরকারের উদ্যোগের অভাব আবার কখনও পিএসসির আগ্রহের অভাবে বিশেষ বিসিএসের উদ্যোগ সফল হচ্ছিল না। তবে এবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্রুত ইতিবাচক সাড়া নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষ বিসিএস নিয়ে চিকিৎসক নিয়োগের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই এ লক্ষ্যে বিশেষ বিসিএসের জন্য প্রয়োজনীয় বিধির সংশোধনের উদ্যোগও নিয়েছে পিএসসি। প্রয়োজনীয় বিধির সংশোধন হলেই আগামী নবেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরে এই বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চায় কমিশন। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক জানিয়েছেন, ৩৯তম বিসিএসের উদ্যোগ আমাদের আছে। তবে সেজন্য প্রয়োজনীয় বিধির সংশোধন যেমন আগে করতে হচ্ছে তেমনি ওই বিসিএসের আগেই আমাদের ৩৬, ৩৭ বিসিএসের ফল প্রকাশ ছাড়াও ৩৮ বিসিএসের পরীক্ষা নেয়ার কাজ করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমরা আরও কিছু কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে দ্রুত চলমান সব কয়টি বিসিএসের কার্যক্রম সম্পন্নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এর আগে সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সভায় ‘দ্রুততম সময়ের’ মধ্যে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জন এবং বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রথমে তিন হাজার এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরও সাত হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে সারা দেশের মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসক সঙ্কট নিরসন করা হবে। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর আগে ছয় হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে তাদের উপজেলায় পদায়ন করায় গ্রামে চিকিৎসক সঙ্কটও অনেক কমে গেছে। জানা গেছে, বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ জুন প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছিলেন। তৃণমূলের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর গত ১৮ সেপ্টেম্বর পিএসসির সচিবকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মোঃ মফিদুর রহমান স্বাক্ষরিত একপত্রে জানান হয়, ‘স্বাস্থ্য বিভাগে বিদ্যমান চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সহকারী সার্জনের চার হাজার ৫৪২টি এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জনের ২৫০টি পদ পূরণের নিমিত্ত একটি বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এদিকে ৩৬ ও ৩৮ বিসিএসের ফল প্রকাশ হচ্ছে চলতি মাসেই। ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই প্রকাশ করা হতে পারে। পাশাপাশি চলতি মাসেই ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশের কাজ শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই আমরা ৩৬ ও ৩৭ বিসিএসের ফল প্রকাশ করতে পারব বলে আশাবাদী। প্রথম শ্রেণীর ২ হাজার ১৮০ জন গেজেটেড কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে ২০১৫ সালের ৩১ মে ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দুই লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন মাত্র ১৩ হাজার ৬৭৯ জন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে অংশ নেন ১২ হাজার ৪৬৮ জন, যার মধ্য থেকে উত্তীর্ণ হন ৫ হাজার ৯৯০ জন। অপরদিকে গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি এক হাজার ২২৬ পদের জন্য ৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ৩০ সেপ্টেম্বর হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এতে অংশ নেন দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন। এর ফল প্রকাশ করা হয় ১ নবেম্বর। এতে উত্তীর্ণ হন ৮ হাজার ৫২৩ জন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হয় লিখিত পরীক্ষা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মুহূর্তে পিএসসি কয়েকটি বিসিএস ছাড়াও নন-ক্যাডার নিয়োগের বিশষে কাজ করছে। কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সকল সদস্য ছাড়াও দিনরাত কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চেয়ারম্যান বলছিলেন, আমরা চাই দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ফল প্রকাশ করতে। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা তা সফলভাবে করতেও পারছি। এখন তিনটি বিসিএসের কাজ ছাড়াও আমরা একই সঙ্গে চার হাজারেও বেশি সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিডওয়াইভ নিয়োগের জন্য কাজ করছি। কেবল তাই নয়, যাতে প্রার্থীরা উপকৃত হয় সেকথা মাথায় রেখে ৩৬ ও ৩৭ বিসিএস থেকে যাতে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ নিতে পারি তার অংশ হিসাবে মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদের জন্য চাহিদাপত্র চেয়েছি।
×